অলস দিনে রাজ-শুভশ্রী
একজন কাজপাগল, আর একজনের পছন্দ বাড়ির নিভৃত কোণ। একজন বাইরে বেরোতে পারছেন না বলে ছটফট করছেন, অন্যজনের ভারী মজা সকলে মিলে থাকা হচ্ছে বলে। রাজ-শুভশ্রীর দাম্পত্য এমন টক-মিষ্টি স্বাদেই ভর করে চলছে। লকডাউনে সময় কেমন কাটছে জানতে ফোন করতেই, রাজ চক্রবর্তীর পাল্টা প্রশ্ন, “কয়েকটা ভাল সিরিজ়ের নাম বলুন তো, দেখব! প্রায় সবই দেখে ফেলেছি, তাই নতুন কিছু খুঁজছি।”
ঘরবন্দি দশায় ওটিটি প্ল্যাটফর্মই ভরসা তাঁদের। শুভশ্রী অবশ্য জানালেন, বাড়ির কাজেও অনেকটা সময় কেটে যাচ্ছে। বাকি সময়টা সকলে মিলে আড্ডা দিয়ে, গেম খেলে... সিনেমা-সিরিজ় দেখা আর বই পড়া তো আছেই। বলতে গেলে দু’জনে মুভি ম্যারাথন চালাচ্ছেন। বইমেলা থেকে অনেক বই কিনেছিলেন। সেগুলি এত দিনে শেষ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
পরিবারের ছ’জন সদস্য মিলেজুলে কাজ করে নিলে সময় বেশি লাগে না। শুভশ্রীকে তাঁর শাশুড়ি মা একেবারেই রান্না করতে দিতে চান না। “আমার তো রান্নাঘরে ঢোকাই বারণ। এই পরিস্থিতিতে জোর করে ঢুকেছি। সবাই মিলে কাজ না করলে চলবে কী করে? একটা-দুটো করে পদ রাঁধছি,” বলছিলেন শুভশ্রী। সকলে বাড়িতে থাকলে জমিয়ে রান্না করার একটা প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু রাজ-শুভশ্রী দু’জনেই বাহুল্যকে প্রশ্রয় দিতে রাজি নন। বিশেষত যেখানে রসদ সীমিত এবং পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, কেউ জানে না।
লকডাউনে বাকি ইন্ডাস্ট্রির মতো বিনোদন দুনিয়াও বড় ক্ষতির মুখে। এপ্রিল মাসে রাজের ‘ধর্মযুদ্ধ’ মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ছবি রিলিজ়ের টাইমটেবল ঘেঁটে গিয়েছে টলিউডে। কবে রিলিজ় করা সম্ভব হবে জানেন না পরিচালক। ‘ধর্মযুদ্ধ’ যে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতিতে প্রাসঙ্গিক ছিল, সেটা এখন বদলে গিয়েছে। রাজের আরও একটি ছবি ‘হাবজি গাবজি’ পোস্ট প্রোডাকশনে রয়েছে। “সবচেয়ে সমস্যা হল, সাধারণ মানুষ আর্থিক ভাবে ভয়ঙ্কর কোণঠাসা হয়ে যাবেন। তখন তাঁরা খাবারের চিন্তা করবেন না সিনেমা দেখবেন? সুতরাং করোনার এই পর্যায় শেষ হলেও ছবি রিলিজ় এবং তার বক্স অফিস দুটোই সঙ্কটে,” রাজের গলায় উৎকণ্ঠা স্পষ্ট। পরিচালকের আরও চিন্তা, তাঁর নিজস্ব প্রোডাকশন হাউসটি এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে চালাবেন।
তবে দুশ্চিন্তা কাটিয়ে পজ়িটিভই থাকতে চান রাজ-শুভশ্রী। টেকনিশিয়ানদের জন্য ফান্ডে এক লক্ষ টাকা দিয়েছেন তাঁরা। রাজের আদি বাড়ি হালিশহরের ৩০০ জনের জন্য রেশনের বন্দোবস্ত করেছেন। এ ছাড়া মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলেও দান করেছেন। এ সবের ফাঁকে নতুন আইডিয়া, কনসেপ্ট নিয়েও চর্চা করছেন রাজ। সেখানে সঙ্গত করছেন শুভশ্রী। “এতটা অবসর তো সচরাচর পাই না। তাই ভাবনাগুলো গুছিয়ে নিচ্ছি। কোনও কনসেপ্ট মাথায় এলে আমি বলছি, শুভ ল্যাপটপে সেটা গুছিয়ে লিখে নিচ্ছে,” বলছিলেন রাজ।
বোঝা যাচ্ছে, পরিচালক-নায়িকার দাম্পত্য আলাপও দিব্যি চলছে। তার মধ্যেই রাজের ফিচেল মন্তব্য, “যে সব ছেলেমেয়েরা প্রেম করত বা যাদের এক্সট্রা-ম্যারিটাল রয়েছে, তাদের কথাও ভাবছি।” করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কি ছবি তৈরির কথা ভাবছেন? “না, তবে কেউ কেউ তো নিশ্চয়ই করবে। হলিউডে হবেই,” চটপট জবাব পরিচালক রাজের।
কাজে সাহায্য করার পাশাপাশি স্বামীর অস্থিরতাও সামলাচ্ছেন গিন্নি। আর আছে তাঁর পিছনে লাগা! শুভশ্রী হাসিমুখে সে অত্যাচারও মেনে নিচ্ছেন। নিজের দাড়ি নিয়ে বেশ শৌখিন ছিলেন রাজ। কী করব, কী করব ভেবে দাড়িটিও কেটে ফেলেছেন। রাজ ফাঁস করলেন, “মাথার পাশের দিকের চুলও অনেকটা কেটে ফেলেছি।” রাজ-শুভশ্রী দু’জনেই ফিটনেস সচেতন। কিন্তু জিমে যাচ্ছেন না এখন। বাড়িতেই যেটুকু হয়। যদিও তাঁদের কমপ্লেক্সের মধ্যেই জিম। আবার দৌড়নোর জায়গাও প্রচুর। কিন্তু তার জন্য যে লিফট ব্যবহার করতে হয়। তাই ফ্ল্যাটের দরজাই লক্ষ্মণরেখা।
যে রেখা পার করার জন্য তাঁদের মতো অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন আমজনতাও।
অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।