কিছু দিন আগে শিল্পা শেট্টি একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন। যেখানে তিনি তাঁর ছেলে ভিয়ানের সঙ্গে বসে টি-শার্ট ডাই করছেন। শিল্পা লিখেছেন, ‘বাচ্চাদের এনগেজ রাখতে গিয়ে বাবা-মায়েরা নাজেহাল হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এ দিকে হাতে ট্যাব ধরাতে চান না। তা হলে সৃজনশীল কিছু করার চেষ্টা করা যেতে পারে।’ কী ভাবে টি-শার্ট ডাই করা যায়, সে উপায়ও পোস্টে বাতলেছেন শিল্পা। আর এক মা টুইঙ্কল খন্নাও ব্যতিব্যস্ত তাঁর মেয়ে নিতারাকে নিয়ে। তাঁর ইনস্টা-পোস্ট বলছে, মেয়েকে সামলাতে না পেরে তিনি সারেন্ডার করে দিয়েছেন!
করোনা আতঙ্কের জেরে টলিউডের অভিভাবকদের সমস্যাও কিছু কম নয়। যে যার মতো করে তাঁর খুদেটিকে সামলাচ্ছেন। সুদীপ্তা চক্রবর্তীর কন্যা শাহিদা নীরার নার্সারির নতুন ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল শিগগিরই, তার আগেই স্কুল বন্ধ। সাড়ে চার বছরের শাহিদা বাড়িতে বন্দি আপাতত। সুদীপ্তা জানালেন, মেয়ে পার্কে যাওয়া, মাসতুতো দিদি ইদা, সোমরির সঙ্গে খেলার জন্য বায়না ধরছে মাঝে মাঝেই। বন্ধুদের সঙ্গে ভিডিয়ো কলেই কথা হচ্ছে। কী ভাবে মেয়েকে ব্যস্ত রাখা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে সুদীপ্তাকেও, ‘‘ওকে নানা রকম ভাবে সাজিয়ে দিচ্ছি। কোনও দিন গরবা, কোনও দিন ভরতনাট্যম। অপেক্ষায় থাকে, আজ মা কী সাজাবে।’’ ড্রয়িং খাতায় রং পেনসিলের আঁকিবুকি কাটতে কাটতে শাহিদার গানও সোশ্যাল মিডিয়ায় আদর কুড়োচ্ছে। তাই মা-মেয়ের হোম আইসোলেশন কাটছে আনন্দেই।’’
বিরসা দাশগুপ্ত এবং বিদীপ্তা চক্রবর্তীর বাড়িতে এক নয়, দুটো দস্যি, মেঘলা আর ইদা। বিরসা বলছিলেন, ‘‘পাগল পাগল লাগছে। বড়টাকে (মেঘলা) বাড়িতে আটকে রাখাই দায়। আর ছোটজন (ইদা) তো কী করবে, কী করবে-না ভেবে পাচ্ছে না। বিদীপ্তাকে যেহেতু বাড়িতে পায় না, তাই এখন সারাক্ষণ মা-মা করে যাচ্ছে। মোবাইল, ল্যাপটপ, টিভি এ সবের সঙ্গে নাচ-গানও চলছে।’’ তবে বিরসা কিন্তু মেয়ের এই মধুর অত্যাচার উপভোগই করছেন, ‘‘সব খারাপের মধ্যেও কিছু ভাল থাকে। বাড়ির সকলে একসঙ্গে থাকছি সারাক্ষণ, এটাই বা কম কী!’’
‘অ্যাডভেঞ্চার্স অব জোজো’র সেই দস্যিটা কিন্তু বাড়িতে শান্তশিষ্ট হয়েই রয়েছে। জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুত্র যশোজিৎ জানাচ্ছে, ঘরবন্দি অবস্থায় বই তার বন্ধু। ফেলুদা সমগ্র শেষ করে হাত দিয়েছে লীলা মজুমদার রচনা সমগ্রে। দেখেছে সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা। তার সঙ্গে অবশ্য ‘গডফাদার’ও দেখে নিয়েছে ক্লাস এইটের যশোজিৎ।
আর এক খুদে সেলেব্রিটি ভুটু ভাইজান ওরফে ব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে আটকে থাকতে মোটেই ভাল লাগছে না। আর এমনিতে পড়তে বসতে বললেই গায়ে জ্বর আসে তার। এখন স্কুল বন্ধের সুবাদে পড়াশোনার পাঠ একেবারেই তুলে ফেলেছে, অনুযোগ ব্রতর মা সেঁজুতি মজুমদারের। ‘‘আমি ‘চোখের বালি’ পড়ছিলাম, বলল, আমাকেও শোনাও! বড়দের গল্প-কবিতাতেই বেশি আগ্রহ ওর,’’ বলছিলেন সেঁজুতি। করোনার জেরে পিছিয়ে গিয়েছে ‘হামি টু’র শুটিং। তাই বাড়িতে গল্পের বই পড়ে আর দস্যিপনা করেই সময় কাটাচ্ছে ক্লাস ফোরের ব্রত। তবে ঘরে যখন একেবারেই ভাল লাগছে না, মাঝে মাঝে বড় রাস্তা থেকে একটু-আধটু ঘুরেও আসছে সে। বাড়িতে বন্দি হয়ে থাকা কতটা বোরিং? অধৈর্য গলায় ভুটু ভাইজানের জবাব, ‘‘করোনাতঙ্ক হলে আর কী করব!’’
দস্যিপনার বয়স হয়নি তার কিন্তু একরত্তি কন্যা অন্তঃকর্ণাকে সাবধানে রাখছেন কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলছিলেন, ‘‘যেহেতু এখন কোথাও যেতে হচ্ছে না, তাই আমি বাড়িতে কষে ঘুম দিচ্ছি।’’
ছোটদের সামলাতে বাবা-মায়েদের ঘুম উড়েছে। তবে ফ্যামিলি টাইম সকলেই উপভোগ করছেন।