Birsa Dasgupta

বাড়ির লোক থাকলেই ছবিতে কাজ দিতে হবে কেন: বিরসা

প্রশ্ন তুললেন পরিচালক বিরসা দাশগুপ্ত। ‘বিবাহ অভিযান’-এর পর তাঁর নতুন ছবি ‘হাওয়া বন্দুক’ নিয়ে প্রথম মুখ খুললেন আনন্দবাজার ডিজিটালের সামনে।একটা ছবি শেষ করেই আর একটা ছবির কাজে হাত দেন। এখন দশ নম্বর ছবি করছেন। ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে আছেন কেমন করে? হুমম!

Advertisement

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৯ ০৯:০৪
Share:

বিরসা দাশগুপ্ত। ছবি সংগৃহীত।

একটা ছবি শেষ করেই আর একটা ছবির কাজে হাত দেন। এখন দশ নম্বর ছবি করছেন। ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে আছেন কেমন করে?

Advertisement

হুমম! আমি পলিটাকালি কারেক্ট থাকতে পারি না। ঠিকমতো সব ম্যানেজ করে চলতে পারি না। আমার ডিওপি থেকে অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর, সবাই বলে যে কথা বললে কাজ হবে সেটাই বল। আমি জানি ওরা ঠিক বলছে, কিন্তু আমার স্বভাব পুরো বদলে দেব কী করে? আমি যেমন ‘স্টুপিড’ হতে পারি না। আবার খুব ‘চালাক’ হতে পারি না। তবে আগে বেশি রিঅ্যাক্ট করতাম। এখন চুপ করে গেছি। টিকে থাকার বিষয়ে একটু বুঝিয়ে বলতে চাই। সবাই ছবি বানায়। যে অভিনয় করে সে ভাবে ছবি বানাব। যে লিখতে পারে সে ভাবে ছবি বানাব। যে ছবি তোলে সে-ও ভাবে ছবি বানাব। কিন্তু ডিরেকশন একটা স্পেশালাইজড আর্ট। একটা লেখাকে অডিও ভিসুয়ালি দেখাই পরিচালকের কাজ। এটা মনে হয় একটা ক্রাফ্ট। সেই ক্রাফ্টের জোরেই থেকে গেলাম।

আপনি আপনার মতো থাকতে পারেন কারণ বেঙ্কটেশের মতো বড় বাড়ি আপনার সহায়...

‘033’ আমার প্রথম ছবি যেখানে এসভিএফ ছিল না। ২০১২-য় আমার সময় ভাল যাচ্ছিল না। শ্রীকান্তদা, মণিদা আমায় ডাকে। আগের কাজের রেফারেন্স দেখে। বলেছিল, তোর যা করতে ইচ্ছে করছে কর। সেখান থেকেই ‘অভিশপ্ত নাইটি’। পলিটিক্যাল স্যাটায়ার। বাঙালির ঘোমটার তলায় খ্যামটা নাচের গল্প। শেষ সাত বছর ওঁদের সঙ্গে কাজ করছি। ওঁরা আমায় রেগুলার ছবি দেন। ছবির মর্যাদা দেন। আমি তো ফ্রিলান্সার। হ্যাঁ, কোনও নতুন চিন্তা মাথায় এলে ওঁদের আগে বলি। এ বার ওঁরা যদি না বলেন তা হলে অন্য কাউকে বলব। আমি নিশ্চিত ওঁরা আমায় না বলবেন না। ওঁদের সঙ্গে আমার আবেগের সম্পর্ক। আমি নানা জনারের কাজ করব। যাঁরা আমার ছবি করতে চাইবেন তাঁদের সঙ্গে কাজ করব।

Advertisement

আপনার স্বচ্ছ ভাবনা। কিন্তু ‘ক্রিসক্রস’-এর মতো স্টারস্টাডেড ছবি হিট করল না কেন?

