Coronavirus

পর্দার এ-পারে

শুটিং বন্ধ। ঘরবন্দি সিরিয়ালের পছন্দের নায়িকারা। কেউ বা দুশ্চিন্তায়, কেউ বা খোশমেজাজে... সিরিজ় দেখা, বই পড়া... এ সবই টাইমপাসের জানা উপায়। তবে বন্দিদশায় রান্নাঘরেই অনেকটা সময় কেটে যাচ্ছে নায়িকাদের।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২০ ০১:৪৭
Share:

এ এক অদ্ভুত অস্থির সময়! হাতে অফুরান ছুটি, তবে সে ছুটি কাটানোর জন্য নানা উপায় ভাবতে হচ্ছে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সেলেবদেরও। শুটিং ফ্লোরেই গোটা দিনের অর্ধেক কেটে যায় যাঁদের, আজ তাঁরা ঘরবন্দি। সান্ধ্য-বিনোদনে যাঁরা বাঙালি ড্রয়িংরুমের নিত্যসঙ্গী, তাঁরাই আজ আর পাঁচজনের মতো ঘরের কাজে ব্যস্ত। কেউ দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনছেন, কেউ আবার বলছেন, এই তো বেশ আছি। টলি পাড়ার শ্রীময়ী, জুন আন্টি, কাদম্বিনী, জয়ী, শ্যামা, জবা কী ভাবে কাটাচ্ছে কোয়রান্টিন? কেমন কাটছে অভিনেত্রীদের লকডাউন দিন?

Advertisement

সিরিজ় দেখা, বই পড়া... এ সবই টাইমপাসের জানা উপায়। তবে বন্দিদশায় রান্নাঘরেই অনেকটা সময় কেটে যাচ্ছে নায়িকাদের। শ্রীময়ী মানে ইন্দ্রাণী হালদার বলছিলেন, ‘‘যা বাসন ধুচ্ছি এ ক’দিন! ঘর মোছা, কাপড় কাচা সবটাই নিজের হাতে। ক্যাটরিনা কাইফও দেখলাম নিজে বাসন ধুচ্ছেন,’’ খিলখিলিয়ে হেসে উঠলেন অভিনেত্রী। তবে ঘরের কাজ নিজে হাতে করার অভ্যেস রয়েছে ইন্দ্রাণীর। ‘কে আপন কে পর’ ধারাবাহিকের জবা মানে পল্লবী শর্মা একাই থাকেন। তাই তাঁকেও ঘরদোর পরিষ্কার করা, রান্না করতেই হচ্ছে। আবার ‘আলো-ছায়া’ ধারাবাহিকের দেবাদৃতা বসু মোটেই রান্নাবান্না করতেন না। তবে এই সুযোগে নতুন নতুন রেসিপি ট্রাই করছেন। আবার রান্নাঘরের কাজে মাকে সাহায্য করছেন ঊষসী রায়, টিভির পর্দায় যিনি এখন কাদম্বিনী।

আর এক কাদম্বিনী মানে সোলাঙ্কি রায় আবার একেবারে অন্য মেরুর। ‘‘রান্না করতে বরাবর ভালবাসি, তবে এত রিল্যাক্সড হয়ে রান্না এই প্রথম বার করছি। এই সে দিন চিকেন রাঁধলাম। লুচি ভাল বেলতে পারি না। সেটাও শিখছি।’’ শ্যামা অর্থাৎ তিয়াশা রায় রান্না করে বেশ মজাই পাচ্ছেন, ‘‘আজকেই তো কেক বানিয়েছি। আগে এক দিন পুডিংও তৈরি করেছি,’’ বলছিলেন তিয়াশা। পড়ে পাওয়া এই ছুটিতে রূপচর্চায়ও মন দিয়েছেন তিনি। সেল্ফ-কেয়ারের জন্য এই সময় যে সেরা, সে আর কে না জানেন!

