হিন্দি, ইংরেজি, মরাঠি, পঞ্জাবি, তেলুগু, গুজরাতি, বাংলা, সব ভাষাতেই গান গেয়েছেন দেবাঞ্জলি
প্রশ্ন: ৮-৯ বছর ধরে মুম্বইয়ে আছেন, শান থেকে শুরু করে আরমান মালিক, নামী গায়কের সঙ্গে গান গেয়েছেন, কিন্তু এখনও জনপ্রিয়তার শিখরে পা দিলেন না কেন?
দেবাঞ্জলি: মনে হয়, এখনও আমার সময় আসেনি। আসবে বলে আশা রাখি আমি। কিন্তু হ্যাঁ সত্যিই আমার ভাগ্য ততটাও ভাল নয়, নয়তো এত বছর ধরে মুম্বইয়ে কাজ করছি, কিন্তু সাফল্যে পৌঁছলাম না। আসলে আমার পাশে তো কোনও বড় নাম নেই। তাই রাস্তাটাও কঠিন।
প্রশ্ন: ‘বধাই দো’, ‘কল মাই এজেন্ট’, বিভিন্ন জনপ্রিয় ছবি-সিরিজে আপনার গান আছে, সেগুলি তো বড় কাজ, সন্তুষ্ট নন?
দেবাঞ্জলি: অবশ্যই এই কাজগুলি আমার জীবনের মোড় ঘোরানো। কিন্তু এক জন শিল্পীকে কখনও সন্তুষ্ট হতে নেই। এখনও কত কত স্বপ্ন আছে আমার। আর একটা বিষয়, আমি কোনও কাজে ‘না’ বলিনি। সব করেছি। বিজ্ঞাপনের বহু গান আপনারা শোনেন, হয়তো জানেনই না যে সেটা আমার গান। জামাকাপড় কাচার গুঁড়ো সাবান, ঠান্ডা পানীয়, গায়ে মাখার সাবান, গয়নাগাটি— শুরুর দিকে জনপ্রিয় গানগুলি গেয়েছিলাম আমি। তা ছাড়া প্রচুর হিন্দি ধারাবাহিকে আমার গাওয়া গান বাজে। মানুষ কানে চেনেন, কিন্তু মুখে চেনেন না।
প্রশ্ন: কলকাতা থেকে মুম্বইয়ে তো চাকরি করতে আসা। তার পর গানের জগতে কী ভাবে পা রাখলেন?
দেবাঞ্জলি: গান শিখি ছোট থেকেই। ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করে চাকরি করছিলাম কলকাতাতেই। এ দিকে মন উঠে গিয়েছিল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে। কিন্তু হঠাৎই অফিস আমাকে বেঙ্গালুরু বা মুম্বইয়ে বদলি করতে চায়। তখনই আমি মুম্বইকে বেছে নিই। কারণ মনের মধ্যে গান গাওয়ার ইচ্ছেটা থেকেই গিয়েছিল। তার পরে মুম্বইয়ে গিয়ে তিন বছর চাকরি করে কাজ ছেড়ে দিই। মা-বাবাকে জানাই আরও ছ’মাস বাদে। প্রচণ্ড অবাক হয়ে যান তাঁরা। মেয়ের এই সিদ্ধান্তে প্রথম দিকে খুশি ছিলেন না। কিন্তু কয়েক মাস পরে নিজেরাই বুঝতে পারেন, মেয়ে কেন এই পথ বেছে নিয়েছে।
৮-৯ বছর ধরে মুম্বইয়ে আছেন, শান থেকে শুরু করে আরমান মালিক, নামী গায়কের সঙ্গে গান গেয়েছেন দেবাঞ্জলি
প্রশ্ন: তার পরেই প্রথম গান শানের সঙ্গে?
দেবাঞ্জলি: হ্যাঁ চাকরি ছাড়ার পরের মাসেই শান স্যরের সঙ্গে গান মুক্তি পেল বলে বাড়িতেও শান্তি পেয়েছিল সবাই। তখনই সেই উপলব্ধি হয় বাবা-মায়ের। স্বস্তি পেয়েছিল। কিন্তু তার পরের রাস্তাটা বড্ড কঠিন। আবার মজারও।
প্রশ্ন: আপনি তো হিন্দি, ইংরেজি, মরাঠি, পঞ্জাবি, তেলুগু, গুজরাতি, বাংলা, সব ভাষাতেই গান গেয়েছেন। নিজের মাতৃভাষা বাংলায় গান গাইবেন না আর?
দেবাঞ্জলি: গেয়েছি দু’টো গান। একটা মিমোর সুরে ‘আলিনগরের গোলকধাঁধাঁ’-র ‘শহরের উপাধি’ গানটি গেয়েছিলাম। বেশ অন্য রকম। এটাই প্রথম কাজ। তার পরে ‘জিও জামাই’-এর ‘ছোঁয়া ছুঁই’। তার পরে এসভিএফ-এর হয়ে দুর্গা পুজোর একটি গান গেয়েছিলাম। ২০২০ সালে। ‘দুগ্গা এল’।
প্রশ্ন: তা হলে তো এসভিএফ-এর জন্য আরও একাধিক বার আপনাকে কলকাতায় দেখতে পারি আমরা?
দেবাঞ্জলি: হ্যাঁ নিশ্চয়ই। আমায় ডাকলে তো গান গাইবই। কিন্তু গত বারের অভিজ্ঞতা খুব ভাল নয়। গান গেয়ে খুবই মজা পেয়েছিলাম। কিন্তু শেষেই সমস্যা হয়ে গেল।
প্রশ্ন: কী রকম?
দেবাঞ্জলি: আমি এবং আরও এক জন গায়িকা, দু’জনে মিলেই গোটা গানটি গেয়েছিলাম। প্রথম কয়েক দিন ইউটিউবের লিঙ্কটায় আমার নাম ছিল। কিন্তু তার পর আমার নামটা দু'দিন পর উধাও। নীচে বিস্তারিত লেখার জায়গায় ছিল। কিন্তু উপরে শিরোনামে আর এক জন গায়িকার নামই নেই। যেখানে কিনা ওটা একটা গানের ভিডিয়ো। আমি তাঁদের সঙ্গে ইমেলে যোগাযোগ করি। কথা বলি। তাঁদের যুক্তি ছিল, গানের ভিডিয়োর শিরোনামে অন্য কয়েকটি তথ্য দেওয়ার দরকার ছিল বলে আমার নাম সরিয়েছে। জায়গা হচ্ছিল না। আমি খুবই আহত হই এই ঘটনায়। দরকারে অন্য নামগুলির পদবির প্রথম অক্ষর দিয়েও আমার নামটা রাখা যেত। তাই যদি কখনও আবার কাজ করি, আগে নিশ্চিত হয়ে নেব যে আমাকেও প্রাপ্য সম্মানটা দেওয়া হচ্ছে কিনা।