২০১৫ পুজো, ‘শুধু তোমার জন্য’ বক্স অফিসে হিট ছিল। রিমেক হওয়া সত্ত্বেও আমি আমার মতো করে ছবি করেছিলাম বলে সেটা ওয়ার্ক করেছিল। ‘ক্রিসক্রস’-এর ক্ষেত্রে আমি চেষ্টা করি আলট্রা আরবান আর দেশজ মাটির সঙ্গে সামঞ্জস্য তৈরি করার। আসলে এটা আমার ভুল যে স্মরণজিৎ-এর ওই গল্পটাকে আরও একটু আপমার্কেট ছবি বানাই। যেমন ধরুন মৈনাক করেছিল ‘আমি আমার গার্লফ্রেন্ড’।

আরও পড়ুন: ভাল দেখতে লাগছে আগেও শুনেছি, কিন্তু ভাল অভিনয় ‘নকশি কাঁথা’য় শুনলাম

এই ধরনের ছবি হিন্দিতে হলে লোকে দেখতে যেত কিন্তু। যেহেতু এটা বাংলায় হল তখন লোকের মনে হল, সমস্যা আরও গভীরে পৌঁছবে। মাখো মাখো হবে। বাংলা দর্শক এ রকম চায়। তাই ‘ক্রিসক্রশ’ সব ধরনের মানুষের পছন্দ হয়নি। তবে এই ছবি ডিজিটালে অসম্ভব ভাল করছে। আমি আর একটু বুঝিয়ে বলব?

শুটিংয়ে ব্যস্ত পরিচালক।

বলুন না...

ধরুন, আমি এক জন অটিস্টিক বাচ্চাকে নিয়ে ছবি বানাব। এখানে আহারে, তার কত দুঃখ, কষ্ট, এগুলো একেবারেই দেখাতে চাই না। আমি তার জীবনের দরদের গল্প বলতে চাই না! তাকে নিয়ে আমি ছবি করলে বানাবো এই অটিস্টিক ছেলেটা কতটা মজার, স্মার্ট। আর দেখাব বাকি পৃথিবীটা তার কাছে অটিস্টিক। কোনও অক্ষমতা নিয়ে ছবি বানালে তার জীবনের জোরাল দিকটা নিয়েই সেলিব্রেট করতে চাই।

আপনি তো দেখছি জানেন বাংলার দর্শক কী চায়। তা-ও সে রকম ছবি করেন না কেন?

দেখুন শিবু, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায় কিন্তু নিজস্ব জনারের পথ নির্মাণ করেছেন। সেই পথে তাঁরা ভাঙছেন, গড়ছেন। এঁদের দর্শকেরা সে ভাবেই নিয়েছে। ‘সব ভূতুড়ে’ আমার খুব পছন্দের ছবি। লোকে দেখে বলেছিল ছবিটা আরও ওয়ার্ক করত যদি আরও গা ছমছমানি থাকত। জানি। কিন্তু আরও বেশি ভয় দেখালে সেটা তো আর পাঁচটা ভূতের ছবির মতোই হত। বাঙালি ভূতের গপ্প হত না। আমার ছবিতে ইমোশনের সব কিছু বলে দেওয়া হয় না। ওভার ইমোশনাল কিছু তৈরি হয় না।

আরও পড়ুন: ডান্সার, গায়িকা, মার্শাল আর্টে দক্ষ এই বলি নায়িকার নাকি ‘ইভিল ভাইবস’ রয়েছে!


কেন?

আমি যে ভাবে বড় হয়েছি সেখানে বাবা-মা শিখিয়েছিল কারও মৃত্যু হলে খুব জোরে কাঁদতে নেই। হাউ হাউ করে কাঁদা ঠিক নয়। জোরে কথা বলা বারণ। এ বার এখন দেখছি, কথায় কথায় কেঁদে ফেলা, চিৎকার করাই ছবিতে আনতে হবে। আমি কিন্তু চেষ্টা করছি, তবে জানি না আমার সিনেমা দেখে সকলের চোখে জল আসবে কি না! আমি ‘আনলার্ন’ করছি যা আমার বাবা-মা শিখিয়েছিল। ওটাই তো করতে হবে, দিনের শেষে প্রযোজকের ঘরে টাকা ফেরত আসে যাতে।

আরও পড়ুন: নিজেই নিজের চুল কেটে ফেললেন কিয়ারা আডবাণী! ভাইরাল ভিডিয়ো

তা হলে এখন কী করছেন?

