ছবি: শাটারস্টক
কোনও চ্যানেলে বাইরের সাক্ষাৎপ্রার্থীদের ভিতরে যাওয়ার অনুমতি নেই। কাজ সারতে হচ্ছে রিসেপশনে বসে।
কোনও চ্যানেল তাদের শুটিং ইউনিটগুলিকে যাবতীয় সতর্কতা নিতে বলেছে।
বস্তুত, করোনা ভাইরাস আতঙ্কে ভুগছে টেলিভিশন পাড়াও। তবে টেলিভিশনের শুটিং বন্ধ হয়নি। অনেক লোকজন নিয়ে শুটিং চালিয়ে যেতেই হচ্ছে। এই অবস্থায় কী ভাবছে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি?
‘ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’-র সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, “আমরা আলোচনা করছি ঠিক কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় ফ্লোরগুলোতে। এসএসকেএম হাসপাতালের সুপারকে চিঠি দিচ্ছি আমাদের প্রপারলি গাইড করার জন্য। আপাতত প্রোডিউসারদের বলেছি ফ্লোরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার যেন যথেষ্ট পরিমাণে রাখা হয়। যে সব ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করা হয় সেগুলোও যাথাযথ ভাবে পরিষ্কার রাখতে বলেছি। খাওয়াদাওয়ার বিষয়ে সচেতন থাকার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা তো এই রোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে প্রফেশনাল নই। তাই এসএসকেএম হাসপাতালের সুপারের পরামর্শ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। উনি নিশ্চয় আমাদের প্রপারলি গাইড করবেন।”
জি বাংলা চ্যানেলে বাইরের কোনও সাক্ষাৎপ্রার্থী এলে তাঁকে রিসেপশনের চৌহদ্দির মধ্যেই কাজ সারতে হচ্ছে। ভেতরে যাওয়ার অনুমতি মিলছে না। করোনাভাইরাস এড়ানোর সচেতনতা হিসেবেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে রিসেপশন সূত্রে জানা গেছে। তবে কর্মীদের আলাদা করে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। কর্মীরা অনেকেই মাস্ক পরে অফিসে আসছেন। কিন্তু কাজ করতে করতে সবসময় মাস্ক পরে থাকা সম্ভব হচ্ছে না বলে অনেকে জানিয়েছেন। স্টার জলসা চ্যানেল থেকেও শুটিং ফ্লোরে করোনাভাইরাস বিষয়ে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যদিও চ্যানেল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আরও পড়ুন: করোনার ভয়ে বাতিল হল সলমনের বিদেশ সফরও
জি বাংলা চ্যানেলের সিইও সম্রাট ঘোষ বলেন, “আমরা সমস্ত সতর্কতা নিচ্ছি। বিশেষ করে হাইজিনের বিষয়ে খুবই সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। সচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় জায়গায় হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা হয়েছে। ডিসপোজেবল বাসনপত্র, গ্লাভস, মাস্ক ইত্যাদিও ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রবেশপথে থার্মোমিটার রাখা হয়েছে। প্রত্যেক দিন সবার শরীরের উত্তাপ মাপা হচ্ছে।”
গত বৃহস্পতিবার থেকে ‘রানি রাসমণি’ ধারাবাহিকের দিতিপ্রিয়া রায়ের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষার পরে তিনি শুটিংও করছেন। কিন্তু পরীক্ষা বা শুটিং, কোথাও তিনি মাস্ক পরে যাচ্ছেন না। স্যানিটাইজারও ব্যবহার করছেন না বলে তাঁর মা জানালেন।
আরও পড়ুন: দেখা হচ্ছে না সৃজিতের সঙ্গে, বিরহে কাতর মিথিলা
‘কৃষ্ণকলি’ ধারাবাহিকের ‘শ্যামা’ তিয়াসা রায়ের কথায়: “সারাদিন শুটিংয়ে থাকতে হয়। হতেই পারে যে কারও হাঁচি-কাশি হল। এগুলো এড়ানো যাবে না। তবুও চেষ্টা করা হচ্ছে সচেতন থাকার। আমরা অভিনেতারা সারা দিন মেকআপ নিয়ে থাকি। মাস্ক পরলে মেকআপ নষ্ট হবে। আমাদের বেশি সমস্যা। মনে মনে ভেবে নিচ্ছি আমাদের কিছু হবে না।”
সান বাংলা চ্যানেল থেকে তাদের শুটিং ইউনিটগুলিতে করোনা-সতর্কতা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। নিজের জলের বোতল, স্যানিটাইজার, মেকআপ কিট, মাস্ক পরে থাকার অনুরোধ করা হয়েছে। ‘কনেবউ’ ধারাবাহিকের নায়ক গৌরব মণ্ডল অনেক দিন ধরে সব কিছু নিজেই ক্যারি করেন। তাঁর চরিত্র পারিজাত এই সময়ের। তাই পোশাক নিয়েও তাঁর সুবিধা হয়েছে। অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে নিজের কস্টিউম নিজেই নিয়ে আসছেন। ফ্যান্টাসি বা ঐতিহাসিক চরিত্র হলে সেটা সম্ভব ছিল না।
তিনি বললেন, “আমি নিজের গাড়ি ব্যবহার করি, নিজেই ড্রাইভ করি। সেটা কারও সংস্পর্শে আসে না। নিজের জল, খাবার সব বাড়ি থেকে আনি। মেকআপ কিট অনেক আগে থেকেই নিজেরটা ব্যবহার করি। তবু শুটিং ফ্লোরে অনেক মানুষজন আসেন। রিস্ক থেকেই যায়। অনেক মানুষের সঙ্গে মেশামিশি আপাতত বন্ধ করেছি। খেয়াল রাখছি কেউ অসুস্থ কি না।”
করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যেই কিছু প্রশ্ন উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। বাংলা ইন্ডাস্ট্রির সব কিছুই কি খুব হাইজিন মেনে হয়? বিশেষ করে খাবার? কী ভাবে রান্না হয়, কী ভাবে পরিবেশন করা হয়, বাসনপত্রই বা কী ভাবে পরিষ্কার করা হয়?
এ সব প্রশ্নই উস্কে দিলেন ‘ক্ষীরের পুতুল’, ‘সৌদামিনীর সংসার’ প্রভৃতি ধারাবাহিকের প্রযোজক রূপা বন্দ্যোপাধ্যায়, “আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে লোকজন এমন সিচুয়েশনের মধ্যে কাজ করেন, সেটা যে আটমোস্ট নিট অ্যান্ড ক্লিন এবং দুর্দান্ত হেলদি একটা স্পেস, যেখানে কোনও রকম ভাইরাস ঢোকে না, কোনও রকম নোংরা ঢোকে না, এ রকম পরিবেশ তো নয়। এখানে যারা কাজ করেন তাঁরা মোস্টলি অ্যাকাসটমড, অ্যাডজাস্ট করে নিয়েছেন। ফলে আলাদা করে ‘সব সময় মাস্ক পরে থাকব, হ্যান্ড স্যানিটাইজ করব’— এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না। অন্তত আমাদের ফ্লোরগুলোতে দেখিনি। যদিও আমরা সচেতন করছি বার বার।”
ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে জানা যাচ্ছে, কোনও ফ্লোরেই বিশেষ কাউকে মাস্ক পরে দেখা যাচ্ছে না। বার বার হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা বা গরম খাবার খাওয়া শুটিংয়ের চাপে সম্ভব হচ্ছে না। ফলে করোনাভাইরাস নিয়ে চূড়ান্ত আঁটোসাঁটো ব্যবস্থা করা যথেষ্ট মুশকিলের বলে ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই মনে করছেন।