সুশান্তের জীবনে বসন্ত এসেছে বারবার। সেই বসন্তের নাম কখনও অঙ্কিতা লোখন্ডে, কখনও রিয়া চক্রবর্তী, আবার কখনও বা কৃতি শ্যানন। ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের খবর, কৃতির প্রতি ভালবাসাই নাকি অঙ্কিতার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল সুশান্তকে। কেন?
আদপে নয়াদিল্লির মেয়ে কৃতির জন্ম হয় ১৯৯০ সালে। প্রথমে দিল্লি পাবলিক স্কুলে এবং পরে জেপি ইনস্টিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি থেকে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন তিনি।
ছোট থেকেই কৃতি ছিলেন বেশ মেধাবী। অন্যদিকে সুশান্তও পড়াশোনায় ছিলেন তুখোড়। সে জন্যই কি তাঁদের ইকুয়েশন ক্লিক করে গিয়েছিল?
কৃতির বাবা ছিলেন চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট। মা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা। কৃতির সিনেমা জগতে আসা প্রায় হঠাৎ করেই। বিজ্ঞাপনের কাজ দিয়ে গ্ল্যামার জগতে প্রবেশ তাঁর। সিনেমার জগতে তাঁর হাতেখড়ি কিন্তু বলিউড ছবি দিয়ে নয়। ২০১৪ সালে তেলুগু ছবি দিয়েই মডেল থেকে অভিনেত্রী হন কৃতি।
ওই বছরই ‘হিরোপন্তি’ ছবি দিয়ে বলিউডে ডেবিঊ হয় তাঁর। বিপরীতে টাইগার শ্রফ। বক্স অফিসে মাঝারি আয় হয় এই ছবির। যদিও ‘হিরোপন্তি’-র আগেই বলি-ডেবিউ হতে পারত তাঁর। কৃতি নিজেই একবার এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, এক স্টারকিডের জন্যই নাকি সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল তাঁর।
কৃতির বদলে নিয়ে নেওয়া হয়েছিল সেই স্টারকিডকে। কিন্তু সেই স্টারকিডের এবং ছবি নাম আজও প্রকাশ্যে আনেননি কৃতি। অভিনয়ের পাশাপাশি কৃতি একজন কত্থক নৃত্য শিল্পীও।
কৃতির জীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছবি হল ‘দিলওয়ালে’। বিপরীতে বরুণ ধওয়ন। ওই ছবিই ছিল কাজল এবং শাহরুখ জুটির মেগা প্রত্যাবর্তন। তাই ছবি নিয়ে হাইপ ছিল প্রথম থেকেই। ওই ছবি সমালোচকদের কাছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছিল।
সাল ২০১৭। কৃতি অফার পান ‘রাবতা’ ছবির । বিপরীতে সুশান্ত সিংহ রাজপুত। বক্স অফিসে সেই ছবি একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়ে। কিন্তু রিল রসায়ন ক্লিক করে গিয়েছিল রিয়েলে।সুশান্ত ভুললেন ৬ বছরের সঙ্গিনী অঙ্কিতাকেও। যে অঙ্কিতা সুশান্তকে পাবেন বলে প্রায় কাজ ছেড়ে সংসারী হয়ে উঠছিলেন।
যদিও নিজেদের সম্পর্কের কথা কখনও স্বীকার করেননি সুশান্ত-কৃতি। কিন্তু সুশান্তের গাড়িতে লংড্রাইভ, রেস্তরাঁ...অনেক জায়গাতেই একসঙ্গে দেখা যেত তাঁদের।
কৃতির জীবনে অন্যতম হিট ছবি ‘বরেলি কি বরফি’। এই ছবিতে তাঁর অভিনয় নজর কাড়ে দর্শকের। এ ছাড়াও এই ছয় বছরে ‘লুকা ছুপি’, ‘পানিপথ’, ‘কলঙ্ক’-সহ বেশ কিছ ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। পেয়েছেন ফিল্ম ফেয়ার, দাদা সাহেব ফালকে-সহ বেশ কিছু নামী দাবি পুরস্কার।
পাঁচ দিন আগে সুশান্তের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে এলেও সুশান্তকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটাও পোস্ট করেননি কৃতি। সে নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছিল। প্রেমের গুঞ্জন না হয় ছেড়ে দেওয়াই গেল, সহকর্মী হিসেবেও কি একটা পোস্ট প্রাপ্য নয় সুশান্তের, প্রশ্ন তুলেছিলেন নেটাগরিকদের একাংশ।
কিন্তু সুশান্তের শেষকৃত্যে বলিউডের তাবড় সেলেবরা যখন আসার প্রয়োজন মনে করেননি, তখন কৃতি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ফিরে এসে সুশান্তকে নিয়ে এক আবেগঘন পোস্টও করেন তিনি।
তিনি লেখেন, “সুশ, জানতাম তোমার মন যেমন তোমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু তেমনই তোমার ভীষণ, ভী-ষ-ণ খারাপ শত্রু। তোমার সেই মন আজ আমায় ভেঙে দিয়ে চলে গেল! যেই তুমি নেই শুনলাম, মনে হল আমার হৃদয়ের আধখানা অংশ হারিয়ে ফেললাম!”
তাঁর কান্না জড়ানো আপশোস, “তুমি যদি সবাইকে এ ভাবে না সরিয়ে দিতে...আমি যদি যন্ত্রণায় ভেঙে টুকরো হয়ে ছড়িয়ে যাওয়া তোমার মন জোড়া লাগাতে পারতাম...যদি তোমার ব্যথার প্রলেপ হয়ে উঠতে পারতাম!”
সুশান্ত নেই, কিন্তু তাঁর সঙ্গে কাটান নানা মুহূর্তে সাক্ষী হয়ে থেকে গেলেন কৃতি শ্যানন, যাঁর আসন্ন ছবি ‘মিমি’ মুক্তি পেতে পারে এ বছরই।