Emtertainment News

‘টলিউডের কোন ক্যাম্পে কী ক্যাম্পেনিং করতে হয় সেটাই বুঝি না’

তিনি এ বার ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের স্বামী। ‘ধারাস্নান’-এ ঠিক এই চরিত্রটায় পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী অফার করেছিলেন কাঞ্চন মল্লিককে। আগামী ৩০ মার্চ ছবি রিলিজ। তার আগে ব্যাক স্টোরি শেয়ার করলেন কাঞ্চন। সেটাই মেন কোর্স। ডেজার্টের মেনু, ইন্ডাস্ট্রির ‘ক্যাম্প’ সংস্কৃতি, বান্ধবী…তিনি এ বার ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের স্বামী। ‘ধারাস্নান’-এ ঠিক এই চরিত্রটায় পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী অফার করেছিলেন কাঞ্চন মল্লিককে। আগামী ৩০ মার্চ ছবি রিলিজ। তার আগে ব্যাক স্টোরি শেয়ার করলেন কাঞ্চন। সেটাই মেন কোর্স। ডেজার্টের মেনু, ইন্ডাস্ট্রির ‘ক্যাম্প’ সংস্কৃতি, বান্ধবী…

Advertisement

স্বরলিপি ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৮ ১২:২১
Share:

কাঞ্চন মল্লিক।

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গে আপনার বিয়েটা তা হলে দিয়েই দিলেন হরনাথ চক্রবর্তী।
কাঞ্চন: (হাসি) ঋতুর সঙ্গে বিয়ে দেওয়াটা তো চাপের ব্যাপার। কিন্তু হরদা সেটা পেরেছেন। হরদা আমার জীবনে অনেক কিছু করেছেন।

Advertisement

যেমন?
কাঞ্চন: তা হলে শুরুটা বলি।

অবশ্যই।
কাঞ্চন: ১৯৯৯। তখন আমাকে দেখলে মনে হত ড্রাগ রিহ্যাব থেকে বেরিয়েছি। তেমন একটা ছেলে যে শুধু থিয়েটার করে আর ‘জনতা এক্সপ্রেস’-এর মতো একটা প্রোগ্রাম করে। হরদাই সেই লোক যিনি তখন থিয়েটারের ছেলেটাকে এনে ব্রেক দেওয়ার চেষ্টা করেন।

Advertisement

চেষ্টা কেন বলছেন?
কাঞ্চন: প্রথম ছবিতে আমাকে ডাকা হয়েছিল। তখন শ্রীকান্ত মোহতাকে চিনতাম না। সাদা চুল আর কপালে একটা ছোট্ট টিপের হরদাকেই ভেবেছিলাম শ্রীকান্ত মোহতা। হরদা বলেছিলেন, আমি একটা ছবি করছি, তোমার কথা ভেবেছি। বৌদি মানে হরদার স্ত্রী সাজেস্ট করেছিলেন আমার নাম। কারণ তিনি ‘জনতা এক্সপ্রেস’-এর ডেলি ভিউয়ার ছিলেন। আমাকে হরদা বলেছিল, তোমাকে আমি জানাব। পরে আর জানাননি।

আরও পড়ুন, ‘হয়তো রাজনীতির শিকার হয়েছি কোথাও...’

তার পর?
কাঞ্চন: তখন আমি ছোটখাটো কাজ করি। একদিন এনটিওয়ানে গিয়েছি শুটিং করতে। দেখি হরদা দাঁড়িয়ে আছেন। স্ট্রেট গিয়ে বলেছিলাম, আপনি আমাকে নেবেন বলেছিলেন। নিলেন তো না। না নিলে জানিয়ে দিতে পারতেন। না বললে কোনও অসুবিধে হত না। সাহস করে বলেছিলাম।

হরনাথ চক্রবর্তীর উত্তর কী ছিল?
কাঞ্চন: উনি বলেছিলেন, কেন নিলাম না আমাকে জিজ্ঞেস করো না। এটুকু কথা দিলাম। এ বারে আমি যে ছবি করব, তাতে তুমি থাকবে। আমি মনে মনে ভাবলাম, ডিরেক্টরা যেমন বলেন, তেমনই বললেন, আশা দিলেন। কিন্তু দেখলাম না, পরের ছবিতে আমার ডাক পড়ল। সেটা ‘সাথী’।

