হাওড়ার বালিতে নিজের বাড়িতেই জীবনাবসান হয় তাঁর।
প্রয়াত বাংলা পুরাতনী গানের পথিকৃৎ চণ্ডীদাস মাল। বয়স হয়েছিল প্রায় ৯২ বছর। বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটায় হাওড়ার বালিতে নিজের বাড়িতেই জীবনাবসান হয় তাঁর। ওই বাড়িতেই সস্ত্রীক থাকতেন শিল্পী। একমাত্র ছেলে কর্মসূত্রে দিল্লির বাসিন্দা।
প্রয়াত শিল্পীর সুযোগ্য ছাত্রী চন্দ্রাবলী রুদ্র আনন্দবাজার অনলাইনকে জানান, দীর্ঘ দিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থততায় ভুগছিলেন তাঁর গানের গুরুজি। একই সঙ্গে চন্দ্রাবলীর আক্ষেপ, যে স্বীকৃতি-সম্মান পাওয়ার কথা ছিল, তা না পেয়েই চলে গেলেন বাংলা পুরাতনী গানের দুনিয়ার এই মহীরুহ। চণ্ডীদাসবাবুর মৃত্যুতে দাঁড়ি পড়ল গানের জগতের এক গুরুক্বপূর্ণ অধ্যায়ে।
শান্তিনিকেতনে গীতা ঘটকের গলায় আগমনী শুনে গানের এই বিশেষ ধারার প্রতি আগ্রহ জন্মায় চন্দ্রাবলীর। এর পরেই তাঁর মা-বাবা তাঁকে নিয়ে যান চণ্ডীদাসবাবুর কাছে। চন্দ্রাবলীর কথায়, ‘‘আমি তখন ভীষণ ছোট। তাই প্রথমে গুরুজি আমায় শেখাতে চাননি। অনেক পীড়াপীড়িতে তিনি রাজি হন। প্রথমে ভজন দিয়ে শুরু। কিছু দিনের মধ্যেই আমার গায়কিতে আশ্বস্ত হয়ে টপ্পা, আগমনী গান শেখাতে শুরু করেন।’’
গীতা ঘটকও ছিলেন চণ্ডীদাসবাবুর ছাত্রী। গীতার মতোই গানের দুনিয়ায় আরও একাধিক উজ্জ্বল নক্ষত্রের জন্ম দিয়েছেন প্রবীণ শিল্পী। তালিকায় রয়েছেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, লোপামুদ্রা মিত্র, প্রয়াত সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ-র মতো নামীদামি ব্যক্তিত্বেরা। চন্দ্রাবলী আরও জানিয়েছেন, গুরুজির তত্ত্বাবধানেই তিনি আকাশবাণীর পরীক্ষায় ‘ডবল প্রমোশন’ এবং ‘এ গ্রেড’ পেয়েছিলেন। জীবনের প্রথম অনুষ্ঠানে তাঁকে হারমোনিয়ামে সঙ্গত করেছিলেন তাঁর মাস্টারমশায়। রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমির প্রতিযোগিতায় ভাল ফলের কৃতিত্বও শিল্পী তাঁর গুরুজিকেই দিয়েছেন।
টানা ৩০ বছর চণ্ডীদাস মালের কাছে গান শিখেছেন চন্দ্রাবলী। সেই সুবাদে একটা সময়ের পরে অনায়াসে তাঁর বাবার মতো হয়ে উঠেছিলেন প্রবীণ শিল্পী। চন্দ্রাবলীর মেয়ে দীপাবলিও তাঁর মায়ের গান শেখার সময়ে নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন। প্রয়াত শিল্পীর গাওয়া বহু গান শুনে শুনে তুলে নিয়েছেন তিনিও। নানা অনুষ্ঠান, প্রতিযোগিতায় সেই গান শুনিয়ে প্রশংসিতও হয়েছেন।