এখন ‘বিবাহ অভিযান’ করছি। এখানে প্রফেশনাল বিরসা দাশগুপ্তকে দেখা যাবে।আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি মেনস্ট্রিম কমেডি বানাতে। কিছু ছবি আমি কাজ করার জন্য মন দিয়ে করি। কিছু আমার নিজের গড়ে পিঠে নেওয়া।

সামনে এমন কিছু আসছে যা আপনার নিজের ভাবনার ছবি?

‘হাওয়া বন্দুক’। এই গল্প সত্তর দশকের বরাহনগর কাশীপুরে ঘটে যাওয়া সেই উত্তাল সময়কে ঘিরে। আমি আর স্মরণজিৎ চক্রবর্তী দীর্ঘ সময় ধরে খেটে ছবির প্ল্যান করেছি। স্মরণজিৎ স্ক্রিপ্ট করেছেন। প্রেক্ষিত সত্তর দশক, নকশাল, নস্টালজিয়াকে ব্যকড্রপ, কিন্তু আসলে প্রেমের ছবি। ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’, ‘টাইটানিক’-এর ধাঁচে এই ছবির নির্মাণ। প্রেম ও ভালবাসা এই ছবির বিষয়। আমি এই ছবি নিয়ে খুব আশাবাদী। এই প্রথম আনন্দবাজার ডিজিটালে ভাবনাটা প্রকাশ করলাম।

আপনার ছবিতে বিদীপ্তা নেই কেন?

টেলিফিল্ম করেছি ওকে লিড করে।

ঝগড়া হয় না বাড়িতে?

মান-অভিমান তো হয়। আমি ভবিষ্যতে এমন চিত্রনাট্য লিখব যেখানে শুধু ওকে নিয়ে কাজ হবে। অনেককেই এখন বলা হয় ভাল অভিনেত্রী। কিন্তু তাদের ছবিতে দেখে মনে হয় অভিনয় করছে। বিদীপ্তাকে দেখে কিন্তু মনে হয় না।

বিরসার ‘সব ভূতুড়ে’ ছবিতে কাজ করেছেন তাঁর মেয়ে।


যেমন?

রণবীর সিংহ খুব বড় মাপের অভিনেতা। কিন্ত তাঁকে দেখেও আমার মনে হয় অভিনয় করছেন। কিন্তু রণবীর কপূরকে দেখে মনে হয় না।

বাড়িতে সিনেমার লোক থাকলে তাঁদের সঙ্গে কাজ করার প্রবণতাই এখন বেশি। আপনার মধ্যে সেই প্রবণতা কম কেন?
হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন। মা-ও তো অভিনয় করতে পারেন। বাবা ক্রিয়েটিভ প্রডিউসার। ভাই ডিরেক্ট করতে পারে। সুদীপ্তা অভিনয় করতে পারে। অভিষেক আর আমি কো-ডিরেক্ট করতে পারি। বরুণ মুখোপাধ্যায় ক্যামেরা করতে পারে। কিন্তু আর কেউ টাকা রোজগার করবে না, আমরাই করব। এটা তো হতে পারে না! (হেসে) দেখুন, বাড়িতে লোক থাকলেই সবাইকে সব সময় পার্ট দিতে হবে এবং গোটা পরিবার মিলে টাকা রোজগার করতে হবে, এই আপব্রিংগিং আমার বাবা-মা শেখাননি! এটা প্রফেশনাল ওয়ার্ল্ড। যে কাজে যাকে লাগবে তাকে নিয়েই কাজ করব। পরিবারে প্রত্যেকে আমরা স্পেস দিয়ে থাকি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement