অভিনেতা, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক, গায়ক এবং গীতিকার। ইন্ডাস্ট্রিতে বহু পরিচয় কমল হাসানের। তামিল বিনোদন দুনিয়ার পাশাপাশি তিনি দাপটের সঙ্গে শাসন করেছেন বলিউডও।
কাজের মতো বর্ণময় তাঁর ব্যক্তিগত জীবনও। ঘনিষ্ঠ এবং অন্তরঙ্গ হয়েছেন একাধিক নারীর সঙ্গে। কিন্তু পঁয়ষট্টি বসন্ত পেরিয়েও এখনও একা এই রাজনীতিক তথা বলিষ্ঠ অভিনেতা।
অতীতের নায়িকা শ্রীবিদ্যা, নৃত্যশিল্পী বাণী গণপতি, অভিনেত্রী সারিকা থেকে সিমরন বাগ্গা অথবা গৌতমী— বিভিন্ন সময়ে ঘনিষ্ঠ হয়েছেন তাঁর। তাঁদের মধ্যে বিয়ে করেছিলেন বাণী এবং সারিকাকে।
এক সাক্ষাৎকারে কমল হাসান বলেছিলেন, তিনি বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানে বিশ্বাস করেন না। তিনি যে দু’বার বিয়ে করেছিলেন, রাজি হয়েছিলেন প্রেমিকার সামাজিক পরিচিতির কথা ভেবেই।
সত্তরের দশক কমল হাসানের কেরিয়ারের সূত্রপাতের সময়। সে সময় নায়িকা শ্রীবিদ্যার ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন তিনি। দু’জনে বেশ কিছু ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেছেন। সেগুলির মধ্যে আছে সুপারহিট ‘অপূর্ব রাগাঙ্গল’।
কিন্তু দুই পরিবারের সম্মতি সত্ত্বেও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি তাঁদের সম্পর্ক। শ্রীবিদ্যা সম্পর্ক ভেঙে চলে গিয়েছিলেন। ১৯৭৬ সালে শ্রীবিদ্যা বিয়ে করেছিলেন মালয়লম ছবির পরিচালক জর্জ থমাসকে। চার বছর পরে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
২০০৬ সালে শ্রীবিদ্যা যখন হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায়, তখন কমল হাসান তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সে বছরই অক্টোবর মাসে প্রয়াত হন ক্যানসার আক্রান্ত শ্রীবিদ্যা। দু’বছর পরে মুক্তি পাওয়া মালয়ালম ছবি ‘থিরাক্কথা’ ছিল তাঁদের সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে তৈরি।
শ্রীবিদ্যার সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে কমল হাসান প্রেমে পড়েন নৃত্যশিল্পী বাণী গণপতির। দু’বছর পরে তাঁরা বিয়ে করেন। কমল চেয়েছিলেন লিভ ইন সম্পর্কেই থাকতে। কিন্তু বাণী সেই প্রস্তাবে রাজি ছিলেন না।
কমল হাসান এবং বাণী গণপতির ১০ বছরের দাম্পত্য কেন ভেঙে গেল, স্পষ্ট করে জানা যায় না। অনেকেই বলেন, তাঁদের মাঝে চলে এসেছিলেন সারিকা। তাঁর প্রেমে পড়েই নাকি বাণী গণপতির থেকে দূরে সরে এসেছিলেন কমল হাসান। তবে এও শোনা যায়, বাণী নিঃসন্তান ছিলেন বলে তাঁদের দাম্পত্যে ফাটল ধরে।
কমল হাসানের সঙ্গে সারিকার সম্পর্ক সে সময় ছিল ইন্ডাস্ট্রির সব থেকে চর্চিত বিষয়। দু’জনের কেউ তাঁদের প্রেম লুকিয়ে রাখেননি। বাণী গণপতির সঙ্গে বিচ্ছেদের আগেই সারিকার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন কমল হাসান।
১৯৮৮ সালে সারিকাকে বিয়ে করেন কমল হাসান। তখন তাঁদের বড় মেয়ে শ্রুতির বয়স দু’বছর। ১৯৯৯ সালে জন্ম হয় তাঁদের ছোট মেয়ে অক্ষরার।
তাঁদের ১৬ বছরের দাম্পত্য ভেঙে গিয়েছিল ২০০৪ সালে। তার দু’বছর আগে সারিকা বিবাহবিচ্ছেদ চেয়ে আবেদন করেছিলেন। শোনা যায়, কমল হাসান একইসঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন নায়িকা সিমরন বাগ্গা এবং সারিকার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী গৌতমীর সঙ্গে।
এই পরিস্থিতিতে সারিকা নাকি হতাশার জেরে আত্মঘাতীও হতে চেয়েছিলেন।
২০০১ সালে একটি ছবির শুটিঙের সময় বয়সে ২২ বছরের ছোট সিমরনের সঙ্গে কমল হাসানের সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন শোনা যায়। তবে তাঁদের সম্পর্ক বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ২০০৩ সালে সিমরন বিয়ে করেন তাঁর ছোটবেলার বন্ধু দীপককে।
এর পর কমল হাসান দীর্ঘদিন গৌতমীর সঙ্গে লিভ ইন সম্পর্কে ছিলেন। তার আগে গৌতমীর প্রথম স্বামী ছিলেন শিল্পপতি সন্দীপ ভাটিয়া। ১৩ বছর পরে ২০১৬ সালে ভেঙে যায় তাঁদের সম্পর্ক।
বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে গৌতমী বলেছিলেন, এই সিদ্ধান্ত নিতে তাঁর হৃদয় ভেঙে গিয়েছিল। কারণ তাঁদের বিয়ে না হলেও তিনি সম্পর্কের প্রতি কমিটেড ছিলেন বলে জানান তিনি।
কেন তিনি সম্পর্ক থেকে সরে এলেন, গৌতমী তার সব কারণ প্রকাশ করেননি। তবে তাঁর অভিযোগ ছিল, তিনি কমল হাসানের যে যে ছবিতে কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছেন, সেখানে যথাযথ পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
ইন্ডাস্ট্রিতে গুঞ্জন শোনা যায়, তাঁদের সম্পর্ক ভাঙার পিছনে দায়ী ছিলেন শ্রুতি হাসান। বাবার এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি তিনি। কিন্তু গৌতমী কোনওদিন শ্রুতি বা অক্ষরাকে নিয়ে কোনও অভিযোগ করেননি।
সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরেও গৌতমীর পাশে ছিলেন কমল হাসান। তাঁদের বিচ্ছেদের আগেই ধরা পড়ে, গৌতমী ক্যানসার-আক্রান্ত। ক্যানসারের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াইয়ের শরিক ছিলেন কমল হাসান। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)