শুভশ্রী-রাজ
সিনেমা, সিরিয়াল সব কিছুরই শুটিং বন্ধ। খোলা নেই সিনেমা হলও। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সেলেব্রিটিরা কার্যত গৃহবন্দি। কারও কাছে এ হল পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা। কারও কাছে আবার বিড়ম্বনা। তবে সচেতন নাগরিক হিসেবে অধিকাংশ সেলেবই সরকারি নির্দেশিকা অনুসারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন। জনতাকে সচেতন করার বার্তাও দিচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
রাইমা সেন যেমন জানালেন, তিনি এখন সোশ্যাল মিডিয়া আর নেটফ্লিক্সে মজে। ইনস্টাগ্রামে জিম করার ছবি দিয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করায় বললেন, ‘‘আমার বাড়ির ছাদেই জিম রয়েছে। সেখানেই এক্সারসাইজ় করছি। এই পরিস্থিতিতে তো পাবলিক জিমে যাওয়ার প্রশ্নই নেই। এখন বাড়িতে সিনেমা দেখে, বই পড়ে সময় কাটাচ্ছি। বন্ধুরা বাড়িতে আসছে বা আমি তাদের বাড়িতে যাচ্ছি।’’ কিন্তু ছোটখাটো জমায়েত বা পার্টিও এখন এড়িয়ে চলা উচিত নয় কি? অভিনেত্রী সে বিষয়ে সচেতন, ‘‘হ্যাঁ, গত কয়েক দিন তা করলেও আর করব না ঠিক করেছি। বিশেষত কলকাতায় একজনের রেজ়াল্ট পজ়িটিভ আসার পরে।’’
রাইমার মতোই গৃহবন্দি শুভশ্রী। এপ্রিলের ৩ তারিখে তাঁর ছবি ‘ধর্মযুদ্ধ’ মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। সেই মতো তিনি প্রচারের কাজও শুরু করে দিয়েছিলেন। এখন ছবি পিছিয়ে গিয়েছে, তাই নায়িকা বাড়িতেই। যদিও তাঁর স্বামী পরিচালক রাজ চক্রবর্তী বুধবার পর্যন্ত বাইরের কাজ করেছেন। আজ থেকে তিনিও বাড়িতে। যুগলে সময় কাটাচ্ছেন কী করে? রাজের মজাদার জবাব, ‘‘আমি এক জায়গায় বসে থাকতেই পারি না। কী করে এত দিন বাড়িতে আটকে থাকব, সেটাই ভাবছি! ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও আর নতুন কিছু দেখার নেই। শুভশ্রীর অবশ্য এতে খুব ভাল হয়েছে। ও বাড়ি থেকে বেরোতেই চায় না। ওকে বিরক্ত করেই আমাকে সময় কাটাতে হবে মনে হচ্ছে!’’ পাশাপাশি নিজের প্রযোজনা সংস্থার অফিসও বন্ধ রেখেছেন রাজ।
আর এক কাজপাগল অভিনেতা দেব বলছিলেন, ‘‘এত দিন কী ভাবে বাড়িতে থাকব ভাবছি। আমার অফিস বন্ধ রেখেছি। সকলকে ছুটিও দিয়ে দিয়েছি। পুরো শিডিউল ঘেঁটে গেল আমার। ‘গোলন্দাজ’, ‘কিশমিশ’ দুটো ছবির শুটিংয়ের দিনই পিছোল।’’ মে মাসে তাঁর প্রযোজনায় ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’ রিলিজ়ের কথা ছিল। তা পিছোতে পারে বলে জানালেন দেব। অভিনেতার বাড়িতেই রয়েছে জিম সেট-আপ। ঘাম ঝরাতে সেটাই এখন ভরসা। ‘গোলন্দাজ’-এর জন্য তাঁকে কুস্তিও প্র্যাকটিস করতে হত। এখন ড্রয়িং রুমকেই আখড়ায় পরিণত করে ফেলেছেন দেব।
বাইরের কাজ বন্ধ রেখেছেন নুসরত জাহানও। বাতিল করেছেন তাঁর ব্র্যান্ড প্রোমোশন, ইভেন্টের কাজও। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের দিনযাপনের ছবি দিয়েছেন অভিনেত্রী। নুসরত ছবি আঁকতে ভালবাসেন। সময় পেয়েই ক্যানভাস আর রং তুলি নিয়ে বসে পড়ছেন। এর ফাঁকেই চলছে সিনেমা দেখা, বই পড়া।
পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ‘অভিযান’ ছবির শুটিং চলছিল। সরকারি নির্দেশ মেনে তিনি শুটিং বাতিল করেছেন। বলছিলেন, ‘‘অসুবিধে হলেও এখন শুটিং করা অনুচিত।’’
টেলি ইন্ডাস্ট্রিতেও ছুটির মরসুম। ৩০ মার্চ পর্যন্ত শুটিং বন্ধ সিরিয়ালের। তাই ‘কোড়া পাখি’ ধারাবাহিকের অভিনেত্রী পার্নো মিত্র অখণ্ড অবসর কাটাচ্ছেন। ‘‘এই ছুটি পেয়ে তো লাভ নেই। কোথাও বেড়াতেও যেতে পারব না। ঘুমোচ্ছি আর সিনেমা দেখছি।’’ পার্নোর পরামর্শ, ‘‘সচেতন হওয়া ছাড়া আমাদের হাতে অপশন নেই। ইমিউনিটি বাড়াতে পারে এমন জিনিস খাওয়া উচিত। বাড়িতেই হালকা এক্সারসাইজ় করা দরকার। বাড়িতে লবঙ্গ, দারুচিনি, হলুদ, গোলমরিচ, আদা জলে ভাল করে ফুটিয়ে নিচ্ছি। তার পর ঠান্ডা হলে মধু দিয়ে খাচ্ছি। এতে ইমিউনিটি বাড়ে।’’
আর এক টেলি-অভিনেত্রী তিয়াশা রায় গৃহবন্দি অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ‘কৃষ্ণকলি’ ধারাবাহিকের অভিনেত্রী বলছিলেন, ‘‘শুটিং না থাকলে শপিং করতে ভালবাসি। এই পরিস্থিতিতে সেটাও সম্ভব নয়। ভাবছি একটু সালঁ থেকে ঘুরে আসব।’’ কিন্তু সালঁতেও বাইরের লোকের সংস্পর্শে আসতে হয়। সে ক্ষেত্রে? ‘‘আসলে ঠিক কী করা উচিত সেটাই বুঝতে পারছি না,’’ দ্বিধা নিয়ে বললেন অভিনেত্রী।
বিনোদন দুনিয়া ছুটির মেজাজে কাটালেও চোরা আতঙ্ক সর্বত্রই। অবসরযাপন চললেও করোনা-আতঙ্ক যাতে তাড়াতাড়ি কাটে সেই প্রাথর্না করছেন সকলেই।