Entertainment News

১৫ বছরে ধর্ষিতা হয়েছিলাম, পরিচিতের কাছে বেচে দিয়েছিল মা! বিস্ফোরক ডেমি মুর

শুধুমাত্র সে দিনের ঘটনাই নয়, নিজের জীবনের আরও অজানা দিক নায়িকা মেলে ধরেছেন স্মৃতিকথার পাতায়। তাঁর হতাশা, আনন্দ, বিচ্ছেদ, জীবনের পথে হারিয়ে যাওয়া— প্রায় সবই খোলামেলা ভাবে বলেছেন ডেমি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১২:৩০
Share:

নিজের শর্তেই জীবন কাটিয়েছেন ডেমি মুর। ছবি: সংগৃহীত।

নিজের ঘরে ঢুকে পনেরো বছরের মেয়েটি দেখে, তার জন্য ‘অপেক্ষা’ করছে মায়ের এক পরিচিত। কিশোরী মেয়েটিকে সে দিন ধর্ষণ করেছিল ওই ব্যক্তি। অভিযোগ, মেয়েকে নাকি তার কাছে ৫০০ ডলারে বেচে দিয়েছিল মা! সে দিনের সেই কিশোরী মেয়েটি হলিউড তারকা ডেমি মুর। অপ্রকাশিত স্মৃতিকথা ‘ইনসাইড আউট’-এ এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন ডেমি।

Advertisement

শুধুমাত্র সে দিনের ঘটনাই নয়, নিজের জীবনের আরও অজানা দিক নায়িকা মেলে ধরেছেন স্মৃতিকথার পাতায়। তাঁর হতাশা, আনন্দ, বিচ্ছেদ, জীবনের পথে হারিয়ে যাওয়া— প্রায় সবই খোলামেলা ভাবে বলেছেন ডেমি।

স্মৃতিকথা প্রকাশের আগে এবিসি-র টেলিভিশন শো ‘গুড মর্নিং আমেরিকা’য় এসে সে কথা শুনিয়েছেন দর্শকদের। শোয়ের সঞ্চালিকা ডায়ান সয়ারের কাছে ডেমি জানিয়েছেন, মা যে তাকে বিক্রি করে দিয়েছিল, সে দাবি করেছিল অভিযুক্ত ওই ধর্ষক। ডেমিকে ধর্ষণের পর সে নাকি বলেছিল, “৫০০ ডলারের বদলে নিজের মায়ের জন্য যৌনকর্মী হয়ে কেমন লাগছে?” ডেমি জানিয়েছেন, সে দিনের ঘটনায় একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন। স্মৃতিকথায় তিনি লিখেছেন, ‘সেটা যেমন ধর্ষণ ছিল, তেমন বিধ্বস্ত করে দেওয়া বিশ্বাসঘাতকতাও ছিল। আর ওই লোকটার নিষ্ঠুর প্রশ্নে তা ধরা পড়েছিল।’

Advertisement

আরও পড়ুন: দাদাসাহেব ফালকে পাচ্ছেন অমিতাভ বচ্চন

আপনার মা এমনটা করতে পারেন? ওই লোকটার কথা বিশ্বাস করে নিয়েছিলেন? ডায়ান সয়ারের প্রশ্নের উত্তরে ডেমি বলেন, “না ! ভিতর থেকে সে কথা মানতে পারিনি। তবে মনে হয় না, ওই লেনদেন খুব একটা সোজাসাপ্টা ছিল। কিন্তু এটা ঠিক যে, আমাকে ক্ষতির মুখে ঠেলে দিয়েছিল মা।”

First hard copies just arrived. Feels good to hold it in my hands, finally. Such a long time coming. 📚📦 #insideoutbook is coming Sept 24!

A post shared by Demi Moore (@demimoore) on

ছোটবেলার কথা বলতে গিয়ে ডেমি জানিয়েছেন, তাঁর মা-বাবা দু’জনেই মদ্যপ ছিলেন। সেই সঙ্গে মানসিক সমস্যাতেও ভুগছিলেন তাঁরা। ডেমির দাবি, কিশোরী অবস্থাতেই মা তাঁকে বিভিন্ন পানশালায় নিয়ে যেতেন, যাতে পুরুষের নেকনজরে পড়েন। নিজের পাশাপাশি মায়ের জীবনের অজানা দিকও তুলে ধরেছেন ডেমি। তাঁর যখন ১২ বছর বয়স, তখন প্রথম বার তাঁর মা ভার্জিনিয়া আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তবে ডেমির চেষ্টাতেই নাকি বেঁচে যান তিনি। ‘ইনসাইড আউট’-এ সে কথাও শুনিয়েছেন ডেমি। ৫৬ বছরের অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘আমার মনে পড়ে, নিজের ছোট্র আঙুলগুলো মায়ের গলায় ঢুকিয়ে দিয়ে ট্যাবলেটগুলো বার করে এনেছিলাম, যেগুলো মা গিলে ফেলার চেষ্টা করেছিল।’ এমনটা সেই প্রথম বার নয়, এর পরেও ঘটেছিল। নিজেকে বার বার শেষ করে দিতে চেয়েছেন ভার্জিনিয়া। ডেমি বলেন, “আমার ছোটবেলাটা সেখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল।”