Advertisement

তবে সব নায়িকাই যে এই সময়ে ডায়েট আর রূপ নিয়ে চিন্তিত, তা কিন্তু নয়। শুটিং নেই, তাই ডায়েটের চিন্তা ভুলেছেন ঊষসী রায়। বলছিলেন, ‘‘কী খাব, কতটা ওজন বাড়বে, এ সবের ভয় না পেয়ে প্রায় রোজই ঘি-ভাত, চিজ়-অমলেট খাচ্ছি। ওজন বাড়লে পরে না হয় কমানো যাবে,’’ হাসি তাঁর কণ্ঠে। চিন্তা নেই সোলাঙ্কিরও। বলছিলেন, ‘‘খাওয়াদাওয়া যা হচ্ছে, তাতে ওজন বাড়বেই।’’ তবে ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ়ের পথও খোলা রাখছেন তিনি।

ফোনে কথা বলতে ভালবাসেন না ঊষসী (রায়), তাই ভিডিয়ো কলেই বন্ধুদের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন তিনি। একই পথ নিয়েছেন ‘নকশিকাঁথা’ ধারাবাহিকের মানালি দে। বলছিলেন, ‘‘বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে না। ভরসা ভিডিয়ো কলিং। অভিমন্যুর (মুখোপাধ্যায়) সঙ্গেও ভিডিয়ো কলে সময় কাটাই।’’

টলি নায়িকাদের মধ্যে দু’জন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীও রয়েছেন। দেবাদৃতার অবশ্য সিবিএসই বোর্ড। দিতিপ্রিয়া রায়ের (রাসমণি) এডুকেশন বিষয়টির পরীক্ষা পিছিয়েছে। দেবাদৃতার সোশিয়োলজি ও বাংলা পরীক্ষা এখনও বাকি। দিতিপ্রিয়া এই সময়টা চুটিয়ে উপভোগ করছেন। বলছিলেন, ‘‘বাড়িতে থাকতে কাদের অসুবিধে হচ্ছে, জানি না। আমার তো রোজই শুটিং থাকত। তাই বাড়িতে থাকতে ভালই লাগছে। ওয়াল পেন্টিং, হ্যারি পটার সিরিজ়ের বই আর নেটফ্লিক্সই সঙ্গী।’’ আবার দেবাদৃতার টেনশনও হচ্ছে মাঝেমাঝে, ‘‘কবে যে এই দিন কাটবে, কে জানে।’’ দেবাদৃতার বাড়ি চাকদায়। লকডাউন ঘোষণার আগেই তিনি বাড়িতে দু’দিনের ছুটিও কাটিয়ে এসেছেন।

এ দিকে ধারাবাহিকে জুন আন্টির জন্য সকলে দুশ্চিন্তায় পড়ে। তবে বাস্তব পরিস্থিতিতে ঊষসী চক্রবর্তী বেশ চিন্তায়, ‘‘বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা আছেন। রাতে আমার ভাল ঘুম হচ্ছে না। তবে পজ়িটিভ থাকার চেষ্টা করছি।’’ লেখাপড়ার কাজে তিনিও ব্যস্ত, পিএইচডি থিসিসের কাজ এগিয়ে রাখছেন এই সুযোগে। আবার উপন্যাসও লিখছেন সেই ফাঁকেই। মাঝেমাঝে আবার মন ভাল রাখতে গানও গাইছেন।

শুটিং বন্ধ। সিনেমা হলও বন্ধ। তা হলে উপায়? ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেই মন দিয়েছেন নায়িকারা। ইন্দ্রাণী যেমন সম্প্রতি ‘অসুর’ দেখেছেন। বেশ উপভোগ করেছেন আরশাদ ওয়ারসি অভিনীত এই সিরিজ়টি। আবার দিতিপ্রিয়ার ওয়াচলিস্ট তৈরিই রয়েছে। তিনি সম্প্রতি দেখেছেন নেটফ্লিক্সের ‘ইউ’ সিরিজ়টি। পল্লবী এর মধ্যেই দেখে ফেলেছেন ‘কন্টাজিয়ন’ নামে ছবিটি। করোনা ভাইরাসের প্রকোপে এই ছবিটির দর্শকসংখ্যা এমনিই বেড়ে গিয়েছে। পাশাপাশি ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’ সিরিজ়টিও দেখেছেন তিনি। মানালি আবার মজে আছেন ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ ও ‘মেড ইন হেভেন’ সিরিজ়ে। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে। সিরিজ়-সিনেমায় মন না দিয়ে নবারুণ ভট্টাচার্যের উপন্যাস সমগ্র পড়ছেন সোলাঙ্কি।

নিজেকে ব্যস্ত রাখার নানা উপায় পরখ করে দেখছেন নায়িকারা। শুটিং ফ্লোর নয়, বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যেই এখন তাঁদের দিনযাপনের নানা অভিনয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement