আপনার প্রায় ১০ বছর হয়ে গেল বলিউডে। শুরুটা কেমন ছিল?
পরমা: সত্যি, ১০ বছর হয়ে গেল। কলকাতা থেকে মুম্বইতে প্রথম অ্যাসিস্ট করতে গিয়েছিলাম। তারপর আবার কলকাতায় ফিরে যাই।
কলকাতায় কার কাছে গান শিখেছেন?
পরমা: মূলত মায়ের কাছে শিখেছি। মা ক্লাসিক্যাল গাইতেন। খেয়াল, ঠুংরি, গজল…। আর বাড়িতে ছোট থেকেই গানের চর্চা ছিল। ডোভার লেন মিউজিক কনসার্ট দেখতাম। অ্যাংলো ইন্ডিয়ান স্কুলে পড়ার সুবাদে ওয়েস্টার্ন মিউজিক শুনেছি।
স্কুল, কলেজের পর সোজা মুম্বই?
পরমা: হ্যাঁ, চলে এসেছিলাম। এখানে বাংলা ভয়েস ওভার দিতাম। বিজ্ঞাপনের কাজ করতাম। জিঙ্গলস গাইতাম।
কলকাতায় থাকলেন না কেন?
পরমা: আসলে মুম্বইতে আসার একটা স্বপ্ন ছিল।
সেখান থেকেই শুরু?
পরমা: হুম। প্রথমে ইরফান খান, কঙ্কনা সেনশর্মার ‘দিল কবাডি’ নামের একটা সিনেমায় একটা সিচুয়েশনাল গান গেয়েছিলাম। পরে রামগোপাল বর্মার ছবি ‘ডিপার্টমেন্ট’-এ ‘ড্যান ড্যান চিনি’ নামের একটা পাওয়ার প্যাক্ট আইটেম নম্বার করেছিলাম। অমিতাভ বচ্চন, সঞ্জয় দত্ত ছিলেন সে ছবিতে। তখন থেকে মিউজিক কেরিয়ারটা সিরিয়াসলি নিতে শুরু করি। তার আগে শুধু গান গাইব এমনটা ভাবিনি। তবে মুম্বইতে প্রথমে আমার কোনও কনট্যাক্টই ছিল না।
আরও পড়ুন, রুক্মিণীর সঙ্গে কম্পিটিশন? কোয়েল বললেন…
সেকি! তা হলে কোনও কনট্যাক্ট ছাড়া সুযোগ পেলেন কী ভাবে?
পরমা: আমাকে প্রচুর ডেমো দিতে হয়েছে, লাইভ অডিশন দিতাম। আসলে লোকের মুখে মুখে অনেক নাম ছড়ায়। ধরুন, এমন অনেক সময় হয়, কেউ বলল অমুক ট্র্যাকটায় ওকে ট্রাই করতে পারিস। সে ভাবেই সুযোগ আসে।
এ ভাবে সুযোগ দেওয়ার বদলে অন্যরকম সুযোগ নেওয়ার অনেক ঘটনা শোনা যায়। আপনার অভিজ্ঞতা কী বলে?
পরমা: আমাকে কখনও কেউ আনকমর্ফটেবল ফিল করায়নি। আসলে এখানকার ইন্ডাস্ট্রি খুব কর্পোরেট। আগে হয়তো এ সব ব্যাপার হত। কিন্তু এখন কেউ কিছু বললে সরাসরি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দেওয়ার অপশন রয়েছে। সকলেরই ভয় আছে তো। আর তা ছাড়া এ সব অনেকটাই নিজের লাইফস্টাইলের ওপর ডিপেন্ড করে। নিজে ঠিক থাকলে কেউ এমন সুযোগ নিতে চাইবেন কেন? যদি কেউ শর্টকাট রাস্তা নিতে চায় তা হলে এ সব হতে পারে।
আপনাকে তো স্ট্রাগল করতে হয়েছে?
পরমা: অবশ্যই। তবে এভরিথিঙ ইজ আ ম্যাটার অব চান্স। জানেন, আমি যখন মুম্বই এসেছিলাম বা পাঁচ, ছ’বছর আগেও সিচুয়েশনটা অন্যরকম ছিল। এখন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সকলেই অনেক সহজে অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছে যেতে পারছে।
সেটা ভাল না খারাপ?