সেই শুরু?
কাঞ্চন: হ্যাঁ। তখন হরদার ব্যানারে কর্মাশিয়াল ছবি মানে একটা বিরাট ব্যাপার। আমি সিলেক্টেড হওয়ার পর আমাদের যে ব্যাচ অর্থাত্ রুদ্র, লামা, নীল— এই ব্যাচে আমি একটা আলোচিত বিষয়। বাবা, তুই হরদার ছবি করছিস! সেই ছবি সুপারহিট হয়। তারপর থেকে হরদার পর পর ছবি করেছি।

‘ধারাস্নান’ কত নম্বর?
কাঞ্চন: হরদার সঙ্গে এটা আমার ১২ নম্বর ছবি। হরদা কথা রেখেছিলেন। কথা না রাখলে কর্মাশিয়াল ছবিতে কাঞ্চন মল্লিক কতটা কী হতে পারত, আমি জানি না।

এই ছবিতে পোস্টারে আপনি আর ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
কাঞ্চন: (হাসতে হাসতে) আমার এক স্কুলের বন্ধু পোস্টার দেখে বলেছে, এ কী রে ঋতুপর্ণা হিরোইন, তোর মুখ ফাটা, রক্ত বেরোচ্ছে। মেরে মুখ ফাটিয়ে দিয়েছে তো। এই জন্য বলি, এমন বড় হিরোইনের সঙ্গে পার্ট করিস না।

সত্যি বলুন তো, অনেকের ভিড়ে পোস্টারে একটু জায়গা পাওয়া থেকে আপনাকে নিয়ে পোস্টার—
কাঞ্চন: (প্রশ্ন থামিয়ে দিয়ে) আমি এই পোস্টারটা ল্যামিনেট করতে দিয়েছি। জীবনে কোনও দিন এটা করিনি। আমাকে হরদাই প্রথম বলেছিলেন, যখন দেখবি অতগুলো নামের পাশে তোর নাম আছে, তখন বুঝবি তোর নাম বিক্রি হচ্ছে। ফলে পোস্টারে বড় করে আমার মুখ, এ ভাল লাগাটা বোঝানো মুশকিল।

এই ছবিতে চেনা কমেডি থেকে বেরিয়ে একদম অন্যরকম আপনার চরিত্র, পেয়ে প্রথম কী মনে হয়েছিল?
কাঞ্চন: গল্পটা যখন শুনলাম, চরিত্রটা শুনলাম, তখন মনে হল এটা আউট অফ মাই ব্যাগ।

আরও পড়ুন, পুরনো প্রেম থেকে কী শিখলেন ইমন?

নিজেকে প্রশ্ন করেছিলেন, কেন আমি?
কাঞ্চন: না! ভেবেছিলাম, কেন আমি নয়? কারণ আমি তো অভুক্ত। এই চরিত্রটা আমার কাছে বিরিয়ানির মতো। আমি তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছিলাম। দেখুন, কমেডি, আমার চেহারা সব কিছু নিয়ে লোকের অ্যাক্সেপটেন্স যখন তৈরি হল, তখন আমি জানি ক্যামেরার সামনে কী করতে হবে। কিন্তু আসল অক্সিজেনটা পেতাম থিয়েটারে। সৃজিত আমার ‘ম্যাকবেথ’ দেখে বলেছিল, অসাধারণ। আমি বলেছিলাম, তুমি যখন ম্যাকবেথ ছবিটা বানাবে তখন কিন্তু সাড়ে ছ’ফিট লম্বা, প্রিন্সেপ ঘাটের থামের মতো চেহারাওয়ালা একটা ছেলেকে নেবে। তখন আর আমায় নেবে না। যদিও সৃজিত ‘রাজকাহিনি’তে একটা ভাল রোল দিয়েছিল। তাই হরদা যখন এই রোলটা দিল আমি ভাবলাম, আমি নয় কেন?

উল্টো দিকে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
কাঞ্চন: হুম। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে সামলাতে গেলে ইউ হ্যাভ টু বি ভেরি ইকুইপড। পেয়ারাবাগানের পাঁচু হলে হবে না।

কী ভাবে ইকুইপড হয়েছিলেন?
কাঞ্চন: বডি ল্যাঙ্গুয়েজ চেঞ্জ করেছিলাম। আসলে এটা এমন একটা চরিত্র, যে সংসারে কোথাও এগজিস্ট করে না। একেবারে ফালতু। ডিপ্রেসড, শারীরিক ভাবে অক্ষম। যে মাথা তুলে কারও সামনে কথা পর্যন্ত বলতে পারে না। এমনকী আমি ডাবিংয়ের দিন সকালে না খেয়ে গিয়েছিলাম। না খেলে যে গলাটা বেরোয়, সেটা কাজে লাগাতে চেয়েছিলাম।


‘ধারাস্নান’-এর একটি দৃশ্যে কাঞ্চন।

ঋতুপর্ণার সঙ্গে অনস্ক্রিন টক্কর তা হলে ভালই জমেছিল।
কাঞ্চন: একটা ঘটনা বললে বোধহয় বুঝতে পারবেন।

বলুন প্লিজ…
কাঞ্চন: ‘ধারাস্নান’-এর প্রথম দিনের শুটিং। ফার্স্ট সিন। প্রায় আড়াই পাতার একটা সিন। পুরোটা ঋতুর। সেখানে শুধু আমার আসা, দাঁড়ানো, মুখটা নীচু করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেওয়া। কোনও ডায়লগ নেই। ঋতু ফ্লোরে এল। সিন দেখল। হরদার অ্যাসিস্টান্টকে বলল, পাপ্পু এত ডায়লগ আমি মুখস্থ করতে পারব না। তুই প্রম্পট করিস। আমাকে বলল, বাবা মেকআপে তো একদম চেঞ্জ। চলো, মনিটর করব। এ বার মাস্টার শট নেওয়া হচ্ছে। প্রথম তিনটে সংলাপ, আমি ঢুকলাম। ঢুকে দাঁড়ালাম। হঠাত্ই ঋতু বলল, দাঁড়াও, দাঁড়াও, এক মিনিট। থামিয়ে দিল। আমার কাছে চলে এল। বলল, তুমি এমন বডি ল্যাঙ্গুয়েজ চেঞ্জ করে দিয়েছ! তার পর হরদাকে বলল, আমি ১০ মিনিট নেব। এটা মুখস্থ না করে যাব না। বলে, দরজা বন্ধ করে ভিতরে ঢুকে গেল। ১০ মিনিট বাদে বেরিয়ে যে শটটা দিল, সেটা পুরো বিরাট কোহালি।

প্রথমবার মনিটর করার সময় তা হলে আপনাকে কি ঋতুপর্ণা আন্ডার এস্টিমেট করেছিলেন?
কাঞ্চন: (হাসি) মে বি। আসলে এত বছর ধরে এত ছবি করার পর, একটা নতুন ছবি, যাই গল্প হোক, বিষয়টা হয়ে যায়, আমার কাছে সবরকম রান্নার উপকরণ আছে। আমি শুক্তোও পারি, কন্টিনেন্টালও পারি। কিন্তু অভিনয় যে একার নয়, আর এটাতে যে টেবিল টেনিস হতে হয় সেটা সে দিন ও প্রমাণ করে দিল। আমার কাছে ঋতুর সম্মানটাও বেড়ে গেল অনেকটা। ওই যে রাশ ধরল, তখনই আমি জানি ছবিটা ফাইনালি কী হবে।

আরও পড়ুন, ‘অপ্রিয় সত্যি বলে ফেললে প্রিয়পাত্রী হওয়া যায় না’

এই চরিত্রের কোনও রেফারেন্স ছিল?
কাঞ্চন: কোনও দিনই আমি রেফারেন্স ইউজ করতে পারি না। প্রত্যেকটা চরিত্রই সাদা ক্যানভাসের মতো। স্ক্রিপ্ট শুনতে শুনতে মনের মধ্যে একটা ছবি আঁকি। তার পর খুঁজতে শুরু করি। যে কোনও জায়গায়। সেই খোঁজাটা একান্ত ব্যক্তিগত। যদি খুঁজে পাই,আর আমার ক্যানভাসের সঙ্গে সেই রেফারেন্স মিলে যায় তখন তাকে অজান্তে চুরি করি। আমি মনে করি, একজন অভিনেতার চোর হওয়া খুব দরকার। যে চরিত্র চুরি করে। ম্যানারিজম চুরি করে। সেই চোরটাকে খুব লালন করি নিজের ভিতর।

