ছোটবেলায় ‘ডাকঘর’এর গল্প শুনতে-শুনতে হঠাৎ পাশের ঘরে গিয়ে হু-হু করে মেয়ের কী কান্না! ‘কী হয়েছে রে?’ জি়জ্ঞেস করাতে মেয়ে বলেছিল, ‘‘পেটে ব্যথা করছে খুব!’’ তার গল্প-বলিয়ে মাসি তৃপ্তি মিত্র কিন্তু ততক্ষণে ধরে ফেলেছিলেন, এ কান্না গল্পের অমলের জন্য! বাকিটা বাহানা। তার পরই তো বহুরূপী-তে ‘অমল’ করার ডাক। বয়স তখন সবে সাড়ে পাঁচ।
মঞ্চে অবশ্য ওঠা তারও আগে বাবা শ্যামল ঘোষালের দল অফবিট-এর ‘লাস্ট পোস্ট’ নাটকে। সেখানেও এত্তোটুকু মেয়েকে যাঁরা অভিনয় করতে দেখেছেন, আজও বলেন, অত শিশুবেলায় থিয়েটারে ওঁর ইনভল্ভমেন্ট কিছুতেই ভোলার নয়। এই ইনভল্ভমেন্টই চৈতীকে দিয়ে ‘থিয়েটার খেরাপি’-তে ডেকে আনল! থিয়েটার থেরাপি? সেটা কি? বলা যাক, তার আগে একটু ধরতাই লাগে।
‘ডাকঘর’-এর পর বহুরূপী-র ঘরে মেয়ের যাওয়া-আসাও গেল বেড়ে। চার পাশে বিখ্যাত সব মানুষ! শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্র....আরও কত জন! তবু মেয়ের যেন থোড়াই কেয়ার! কাউকে ভয়ডর বলে কিচ্ছুটি নেই। তখন থেকেই তার মনে হত, থিয়েটার যেন কী একটা খোরাক দেয় মনে। ভিতরে-ভিতরে ছটফটানি থেমে যায়। দিনমানের রাগ-অভিমান-কষ্ট জুড়িয়ে ফুরফুরে আনন্দে ভাসিয়ে দেয়। কী যে হালকা লাগে শরীর-মনে! থিয়েটার শুধু মঞ্চের জন্য নয়, জীবনের জন্যও!
ভাবনাটা রয়েই গিয়েছিল, কিন্তু গুছিয়ে ওঠা আর হচ্ছিল কই! তত দিন যে লোকের চোখে তিনি কখনও ‘পরমা’র এষা, ‘এক আকাশের নীচে’র মাধবী, ‘অন্তরালে’র তনিমা, নয়তো ‘রক্তকরবী’র নন্দিনী হয়ে গিয়েছেন।
চৈতী ঘোষাল এ বার ফিরে গিয়েছেন সেই পুরনো থিয়েটারি চিন্তায়। একটি সংস্থার প্রায় জনা পনেরো মানুষজন নিয়ে শুরু করেছেন থিয়েটার দিয়ে মন ভাল করা, শরীর চনমনে করার ওয়ার্কশপ, থিয়েটার থেরাপি! তার সঙ্গে ভাবনাতে ঝড়ের হাওয়া লাগিয়ে দেওয়াও!
সদস্য যাঁরা, তাঁরা তিরিশ থেকে পঁয়ষট্টির কোঠায়। কস্মিনকালেও থিয়েটার করবেন, ভাবেনওনি।
অথচ তুমুল উৎসাহে এখন তাঁরাই নাটকের দল গড়তে চান। থিয়েটার ওঁদের বাঁচাটাই বদলে দিয়েছে। ৪ মে জ্ঞানমঞ্চে স্প্যানিশ নাট্যকার ফেডেরিক গার্সিয়া লোরকার ‘দ্য হাউস অব বার্নাডা’ অবলম্বনে একটি নাটকও করবেন তাঁরা, ‘ভার্জিন মেরি’ নামে।
ও দিকে সিরিয়ালের অফার দেদার ফিরিয়ে দিদিমণি চৈতী এখন ডুবে আছেন এই স্বপ্ন-প্রকল্পে!
এ কাজে যে তাঁর বড় তৃপ্তি!