Rituparna Sengupta

রাত ৯টায় প্রদীপ জ্বালুন, প্রমাণ হবে আমরা এক: ভিডিয়ো বার্তা ঋতুপর্ণার

ঋতুপর্ণার এই বার্তাকে স্বাগত জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য তথা চলচ্চিত্র জগতে তাঁর অন্যতম সহকর্মী বাবুল সুপ্রিয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২০ ১৫:২৬
Share:

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।

প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে রাত ৯টায় আলো নিভিয়ে প্রদীপ, মোমবাতি বা টর্চ জ্বালান। আবেদন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের। ভিডিয়ো বার্তা প্রকাশ করে এই আবেদন জানিয়েছেন অভিনেত্রী। গোটা ভারত যে করোনার বিরুদ্ধে এক হয়ে লড়ছে, রবিবার রাতের এই প্রদীপ জ্বালানোয় সে কথাই প্রমাণ হবে বলে মনে করছেন তিনি। ঋতুপর্ণার এই বার্তাকে স্বাগত জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য তথা চলচ্চিত্র জগতে তাঁর অন্যতম সহকর্মী বাবুল সুপ্রিয়।

Advertisement

ঋতুপর্ণা এখন দেশের বাইরে। তিনি রয়েছেন সিঙ্গাপুরে। সেখানকার সরকারও লকডাউন ঘোষণা করেছে করোনার বিরুদ্ধে লড়তে। তবে অভিনেত্রীর ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন, সিঙ্গাপুর থেকেও দেশের পরিস্থিতির খোঁজখবর সারাক্ষণই রাখছেন অভিনেত্রী। প্রিয়জন ও পরিচিতদের সঙ্গেও নিরন্তর যোগাযোগ রাখছেন।

শনিবার রাতে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর ভিডিয়ো বার্তাটি সামনে এসেছে। তার আগের দিন অর্থাৎ শুক্রবার সকাল ৯টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার অর্থাৎ ৫ এপ্রিল রাত ৯টায় বাড়ির সব আলো নিভিয়ে দিয়ে দরজায় বা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে প্রদীপ, মোমবাতি, টর্চ বা মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

আরও পড়ুন: কালো জল আর দুর্গন্ধ উধাও, যমুনা টলটলে নীল, ছবি ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়

কী বললেন ঋতুপর্ণা? শুনে নিন

এর আগে ২২ মার্চ অর্থাৎ জনতা কার্ফুর দিন বিকেল ৫টায় বাড়ির দরজায়, জানলায় বা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে তালি বা থালা বা ঘন্টা বাজানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন মোদী। করোনার বিরুদ্ধে যাঁরা রাস্তায় নেমে লড়ছেন এবং সাধারণ জনতাকে সুরক্ষিত রাখছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ওই আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সেই আহ্বানকে অনেকেই কটাক্ষ করতে শুরু করেছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল বিতর্কও শুরু হয়েছিল ওই আহ্বানের সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য গোটা দেশেই সে দিন চোখে পড়ার মতো সাড়া মিলেছিল কৃতজ্ঞতা জানানোর সেই কর্মসূচিতে। কিন্তু তার আগে ওই কর্মসূচিকে ঘিরে যে রকম বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, এ দিন প্রদীপ জ্বালানোর আহ্বানকে ঘিরেও তেমনই বিতর্ক শুরু হয়েছে।

শুধু সাধারণ নেটাগরিকরা নন, কলকাতার বেশ কয়েক জন বিশিষ্ট নাগরিকও প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই আহ্বানের দিকে কটাক্ষ ছুড়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তাঁর মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্যরা সে পথ নেননি। প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই প্রদীপ জ্বালানোর আহ্বান প্রসঙ্গে আগ বাড়িয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি বাংলার শাসকরা। সে সংক্রান্ত প্রশ্নের মুখোমুখি পড়েও কেউ কেউ বিতর্ক এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টাই করেছেন। করোনা বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ চলছে, তার মধ্যে রাজনৈতিক তিক্ততা বাড়াতে চান না বলেই রাজ্যের শাসক শিবিরের এই অবস্থান, বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। কিন্তু শহরের এক অত্যন্ত পরিচিত বিশিষ্ট নাগরিকের পরিবারের এক সদস্যা নরেন্দ্র মোদীর এই প্রদীপ জ্বালানোর আহ্বানের বিরোধিতা করে শনিবার বিতর্কিত মন্তব্য করেন। বিতর্ক এত দূর গড়ায় যে বিজেপির তরফ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশে লিখিত অভিযোগও জমা দেওয়া হয়।

