(বাঁ দিকে) আলোকসম্পাত কর্মীদের নতুন গিল্ড, স্বরূপ বিশ্বাস (ডান দিকে)। ছবি: ফেসবুক।
মহালয়ায় নয়া মোড়। অনেক বছর ধরে আলোচনার এ দিন অর্থাৎ, বুধবার পর্দার আলোকসম্পাত কর্মীদের নতুন গিল্ড তৈরি হল। এক ছাতার নীচে সংঘবদ্ধ হলেন সাড়ে চারশোর বেশি সদস্য। সংগঠন তৈরির পর আনন্দবাজার অনলাইনকে সম্পাদক সুব্রত মাঝি বলেন, “অনেক বছর ধরে আমরা বঞ্চনা, অন্যায়ের শিকার। কেবল গিল্ড নেই বলে ন্যায্য পাওনা থেকেও বঞ্চিত। অনেক দিন ধরে তাই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হল। অবশেষে দেবীপক্ষের দোরগোড়ায় আমাদের ভাবনা বাস্তবায়িত হল।”
খবর, ১৯২৬ সালের ট্রেড ইউনিয়ন অ্যাক্ট অনুযায়ী খাতায়কলমে ১ অক্টোবর, মহালয়ার আগের দিন গিল্ডের শংসাপত্র পায় আলোকসম্পাত কর্মীদের এই সংগঠন। মহালয়ায় কর্মীদের উপস্থিতিতে এই গিল্ডের কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে তাঁরা তাঁদের বক্তব্য জানিয়েছেন প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে। সেখানে স্পষ্ট লেখা, ‘লাইট কেয়ারটেকার’ নামে পরিচিত এই কর্মীদের কাজের কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। কখনও শুটিংয়ের দু’ঘণ্টা আগে, কখনও আগের দিন গাড়িতে আলো তুলে দেওয়া থেকে কাজ শুরু। পাশাপাশি, নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক ছিল না কর্মীদের। অথচ অন্যান্য টেকনিশিয়ানরা সময়মতো পারিশ্রমিক পেয়ে যান। এ ছাড়া, বাজারদরের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাঁদের পারিশ্রমিক বাড়লেও ‘লাইট কেয়ারটেকার’দের পারিশ্রমিক বাড়ানোর কোনও চেষ্টা করা হয় না।
এ প্রসঙ্গে সংগঠনের সম্পাদক আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে উদাহরণ তুলে ধরেছেন। তাঁর কথায়, “বাংলাদেশের ছবি ‘তুফান’ বা পুরুলিয়ায় সদ্য শেষ হওয়া একটি ছবির পারিশ্রমিক এখনও সবাই পাননি। আদৌ বকেয়া মেটানো হবে কি না, কেউ জানেন না। কোনও পরিচালক বা প্রযোজক আমাদের প্রয়োজনের কথা কানে তোলেন না। অফিসিয়াল কাগজ দেখাতে বলেন। সংগঠন না থাকায় যা আমাদের কাছে নেই। বাধ্য হয়ে আমরা তাই ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসর দ্বারস্থ হই। একটি ইউনিয়ন গড়ে দেওয়ার জন্য বলি। তিনি আমাদের পরিস্থিতি বিবেচনা করেছেন।” এখন বাকি ফেডারেশনের অনুমোদন।
কবে ফেডারেশন নতুন গিল্ডকে অনুমোদন দেবে? সেই সঙ্গে প্রশ্ন, আরও একটি নতুন গিল্ড টলিউডের সুবিধার কারণ না সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে?
আনন্দবাজার অনলাইন প্রশ্ন রেখেছিল ফেডারেশন সভাপতির কাছে। তিনি বলেছেন, “ফেডারেশনের আওতাধীন ২৬টি গিল্ড। প্রত্যেক গিল্ডের সভাপতি, সম্পাদক একসঙ্গে যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই হবে। বিষয়টি সময়সাপেক্ষ।” দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে তাঁর মত, গিল্ড মানে সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ। যা টলিউডের পক্ষে মঙ্গলজনক। তিনি তাই ‘লাইট কেয়ারটেকার’ কর্মীদের এই প্রচেষ্টাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
নতুন এই গিল্ড কি টালিগঞ্জের প্রযোজক, পরিচালকদের কপালে ভাঁজ ফেলছে? অন্যান্য গিল্ডের মতো এই গিল্ড ফেডারেশনের বৃহত্তর ছাতার নীচে এলে আগামীতে এর কোনও সদস্য বঞ্চনার শিকার হলে আশঙ্কা, সংগঠন তাঁর হয়ে একজোটে লড়তে পারে। তা হলে সত্যিই কি প্রযোজনা সংস্থা বা পরিচালকদের মাথায় আরও একটি চিন্তা আসবে ভবিষ্যতে? জানতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল পরিচালক রাজ চক্রবর্তী, অতনু ঘোষ, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। প্রযোজকদের তালিকায় ছিলেন অতনু রায়চৌধুরী, শ্যামসুন্দর দে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে এই মুহূর্তে কেউই সে ভাবে এই বিষয়ে বিশদে না জেনে মুখ খুলতে রাজি নন। অতনু ছাড়া বাকি পরিচালকেরা ফোনে অধরা। বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন প্রযোজকেরাও।