পরমা: অফকোর্স ভাল। আমি যখন শুরু করেছিলাম এমন সুযোগ তো ছিল না।
কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া আসার পরও নতুনরা সে ভাবে কোথায় সুযোগ পাচ্ছেন? সেই তো প্রতিষ্ঠিত গায়ক-গায়িকাদের দিয়েই গাওয়ানো হচ্ছে।
পরমা: এখানে বোধহয় একটা ইনসিকিওরিটি কাজ করে।
আরও পড়ুন, দ্বিতীয় ‘সন্তানের’ জন্মের আগে আকাশে উড়লেন দেব
মানে?
পরমা: দেখুন এখন এত সিঙ্গার, সবাই ভাল গাইছে। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি কোনও একজন সিঙ্গার ফেমাস হয়ে গেলে তাকে দিয়েই গাওয়াচ্ছে। ফলে পুরো গান না দিলে গাইব না, সেটা বলার জায়গায় হয়তো কেউ নেই। কেউ এটা নিয়ে কথাও বলছে না। সেই ইনসিকিওরিটি কথাই বলছি।
মহিলা হিসেবে কি স্ট্রাগলটা বেশি?
পরমা: শুধু বলিউডে নয়, মহিলাদের স্ট্রাগল সব জায়গায় বেশি। লাস্ট তিন-চার বছর ধরে তো মেয়েদের জন্য তেমন গান তৈরিই হচ্ছে না। গল্পও হিরো সেন্ট্রিক হচ্ছে। ফিমেল ভয়েসকে ফিল্ড হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ট্রেন্ড তো আস্তে আস্তে বাড়ছে।
রাগ হয়?
পরমা: ঠিক রাগ বলব না। আসলে বম্বের সঙ্গে লভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট হয়েছিল। ভেবেছিলাম যতই স্ট্রাগল করতে হোক, এখানেই থাকব।
আরও পড়ুন, রুক্মিণী নার্ভাস হলে কে হেল্প করত জানেন?
এখন প্রচুর পুরনো গান নতুন করে রিঅ্যারেঞ্জ করা হচ্ছে। সে ব্যাপারটা কী ভাবে দেখেন?
পরমা: দেখুন, অরিজিনাল কনটেন্ট তৈরির লোক নেই এটা তো হতে পারে না। কিন্তু এখন ইনস্ট্যান্ট হিট পাওয়ার একটা ট্রেন্ড চলছে। ল্যাক অফ ফেথ আসছে হয়তো। আমার মনে হয় একটা, দুটো রিমিক্স হতে পারে। কিন্তু সেটা ট্রেন্ড হওয়া ঠিক নয়।
আপনার কমপিটিটর কে?
পরমা: ওভাবে ভাবিনি কখনও। সব গানেরই অডিয়েন্স আছে। আমি কাউকে কমপিটিটর ভাবি না। বরং ইন্সপিরেশন পাই।
কার গান শুনে ইন্সপায়ার্ড হন?
পরমা: সুনিধি চৌহানের গান আমার খুব ভাল লাগে। আর কিশোর কুমার তো অলরাউন্ডার।
এমন সুন্দরী গায়িকার লভ লাইফ নিয়ে কিন্তু অডিয়েন্সের প্রবল কৌতূহল রয়েছে।
পরমা: হা হা হা…। অনিচ্ছাকৃত ভাবে হলেও আমি এখন সিঙ্গল।
লাই ডিটেক্টর কিন্তু রেড লাইট দেখাবে।
পরমা: হা হা…। সত্যি বলছি, আমি সিঙ্গল। কিন্তু প্রেমে পড়তে চাই। আগে বহুবার প্রেমে পড়েছি। ব্রেকআপও হয়েছে। অনেক বার হার্ট ব্রেক হয়েছে। অনেক সময় আমার দিক খেকে প্রেম ছিল, কখনও তাকে বলা হয়নি। এ সব সত্বেও আবার প্রেমে পড়তে চাই।