তবে সবটাই যে বিরোধিতা নয়, বাংলার বিদ্বজ্জনদের অনেকেই যে আপাতত রাজনীতি দূরে সরিয়ে রেখে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ছবিটা তুলে ধরার পক্ষপাতী, ঋতুপর্ণার ভিডিয়ো বার্তায় তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার আবেদন জানিয়ে ঋতুপর্ণা বলেছেন রাত ৯টায় ঘরের আলো নিভিয়ে সবাই মিলে যদি প্রদীপ বা মোমবাতি বা টর্চ জ্বালান, তা হলে প্রমাণ হবে, ‘‘আমরা সবাই এক, আমরা সবাই একটা যুদ্ধ লড়ছি এবং এই যুদ্ধে আমরা সবাই শামিল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এই যুদ্ধ আমাদের জিততে হবে এবং আমরা জিতবও।’’

আরও পড়ুন- শুধু যৌনতাতেই বাঁচেন যৌনকর্মীরা? মোদীর ‘দীপাবলি’কে বিঁধে বিধ্বংসী স্বস্তিকা

বাংলায় নয়, হিন্দি এবং ইংরেজিতে নিজের ভিডিয়ো বার্তা রেকর্ড করেছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। শুধু বাংলার জন্য বা বাঙালির জন্য নয়, গোটা দেশের জন্যই যে তাঁর বার্তা, সে কথাই সম্ভবত বোঝাতে চেয়েছেন অভিনেত্রী।

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর এই বার্তাকে স্বাগত জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তিনি বলেন, ‘‘মোমবাতি বা প্রদীপ জ্বালানোর কথাটা প্রধানমন্ত্রী তো শুধু বিজেপি সমর্থকদের উদ্দেশে বলেননি। তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশবাসীকে বলেছেন। একটা ঐক্যবদ্ধ লড়াই চলছে, প্রতীকী ভাবেও সেটা যাতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, তার জন্য বলেছেন। তাই ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর ভিডিয়োকে স্বাগত জানাচ্ছি।’’ দিল্লি থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে বাবুল বলেন, ‘‘ওই ভিডিয়োর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই। এর সঙ্গে বিজেপিকে জোড়াটা ভুল হবে। ভারতে বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানেই আলো জ্বালানো হয়, প্রদীপ জ্বালানো হয়, ধুপ-ধুনো দেওয়া হয়, আতর বা সুগন্ধি ছড়ানো হয়। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষেই এটা হয়। কারণ এগুলো ভারতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ। এগুলোকে ভারতীয়রা শুভ মনে করেন। তাই করোনার বিরুদ্ধে লড়াইতেও সেই শুভ চিহ্নগুলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই। এগুলোর মধ্যে রাজনীতি তাঁরাই আনেন, যাঁরা নিজেদের মনের মধ্যে স্বচ্ছ ভারত অভিযানটা চালান না। স্বচ্ছতার কথা মোদীজি বলেন বলেই বোধ হয় ওই শব্দের প্রতিও কিছু লোকের অ্যালার্জি হয়ে গিয়েছে।’’

যাঁরা নরেন্দ্র মোদীর এই আহ্বানের বিরোধিতা করছেন, এ দিন তাঁদের প্রতি কটাক্ষ ছুড়েছেন বাবুল। কারও নাম না করে তিনি বলেছেন, ‘‘কার মেয়ে বা কার ছেলে কী বলেছেন, কোন রাজনৈতিক নেতা কী বলেছেন, তাতে সত্যিই কিছু যায়-আসে না। প্রতিটা ম্যাচের আগে যে কোনও টিম হার্ডল করে। যে কোনও ম্যাচের আগে ওই টিম হার্ডলটা হয়। তার আগে হয়তো যথেষ্ট প্র্যাকটিস হয়েছে। সারা বছরই হয়তো প্র্যাকটিসের মধ্যেই টিমটা থাকে। তবু ম্যাচের আগে ওটা করতেই হয় টিমকে চাঙ্গা রাখার জন্য। প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানও সে রকমই একটা প্রয়াস। টিম ইন্ডিয়াকে অর্থাৎ গোটা ভারতকে চাঙ্গা রাখার প্রয়াস। সেটা যাঁরা বুঝতে চান না, যাঁরা শিক্ষিত হয়েও অশিক্ষিত থাকতে চান, তাঁদেরকে আমার কিছু বলার নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement