স্বজনপোষণ বিতর্কে মুখ খুলেছেন সেলিনা জেটলিও। প্রাক্তন ভারতসুন্দরীর অভিযোগ, ইন্ডাস্ট্রিতে সবাইকে খুশি করতে না পেরেই তাঁকে সরে যেতে হয়েছে। অপূর্ণ থেকে গিয়েছে আরও কাজ করার ইচ্ছে।
২০০৩ থেকে ২০১২ অবধি বলিউডে কাজ করেছেন সেলিনা। বিয়ের পরে এখন তিনি থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। বলিউড এবং কেরিয়ার ঘিরে হতাশার জন্যই নাকি বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। জানিয়েছেন, তিন সন্তানের মা, সেলিনা।
নিজেকে প্রমাণ করতে করতে নাকি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন সেলিনা। তাই ভেবেছিলেন একটা ব্রেক নেওয়ার পরে ফিরবেন। সেটাই করেছেন তিনি। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় থেকে বলিউডে কামব্যাক করা খুব একটা সহজ ছিল না। সম্প্রতি শর্ট ফিল্ম ‘সিজনস গ্রিটিংস’-এ অভিনয় করেছেন সেলিনা।
সেলিনার বাবা ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল। মা আফগান বংশোদ্ভূত। তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর নার্স। সেলিনার ভাইও কর্মরত সেনাবাহিনীতে। এ রকম একটি পরিবারের মেয়ে হয়ে সেলিনা বেছে নিয়েছিলেন মডেলিংকেই।
যদিও দেশের বিভিন্ন শহরে শৈশব কাটানো সেলিনার ইচ্ছে ছিল পাইলট বা চিকিৎসক হওয়া। কিন্তু বড় হয়ে আঁকড়ে ধরেন মডেলিংয়ের স্বপ্নকেই। তাঁর কলেজজীবনের বড় অংশ কেটেছিল কলকাতায়।
স্নাতক হওয়ার পরে কিছু দিন তিনি একটি মোবাইল নির্মাতা সংস্থায় মার্কেটিং বিভাগে কাজ করেছিলেন। কিন্তু ২০০১-এ ‘মিস ইন্ডিয়া’ হওয়ার পরে মডেলিং-এ মন দেন। মিস ইউনিভার্স-এ পঞ্চম স্থান পেয়েছিলেন তিনি।
২০০৩-এ নায়িকা হিসেবে সেলিনার আত্মপ্রকাশ। ফিরোজ খানের ছবি ‘জানাশিন’-এ তিনি অভিনয় করেন ফরদিন খানের বিপরীতে। বক্স অফিসে মাঝারি হিট হয়েছিল ছবিটি।
তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য বাকি ছবি হল ‘নো এন্ট্রি’, ‘জিন্দা’, ‘অপনা সপনা মানি মানি’, ‘শকালাকা বুম বুম’, ‘হে বেবি’, ‘গোলমাল রিটার্নস’ এবং ‘হেলো ডার্লিং’।
কামব্যাকের আগে সেলিনার শেষ ছবি ‘উইল ইউ ম্যারি মি’ মুক্তি পেয়েছিল ২০১২-তে। তার পর দীর্ঘ আট বছর পরে আবার অভিনয় করলেন সেলিনা। ছবির পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনেও পরিচিত মুখ সেলিনা।
অস্ট্রেলিয়ার হোটেল ব্যবসায়ী পিটার হ্যাগকে ২০১১ সালে বিয়ে করেন সেলিনা। ২০১২-য় জন্ম হয় তাঁদের যমজ সন্তানের। দুই ছেলের নাম সেলিনা রাখেন উইন্সটন এবং বিরাজ।
পাঁচ বছর পরে আরও এক বার যমজ পুত্রসন্তানের মা হন সেলিনা। এ বার তাঁর দুই ছেলের নাম রাখেন আর্থার এবং শামসের। ছোট ছেলে শামসের হৃদরোগে মারা গিয়েছে। সন্তানশোকে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন সেলিনা।
এক সাক্ষাৎকারে সেলিনা জানিয়েছেন, তাঁকে নায়িকা হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন তাঁর মা। ফলে লাইট সাউন্ড ক্যামেরার জগতে এসে তিনি নিজের সঙ্গে মায়ের স্বপ্নও পূর্ণ করেছেন। এর পর ২০১৮-এ কয়েক মাসের ব্যবধানে প্রয়াত হন সেলিনার বাবা-মা। তাঁর বাবা আক্রান্ত হয়েছিলেন হৃদরোগে। মা ছিলেন ক্যানসার রোগী। পর পর স্বজনবিয়োগের শোকে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন সেলিনা।
তার পরেও যেটুকু কাজ করার ইচ্ছে ছিল, তা রয়ে গিয়েছে অধরা। আক্ষেপ সেলিনার। তাঁর খেদ, বহিরাগত হওয়ার জন্যই টিনসেল টাউনে বেশি দূর এগোতে পারেননি তিনি।
তবুও হাতছানি দেয় ফেলে আসা দিন। স্বপ্নপূরণের বৃত্তে আরও এক বার ফিরে এসেছেন সেলিনা। স্বজনপোষণ, জীবনের শোক, ভৌগোলিক দূরত্ব— সব প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েই ‘অ্যাকশন’ শব্দটা আবার শুনতে চান সেলিনা।