১০ বছর ছুঁয়ে ফেলল নাটক ‘নিঃসঙ্গ সম্রাট’। মনে হয়, যেন এই সে দিনের কথা। ‘পাইক পাড়া ইন্দ্ররঙ্গ’ নাট্য দলের ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী এই নাটকের প্রযোজক। সময় পেলেই আমরা নাটকের লোকেরা বসে আড্ডা দিই। সে রকমই একটা দিনে কথায় কথায় ইন্দ্রকে বলেছিলাম, ‘‘শিশির ভাদুড়িকে নিয়ে কিছু করলে ভাল হয়। নাট্য পরিচালক হিসেবে অগ্রজের প্রতি আমারও দায় রয়েছে। নাট্য দুনিয়ারও কিছু দায়িত্ব বর্তায়।’’ কথাটা ইন্দ্র লুফে নিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে বলেছিল, ‘‘দাদা আপনি তা হলে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘নিঃসঙ্গ সম্রাট’কে নাটকে রূপান্তরিত করুন।’’
কথাটা আমারও মনে ধরেছিল। দিন কয়েকের মধ্যেই যোগাযোগ করলাম সাহিত্যিকের সঙ্গে। তখন জুলাই মাস। সুনীলদা শুনে খুব খুশি। এক কথায় সবুজ সংকেত দিলেন। যখনই ভাবনা-চিন্তা শুরু করলাম তখনই চলে গেলেন ‘নিঃসঙ্গ সম্রাট’-এর জন্মদাতা। কিছু দিন অপেক্ষার পরে আমি গেলাম প্রয়াত সাহিত্যিকের স্ত্রী স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। সুনীলদার মতোই স্বাতীদিও রাজি। বললেন, ‘‘তোমায় তো দাদা অনুমতি দিয়েই গিয়েছিলেন। সুতরাং, তুমি তোমার মতো করে কাজ শুরু কর।’’
স্বাতীদি রাজি হওয়া মাত্র চিত্রনাট্য লেখার কাজ শুরু করলাম। এবং ঠিক করলাম, উপন্যাস অনুযায়ী দুই বয়সের শিশির ভাদুড়িকে দেখাব। আমার দু’জন ‘নাট্যাচার্য’ হবেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, দেবশঙ্কর হালদার। সৌমিত্রদাকে বলতেই কী খুশি! বললেন, তিনি বেশি বয়সের চরিত্রটি করবেন। ছোট বয়সের শিশিরবাবু হবেন দেবশঙ্কর। চিত্রনাট্য লেখা প্রায় শেষ। এ দিকে সৌমিত্রদা প্রায় শয্যাশায়ী। দুঃখ আর শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বললেন, ‘‘দেবেশ এ বার কী হবে?’’ ওঁকে অভয় দিয়ে ফের চিত্রনাট্য বদলালাম। দেবশঙ্করকে বললাম, ‘‘তুমিই আমার এক এবং অদ্বিতীয় শিশিরবাবু। অন্য বয়স আর দেখাব না।’’ নাটকে গানেরও বড় ভূমিকা ছিল। তাই দায়িত্ব দিয়েছিলাম ‘চন্দ্রবিন্দু’র দ্রোণাচার্যকে। দ্রোণের পরিচালনায় গেয়েছিলেন শ্রাবণী সেন, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, সপ্তক। দেবশঙ্কর ছাড়াও নাটকে অভিনয় করেছিলেন সেঁজুতি মুখোপাধ্যায়, অনিন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ পুরনো দিনের অনেক নামী মঞ্চাভিনেতা এবং নতুন শিল্পী।
এই প্রসঙ্গে বলি, অম্বরীশের অভিনয় জীবনের শুরু নাটকের গান দিয়েই। কেতকী দত্তের কাছে অনেক বছর ও নাটকের গান শিখেছে। আমার হাতে গড়া। ‘রাজা অ্যান্ড গজা’র সময় ইন্দ্রনীল সেন নাটকের এক ভারী চেহারার ছেলেকে চেয়েছিলেন। আমি পাঠিয়েছিলাম অম্বরীশকে। ও যদিও খুবই ভয় পেয়েছিল। বলেছিল, ‘‘দেবেশদা আমি ক্যামেরার কিছুই জানি না।’’ পরে অম্বরীশকে বলেছিলাম, হাতের কাজ সামলে ‘নিঃসঙ্গ সম্রাট’-এর বেশ কিছু গান কিন্তু গাইতে হবে। এক কথায় রাজি হয়েছিল। গেয়েও গিয়েছিল। এবং আরও একটি ভাল কাজ আমরা করতে পেরেছি। নাটকটি অডিয়ো রেকর্ডিং করেছি। যাতে আগামী প্রজন্ম নাটকটি শুনতে পারেন।