দেব
কখনও শুটিং, কখনও ছবি নিয়ে মিটিং, তো কখনও ঘাটালে ছুটে যাওয়া... এ রকম অসংখ্য কাজে তাঁর দিনের রুটিন বাঁধা। তারকা, প্রযোজক, সাংসদ দেবের জীবনে কাজের বাইরে বিশেষ কিছুর ফুরসত নেই। টাইট শিডিউল তাঁকে সে বিলাসিতার অবকাশও কি দেয়? কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্কটে অবসরটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে বাধ্যতামূলক। তাই অধিকাংশ সেলেব্রিটিই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক বেশি অ্যাক্টিভ। দেব অবশ্য সেখানেও নেই। এমনিতেও তাঁকে টলিউডে কারও বিয়ে বা পার্টিতে প্রায় দেখাই যায় না। সোশ্যাল গ্যাদারিংয়ে তিনি নেই। কিন্তু এখন তো সোশ্যাল মিডিয়ার অন্য রকম একটা ভূমিকাও রয়েছে। এর মাধ্যমে দর্শকের কাছেও পৌঁছচ্ছেন তারকারা, ছবির মাধ্যমে যেহেতু তা সম্ভব হচ্ছে না। ‘‘ছবির প্রচার ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় আমি অ্যাক্টিভ নই। ব্যক্তিগত ব্যাপারে তো একেবারেই নয়। এখন দেখছি, অনেকেই সোশ্যাল স্টার হয়ে গিয়েছে, যদিও সোশ্যাল ওয়র্কে নেই,’’ তাঁর কণ্ঠস্বরে বিরক্তি স্পষ্ট। একটু থেমে বললেন, ‘‘কী ছবি দেব বলুন তো? রোজ পেপারে, টিভিতে দেখছি অসংখ্য শ্রমিক পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে চেষ্টা করছে। কত লোক খেতে পাচ্ছে না। চাকরি হারানোর ভয় আছে, ব্যবসার কী হাল হবে কেউ জানে না... এই পরিস্থিতিতে আমি কী করছি, সে ছবি দেওয়া অবান্তর।’’
হতে পারেন দেব তারকা, কিন্তু সময় আজ প্রত্যেককে এক অনিশ্চয়তার মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে, যেখান থেকে আগামিকালের ছবিটা ধূসর। সারাদিন কী ভাবে কাটছে, জিজ্ঞেস করায় বললেন, ‘‘দিনগুলো এখন সত্যিই খুব লম্বা। কিছুটা সময় ধরে মিটিং চলে। কনটেন্ট নিয়ে, এর পর কী ভাবে এগোনো যাবে সে সব নিয়ে... সন্ধেবেলা এক্সারসাইজ়, সিনেমা, সিরিজ় দেখা... চলছে, এ সব নিয়েই রয়েছি।’’ এ বছর আদৌ ‘কিশমিশ’-এর কাজ শুরু করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে দেবের মনে সংশয়। জানালেন, ‘টনিক’, ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’ আর ‘গোলন্দাজ’-ই হয়তো মুক্তি পাবে। তবে লকডাউন উঠলেও মানুষের হাতে সিনেমা দেখার মতো টাকা থাকবে কি না, ভাবছেন তা নিয়েও।
শুধু কাজ নয়, চিন্তা রয়েছে পারিবারিক ক্ষেত্রেও। বাবা ও বোন দেবের সঙ্গে থাকলেও মা আটকে পড়েছেন মুম্বইয়ে, যেখানে আগে তাঁরা থাকতেন। এই পরিস্থিতিতে তিনি সম্পূর্ণ একা থাকলেও ওই কলোনির সঙ্গে তাঁদের বহু বছরের পরিচয়, এটুকুই ভরসা। ‘‘মায়ের কলকাতায় ফেরার টিকিট কাটা ছিল। কিন্তু আচমকা লকডাউন হয়ে যাওয়ায়, ফেরা সম্ভব হয়নি। মাকে নিয়ে চিন্তা তো আছেই। তবে ওখানে মায়ের অনেক পরিচিত রয়েছেন। নীচে আনাজ বিক্রি করতে আসে। তাই সে ভাবে অসুবিধে হচ্ছে না। এমনকি লকডাউন উঠে গেলেও মা আসবে না বলছে, কারণ প্লেনে বা ট্রেনে এই অবস্থায় ট্রাভেল করবে না,’’ বললেন সাংসদ। শুধু মা নয়, দেবের ভাবনা বাবাকে নিয়েও। তাঁদের রেস্তরাঁটি দেখেন তাঁর বাবা। সামগ্রিক অর্থনীতি যেখানে ধসে পড়ছে, সেখানে পরবর্তী সময়ে রেস্তরাঁর কী হবে, কবে পরিস্থিতি বদলাবে, তা নিয়ে চিন্তিত তারকার বাবা। বৃদ্ধ বয়সে তাঁর ভরসা ছেলেই।
তবে পরিস্থিতি কঠিন হলেও হাল ছাড়তে চান না তিনি। আশা রাখেন। ‘‘এই সময়টা ঠিক কেটে যাবে। আমাদের হয়তো অনেক কিছুর সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে। কিন্তু নতুন দিন আসবেই। আমি আশাবাদী,’’ দেবের গলায় আবেগ।
আরও পড়ুন: রক্ত দিয়ে সাহায্য
আরও পড়ুন: গার্হস্থ হিংসায় লকডাউনের আর্জি সেলেবদের