আরও পড়ুন: ‘আমার জন্য শোয়ের টিআরপি বাড়ে না’

‘গোস্ট’ ফিল্মে প্যাট্রিক সোয়েজি-র সঙ্গে ডেমি মুর। ছবি: সংগৃহীত।

ছেলেবেলার ভয়ঙ্কর দিনগুলি যেন ছায়া ফেলেনি ডেমি মুরের অভিনয় জীবনে। নিজের কেরিয়ারে চূড়ান্ত সাফল্য পেয়েছেন। যার শুরুটা হয়েছিল গত শতকের আশির দশক থেকে। সে সময় থেকেই নাম ছড়াতে থাকে ডেমির। ‘ব্লেম ইট অন রিও’, ‘সেন্ট এলমোস ফায়ার’ বা ‘অ্যাবাউট লাস্ট নাইট... ’-এর মতো ফিল্মে নজর কাড়েন। পরের দশকে তো হলিউডের সবচেয়ে বেশি রোজগেরে অভিনেত্রীর তকমাও জোটে। ১৯৯০-তে প্যাট্রিক সোয়েজি-র বিপরীতে রোম্যান্টিক থ্রিলার ‘গোস্ট’ ডেমিকে খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দেয়। এর পরের কয়েক বছরে তাঁকে দেখা যায় ‘ফিউ গুড মেন’, ‘ইনডিসেন্ট প্রোপোজাল’, ‘ডিসক্লোজার’-এর মতো একের এক ব্লকবাস্টার ফিল্মে।
তবে লাইমলাইটের আলোর নীচেও যে এত অন্ধকার ছিল, তা কে জানত! ডেমি জানিয়েছেন, কিশোরী বয়সেই মা-বাবার মতো মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনিও। সে বয়সেই এক সময় জানতে পারেন, যাঁকে এত দিন বাবা বলে জানতেন, সেই ড্যান গাইনেস আসলে তাঁর জন্মদাতা নন। হাইস্কুলের পড়া ছেড়ে, নিজের বাড়ি ছেড়ে এর পর কাজের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন ডেমি। ফিল্মে অডিশন দিতে শুরু করেন।

ধীরে ধীরে মডেলিংয়ের পাশাপাশি ড্রামা স্কুলে অভিনয়ও শিখতে শুরু করেন। ১৭ বছরের জন্মদিনের তিন দিন আগে দেখা হয় ফ্রেডি মুরের সঙ্গে। পরে যাঁকে জীবনসঙ্গী বেছেছিলেন। তবে সে বিয়ে টেকেনি বেশি দিন। এর পর ডেমির জীবনে এসেছেন ব্রুস উইলিসের মতো তারকা। তবে ২০০০ সালে, তেরো বছরের সে সম্পর্কেও ছেদ পড়ে। পাঁচ বছর পর বিয়ে করেন ১৫ বছরের ছোট অ্যাশটন কুচারকে। কিন্তু, তা-ও ভেঙে গিয়েছে ২০১৩-তে। ডেমি জানিয়েছেন, অ্যাশটন কুচারের সঙ্গে ডেটিং করার সময় এক বার তাঁর গর্ভপাতও হয়। কুচার অন্য নারীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়াতেও ভেঙে পড়েন তিনি।

অ্যাশটন কুচারের সঙ্গে ডেটিং করার সময় এক বার গর্ভপাতও হয়। স্মৃতিকথায় জানিয়েছেন ডেমি মুর। ছবি: সংগৃহীত।

অ্যাশটন কুচারের সঙ্গে ডিভোর্সের আগের বছর, ২০১২-তে মানসিক ভাবে ফের তলানিতে এসে ঠেকেন ডেমি। মাদকাকাসক্ত হয়ে পড়েন। ওজনও বেড়ে যায়। মেয়েরা তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা বন্ধ করে দেন। সবই হয়েছে সে সময়। এক বার অতিরিক্ত মাদক সেবনের ফলে একটি পার্টিতে জ্ঞান হারান। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। শেষে রিহ্যাবে থেকে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ডেমি। ফিরেছেন জীবনের স্বাভাবিক ছন্দেও।

স্মৃতিকথায় নিজের জীবনের এই অজানা কথাগুলি প্রকাশ করলেন কেন? ডেমি লিখেছেন, ‘দু’টো কারণে এ কথাগুলো বলতে চেয়েছি। প্রথমত, এটা আমার কাহিনি। দ্বিতীয়ত, এটা আমার কাহিনি হলেও এর কিছুটা অংশ বোধহয় আপনাদেরও গল্প।’ স্মৃতিকথায় এমনটাই লিখেছেন ডেমি মুর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement