আশির দশকের সুন্দরী নায়িকা অনিতা রাজ। ১৯৬২-র ১৩ অগস্ট মুম্বইয়ে জন্ম অনিতার। পুরো নাম অনিতা রাজ হিঙ্গোরানি। তিনি অভিনেতা জগদীশ রাজের মেয়ে।
দীর্ঘ অভিনয়ের জীবনে প্রচুর ফিল্ম করেছেন তিনি। তবে অভিনয়ের থেকেও তাঁর সৌন্দর্য দর্শকদের মন কেড়ে নিয়েছিল বেশি। তাঁর সৌন্দর্যই সব সময় আলোচনার কেন্দ্রে থাকত।
৫৭ বছর বয়সি এই প্রাক্তন নায়িকা ফের এক বার শিরোনামে। এ বার কারণটা অবশ্য একটু আলাদা।
করোনাভাইরাসের জেরে দেশ জুড়ে চলছে লকডাউন। তার মধ্যেই বাড়িতে বন্ধুবান্ধবদের ডেকে এনে মদ্যপানের আসর বসানোর অভিযোগ ওঠে অভিনেত্রী অনিতা রাজের বিরুদ্ধে।
রাতে মুম্বইয়ের পালি হিল সংলগ্ন আবাসনে অনিতা এবং তাঁর স্বামী কিছু বন্ধুবান্ধবকে বাড়িতে পার্টি করার আমন্ত্রণ জানান বলে অভিযোগ।
অনিতার আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীর গোটা ঘটনাটি নজরে আসায় তিনি তৎক্ষণাৎ অনিতা এবং তাঁর স্বামী সুনীল হিঙ্গোরানির বিরুদ্ধে থানায় ফোন করে অভিযোগ জানান।
থানা থেকে ফোন যায় অভিনেত্রীর বাড়িতে। পুলিশের তরফে তাঁকে সাবধান করা হয়। অবিলম্বে পার্টি বন্ধ না করলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। তবে পার্টির ঘটনা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন তিনি।
তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “আমার স্বামী ডাক্তার। ওঁর এক বন্ধুর শরীর খারাপ হওয়ায় চিকিৎসার জন্য আমাদের বাড়ি এসেছিলেন। যেহেতু বন্ধুর শরীর খারাপ ছিল, তাই তাঁর স্ত্রী-ও সঙ্গে এসেছিলেন। মানবিকতার খাতিরে আমার স্বামী তাঁদের না বলতে পারেননি। আমার বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যে।“
১৯৮৬ সালে ‘করিশ্মা কুদরত কা’ ছবির শুটিংয়ের সময় ডিরেক্টর সুনীল হিঙ্গোরানির প্রেমে পড়েন অনিতা। ওই বছরেই তাঁরা বিয়ে করেন।
বিয়ের পরও অভিনয় চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। বিয়ের পর ‘ইনসানিয়ত কে দুশমন’, ‘হাওয়ালত’, ‘সত্যমেব জয়তে’, ‘হিরাসত’, ‘ইনসাফ কি পুকার’, ‘পাপ কো জ্বালা কর রাখ কর দুঙ্গা’, ‘নফরত কি আঁধি’, ‘ঘর কি ইজ্জত’-এর মতো প্রচুর ছবিতে অভিনয় করেছেন।
জানা যায়, ধর্মেন্দ্র নাকি প্রথম দেখাতেই অনিতার প্রেমে পড়েছিলেন, এমন গসিপ আজও বলিউড পাড়ায় শোনা যায়। দু’জনের জুটি দর্শকও পছন্দ করেছিলেন। তবে ধর্মেন্দ্রর বাড়ি থেকে নাকি এই সম্পর্কে রাজি ছিলেন না কেউই। সে কারণে তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক সে ভাবে টেকেনি। পরে ধর্মেন্দ্রই ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন।
অভিনয় করা নিয়ে অনিতার জীবনে খুব খারাপ ঘটনা ঘটেছিল। ১৯৮৯ সালে ফিল্ম ‘জুর্রত’-এ অভিনয় করার সময় অনিতা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এই ফিল্মের প্রযোজক ছিলেন অভিনেতা রাজেন্দ্র কুমার। কাজের ক্ষেত্রে রাজেন্দ্র কুমার ভীষণ কঠিন ছিল। শোনা যায়, রাজেন্দ্র কুমারের জন্য অনিতার গর্ভপাতের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছিল।
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেই যত দিন পেরেছেন ফিল্মের অভিনয় চালিয়ে গিয়েছেন অনিতা। তিনি যখন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তাঁর পক্ষে আর অভিনয় চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। তিনি কয়েক দিনের জন্য ছুটি চেয়েছিলেন। রাজেন্দ্র কুমার নাকি তাতে রাজি হননি। অভিনয় করতে গিয়ে পা পিছলে শুটিং সেটেই পড়ে যান অনিতা। অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর সন্তানের জন্ম হয়।
কিন্তু এই নিয়ে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা ছিল না রাজেন্দ্র কুমারের। মা হওয়ার দু’দিন পরই অনিতাকে শুটিং সেটে আসার জন্য চাপ দিতে শুরু করেন তিনি। সেই চাপেই নাকি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েই অনিতাকে সেটে আসতে হয়েছিল।
৫৭ বছরের অনিতা কিন্তু এখনও একই রকম চার্মিং এবং ফিট। রোজ সকাল সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে ওঠেন তিনি। নিয়ন্ত্রিত ডায়েট আর অনেকটা সময় জিমে কাটান তিনি। জিম ওয়ার্কআউট নিয়ে তাঁর প্রচুর ইউটিউব ভিডিয়ো রয়েছে।
বড় পর্দায় সুযোগ না পেলেও ছোট পর্দায় কিন্তু এখনও অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।