‘ধারাস্নান’-এ অন্য কাঞ্চনকে দেখবেন দর্শক। আপনি যে এই ধরনের চরিত্রে অক্সিজেন পান, আরও বেশি করে এ ধরনের চরিত্র করতে চান, সে কথা পরিচালকদের বলেছেন?
কাঞ্চন: বলেছি। কিছু অরণ্যে রোদন হয়। আর আর একটা ব্যাপার আগেও ছিল, এখনও আছে। ডিরেক্টরদের, অ্যাক্টরদের ক্যাম্প থাকে। সত্যজিত্ রায়ের একটা ক্যাম্প, তপন সিংহের আবার আলাদা ক্যাম্প।

আর এখন?
কাঞ্চন: (চোখ বড় করে) এখন তো ক্যাম্পাস। শিবপ্রসাদের ছবি ভাবুন, প্রত্যেকটা ছবিতেই আশপাশটা এক। সৃজিত, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় সকলের ক্যাম্প রয়েছে।

আপনি কোন ক্যাম্পে?
কাঞ্চন: (হাসি) আমি বুঝতেই পারি না, আমি কোন ক্যাম্পে। কোন ক্যাম্পে থাকতে গেলে কী ক্যাম্পেনিং করতে হয় সেটাই বুঝতে পারি না। তবে কৌশিক, কমলেশ্বরের ক্যাম্পে আমি নেই। সৃজিতের ক্যাম্পের মেম্বারশিপে আছি।

মানে ক্যাম্পে নন, মেম্বারশিপে?
কাঞ্চন: কী করে ক্যাম্পে রয়েছি বলব বলুন? একটা ‘রাজকাহিনি’ দিল। বিরাট রোল। একটা ‘জুলফিকার’। ওই ছবিটার মাঝখানে বলেছিলাম, আমি কি গ্লোরিফায়েড এক্সট্রা? ‘এক যে ছিল রাজা’ না কি যেন, বলেছিল, সন্ন্যাসী হয়ে ছাঙ্গুতে ফেব্রুয়ারি মাসে ল্যাঙট পরে যেতে হবে। আমি বলেছিলাম, আমার ছেলের বয়স মাত্র পাঁচ। ওখানে জমে গেলে, পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করারও সুযোগ পাবে না। আমি নেই।

এত ক্যাম্পের ভিড়ে ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার বন্ধু কে?
কাঞ্চন: (অট্টহাসি) বাবার মৃত্যুর পর যারা শ্মশান বন্ধু হয়েছিল, তারা আমার বন্ধু। যাদের সঙ্গে আড্ডা মারলে পরের ছবি নিয়ে আলোচনা হয় না, তারা আমার বন্ধু। কাউকে ছোট করছি না। বলছি না, কেউ আমার শত্রু। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে ইজি কমিউনিকেট করতে পারি, যিশু, জিতের সঙ্গে। আর রুদ্রনীলের সঙ্গে বন্ধুত্বের প্রেম আছে।

আরও পড়ুন, বিয়ে করে কি কেরিয়ারে পিছিয়ে পড়লেন? মুখ খুললেন সমতা

এই তালিকায় কোনও মহিলা নেই?
কাঞ্চন: মহিলাদের নাম ইচ্ছে করেই বলছি না। লাইন অনেক বড় হয়ে যাবে। মহিলাদের ক্ষেত্রে এমনিতেই তো আমি হ্যান্ডিক্যাপ্‌ড কোটায় পড়ি। সে জন্য কোনও চাপ নেই।

এটা কি নির্দিষ্ট কারও জন্য বললেন?
কাঞ্চন: সবার জন্যই বললাম। আপনাদের কাগজেই তো ছাপে। নেতাজী অন্তর্ধানেরও বোধহয় অতবড় ছবি ছাপা হয় না। যে ভাবে বান্ধবীর সঙ্গে ছিনি এবং মিনি খেলার স্টোরি ছাপা হয়। ওটাতে বিশ্বাসী নই। বন্ধুর সঙ্গে খুব পার্সোনাল কথা শেয়ার হয়। আমি পার্সোনালটাকে পাবলিক করতে চাই না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement