অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক
কলকাতার মাটিতে পা রেখেছেন সবে পরশু। শুটিংয়ে গিয়েছিলেন লন্ডনে। কিন্তু করোনা-আতঙ্ক এত তীব্র হয়ে ওঠে যে, শুটিং অসমাপ্ত রেখেই লন্ডন থেকে চলে আসতে হয় অভিষেক চট্টোপাধ্যায়কে। অবশ্য শুধু অভিষেকই নন, তাঁর সঙ্গে লন্ডন থেকে কলকাতায় ফিরতে বাধ্য হয়েছেন অভিনেতা জিতের প্রডাকশনের শিল্পী-কলাকুশলীরা প্রত্যেকেই।
আপাতত অভিষেক বাড়িতে। সকলের সঙ্গে ছুটির মেজাজেই সময় কাটাচ্ছেন তিনি। তবে, কালকেই এক মঠে যাবেন করোনা-সতর্কতা নিয়ে এক সমাবেশে বলতে। বিদেশ থেকে ফিরেই কী ভাবে এই কাজ করছেন অভিষেক? আনন্দবাজার ডিজিটালকে তিনি বললেন, ‘‘কেন যাব না? আমার তো কিছু হয়নি! কলকাতা এয়ারপোর্টে স্ক্রিনিংয়ের পর ওঁরাই আমাকে বলেন, বাড়ি চলে যেতে। আমার শরীরে কোনও ভাইরাস নেই। তাই নিজেকে গৃহবন্দি করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না!’’
সত্যিই প্রশ্ন ওঠে না? বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাস অবশ্য তা একেবারেই মনে করছেন না। অরিন্দমের কথায়: ‘‘অভিষেকবাবু ও তাঁর মতো বিদেশ থেকে ফেরা প্রত্যেকের উচিত অবিলম্বে নিজেদের গৃহবন্দি রাখা। এটা বাধ্যতামূলক। শরীরে করোনাভাইরাসের আক্রমণের লক্ষণ ফুটে ওঠে কি না তা সতর্ক ভাবে নজরে রাখতে হবে।’’ এখানেই থামেননি এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘‘প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সহজেই বাইরে বেরিয়ে আসছেন। তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন, তাঁদের এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ তাঁদের অসংখ্য ফ্যানকে প্রভাবিত করবে। আমাদের দেশের যা জনসংখ্যা তাতে এক জনগোষ্ঠী থেকে আর এক জনগোষ্ঠীতে খুব দ্রুত এই রোগ ছড়িয়ে যেতে পারে এবং তা ভয়াল রূপ নিতে পারে। তাই অভিষেকবাবুদের নির্বিচারে কোয়রান্টিনে থাকতে হবে। এই কঠিন সময়ে এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। সাধারণ মানুষকে শিক্ষিত ও সচেতন করে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে।’
পরশু লন্ডন থেকে কলকাতার মাটিতে পা রেখেছেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়
আরও পড়ুন:করোনা রুখতে হাত ধোওয়ার ভিডিয়ো পোস্ট করে ট্রোলড নুসরত
এই ‘সচেতনতা’ বাড়ানোর নমুনা কেমন?
গায়ক ও অভিনেতা অঞ্জন দত্তের কথাই ধরা যাক। পরিচালক অঞ্জন দত্তকে নিয়ে কয়েক দিন ধরেই তীব্র ভাবে সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া। সোমবার অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরেই অঞ্জন দত্ত বাংলাদেশ উপদূতাবাসে এক জমায়েতে যান। শুধু তা-ই নয়, বিদেশ থেকে ফিরেই এই জমায়েতে বহু মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন তিনি! এই নিয়ে রীতিমতো সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁকে। বিদেশফেরত যে কোনও মানুষের ক্ষেত্রে যেখানে চোদ্দো দিন গৃহবন্দি থাকার নির্দেশ জারি করেছে রাজ্য সরকার, সেখানে অঞ্জন দত্তের মতো মানুষ এই মারাত্মক ভুল কী করে করলেন?
আনন্দবাজার ডিজিটালকে অঞ্জন দত্ত বলেছিলেন, “আমি মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের আমন্ত্রণে অনেক রাতে কয়েক মিনিটের জন্য ওই জমায়েতে যাই। বিমানবন্দরে আমাদের ব্যান্ডের পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। এর পর আমি আর আমার ব্যান্ডের সবাই আগামী চোদ্দো দিন নিজেদের গৃহবন্দি রাখার সিদ্ধান্ত নিই।”
ঠিক কতটা সত্যি বলছেন অঞ্জন দত্ত?
ওই অনুষ্ঠানের পরে বাংলাদেশ উপদূতাবাস এক প্রেস বিবৃতি জারি করে। সেখানে বলা হয়, ‘‘বিশিষ্ট শিল্পী অঞ্জন দত্ত চমৎকার সঙ্গীত পরিবেশন করে দর্শকদের মুগ্ধ করেন।’’ তা হলে কতটা দায়িত্বজ্ঞানের পরিচয় দিলেন সমাজের উঁচুতলার এই শিক্ষিত মুখ?
আরও পড়ুন-‘আলাদা থেকেই লড়ব’, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে ফিরলেন সৃজিত-প্রসেনজিৎ
বস্তুত, করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় যখন গোটা বিশ্ব কাঁপছে, আর্থিক ভাবে অনেকটা পিছিয়ে পড়া মানুষজনের অজ্ঞতা নিয়ে যখন আমাদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই, তখন শিক্ষিত, ধনী, প্রভাবশালী প্রতিনিধিরা কার্যত প্রমাণ করেই ছাড়লেন, অশিক্ষা এবং দারিদ্রের থেকেও তাঁদের ‘অজ্ঞতা’ শক্তিশালী!
বরং, চমৎকার দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন তথাকথিত সাধারণ মানুষ। কী ভাবে?
অভিনেতা, সাংসদ মিমি চক্রবর্তীর সঙ্গে লন্ডনে শুটে গিয়েছিলেন তাঁর গাড়ির চালক প্রীতম। মিমির সঙ্গে তিনিও কলকাতায় ফেরেন। সরকারি নিয়ম মেনে ১৪ দিনের জন্য মিমি বাড়িতেই ‘হোম আইসোলেশন’-এ থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু বুধবার বরাহনগরে মিমির গাড়ির চালককে পাড়ায় দেখতে পেয়ে পাড়ার লোকজনই পুলিশকে সে কথা জানান। তিনি যদিও ওষুধ কিনতেই বেরিয়েছিলেন, কিন্তু পুলিশ তাঁকে বাড়ি থেকে বেরতেই বারণ করে।
দিনের শেষে কি তা হলে এই প্রশ্নটাই বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে যে, তা হলে সেলেবদের থেকে ‘কমন ম্যান’দের সচেতনতাই অনেক বেশি? গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহ কিন্তু সে দিকেই ইঙ্গিত করছে!