শাহিদ কপূর।
তেরো দিনে দুশো কোটি টাকার গণ্ডি পার করে ফেলেছে ‘কবীর সিং’। ছবিটি ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক নিশ্চিত ভাবে বক্স অফিসের বৈতরণী পারে সহায়ক হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, শাহিদ কপূরের খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকা কেরিয়ারকে টেনে তুলেছে। সেই প্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার শাহিদ একটি পোস্ট করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। যেখানে তাঁর মোদ্দা বক্তব্য, যাবতীয় নিন্দেমন্দ সত্ত্বেও দর্শক যে তাঁর চরিত্র কবীরকে ভালবেসেছেন এবং ভুল বোঝেননি, তার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ।
শাহিদের বক্তব্যের মধ্যেই বিতর্কের সূত্র লুকিয়ে। চরিত্রটিকে ‘ভুল বোঝা’ নিয়েই কিন্তু একদফা আলোচনাচক্রে বসা যেতে পারে। শাহিদ বলেছেন, ‘‘আমরা সকলেই ভুল করি। তার থেকে শিক্ষাও নিই। তাই কবীরকে বিচার না করে তাকে বোঝার চেষ্টা করা উচিত।’’ দর্শক যেখানে একটি সিনেমা এবং চরিত্র থেকে অনুপ্রাণিত হন, সেখানে দাঁড়িয়ে কবীরের মতো চরিত্র কতটা সর্বজনগ্রাহ্য সে বিতর্ক উঠবেই। যে পদ্ধতিতে সে একটি মেয়েকে পেতে চায় বা ডাক্তার হিসেবে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় যা যা করে— সব কিছু নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল ছবিটি। এই বিতর্ক নিয়ে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল টলিউডের অভিনেতা আবীর চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ‘কবীর সিং’ দেখিনি। তবে ‘অর্জুন রেড্ডি’ দেখেছিলাম। তখনই মনে হয়েছিল, এই বিতর্কগুলো উঠবে। সিনেমা যেখানে সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করে সেখানে কী দেখাব আর কী দেখাব না, তার একটা পরিধি থাকা প্রয়োজন।’’ যদিও বিনোদনের জায়গা থেকে সিনেমা তাঁর বাক্স্বাধীনতার ছাড় নিতেই পারে। আবীর বলছেন, ‘‘ভাল-খারাপ দুটোই ছবিতে থাকে। নেগেটিভিটিও সামনে আসা উচিত। কিন্তু নেতিবাচক জিনিসকে গ্লোরিফাই করা উচিত নয়।’’
যেহেতু এক ডাক্তারের জীবনযাপন দেখানো হয়েছে, তাই সেই মহল থেকেও আপত্তি উঠেছে। তবে এগুলো ছবির সাফল্যে অন্তরায় হয়নি। শাহিদ তাঁর বক্তব্যে, দর্শকের পরিণতমনস্কতার প্রশংসা করেছেন। ‘কবীর সিং’ দেখেননি যিশু সেনগুপ্তও। অ্যান্টি হিরোর চরিত্রে তিনি খারাপ কিছু দেখেন না। কারণ ওটা সিনেমা, বাস্তব নয়। যিশু পাল্টা প্রশ্ন তুললেন, ‘‘ছবিটি ‘এ’ সার্টিফিকেট পেয়েছে। সুতরাং এক জন প্রাপ্তবয়স্ক ছবিটি দেখছেন। তাঁর ভাল-মন্দের বোধ থেকেই তিনি বুঝবেন, ছবি থেকে কতটা নেবেন, কতটা বর্জন করবেন।’’ এর জবাবে আবীর বলেছেন, ‘‘১৮ বছর হলেও সব মানুষের বোধশক্তি সমান হয় না।’’
‘ডর’, ‘বাজ়িগর’ থেকে ‘ধুম’—অ্যান্টি হিরোকে গ্লোরিফাই করা নতুন নয়। তা সত্ত্বেও ‘কবীর সিং’ নিয়ে বিতর্ক থামেনি। তবে যে সময়ে ‘বাজ়িগর’-এর মতো ছবি হয়েছিল, তার চেয়ে পরিস্থিতি বদলেছে। পরিচালক অরিন্দম শীল মনে করেন, ‘‘আমি ‘কবীর সিং’ দেখিনি, তবে আপত্তিগুলো শুনেছি। পরিচালকের কিছু দায়দায়িত্ব থাকেই। রিয়্যালিজ়মকে তুলে ধরাই এখনকার ট্রেন্ড। সেখানে আমার সমর্থন রয়েছে। তবে এখন সমাজব্যবস্থা যেখানে গিয়েছে, সেখানে বিনোদনের লাইসেন্স নিয়ে যা খুশি দেখিয়ে দেওয়া বোধহয় উচিত নয়।’’