নয়ের দশক সবে শুরু হয়েছে। ভারতীয় দর্শকদের কাছে খুলে যাচ্ছে দূরদর্শনের বাইরে বেসরকারি উপগ্রহ চ্যানেলের বিনোদনের বিশাল ভাণ্ডার। সেখানেই রান্না শেখাতে এলেন এক যুবক, সঞ্জীব কপূর। এলেন, রান্না শেখালেন এবং জয় করলেন।
রান্না শেখানো মানেই মহিলাদের আধিপত্য, এই ধারণা ভেঙে চুরমার করে দিলেন সঞ্জীব। খুব অল্প সময়ে তাঁর রান্না শেখানোর শো ‘খানা খাজানা’ জনপ্রিয় হয়। আগাগোড়া টিআরপি-র শীর্ষে ছিল এই শো।
সহজ, সাধারণ পদ্ধতিতে ঘরোয়া ও আন্তরিক ভাবে রান্না শেখানো ছিল সঞ্জীবের সাফল্যের মূলমন্ত্র। রোজকার রান্না থেকে রেস্তোরাঁর বিশেষ পদ। সবই সঞ্জীবের শেখানোর গুণে মন জয় করে নিত দর্শকদের। সেলেব্রিটি শেফ-এর তকমা ঝেড়ে ফেলে সঞ্জীব হয়ে উঠেছিলেন দর্শকদের ঘরের লোক।
১৯৯৩ থেকে ২০১২ অবধি টানা সম্প্রচারিত ‘খানা খাজানা’ এশিয়ার সবথেকে বেশিদিন চলা কুকিং শো। প্রথম দিকে হরপাল সিংহ সোখি এই শো-এর সঞ্চালনা করলেও সঞ্জীব আসার পর তিনি-ই হয়ে ওঠেন এর প্রধান মুখ।
সঞ্জীবের জন্ম পঞ্জাবের অম্বালায়, ১৯৬৪ সালের ১০ এপ্রিল। ছোট থেকেই ভাল লাগত রান্নাবান্না। ১৯৮৪ সালে দিল্লির ইনস্টিটিউট অব হোটেল ম্যানেজমেন্ট কেটারিং অ্যান্ড নিউট্রিশন থেকে পাশ করেন।
দেশের বিভিন্ন পাঁচতারা হোটেলের এক্সিকিউটিভ শেফ ছিলেন তিনি। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ইন্টারন্যাশনাল কালিনারি বিভাগের অন্যতম সদস্য ছিলেন। বিদেশ থেকে বিভিন্ন সম্মানে ভূষিত হয়েছেন সঞ্জীব।
ইন্ডিয়ান কুইজিনের অন্যতম পরিচিত মুখ তিনি। শেফ, সঞ্চালকের পাশাপাশি রান্নার বইয়ের লেখক। তাঁর নামে রয়েছে নিজস্ব ব্র্যান্ড। রান্নাঘরের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ও শৌখিন জিনিস পাওয়া যায় সেই ব্র্যান্ডে। এ ছাড়া সঞ্জীব নিজেও অনেক সংস্থার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। ২০১৭ সালে তিনি সম্মানিত হন ‘পদ্মশ্রী’-তে।
পেশার সূত্রেই পরিচয় জীবনসঙ্গিনীর সঙ্গে। সঞ্জীব তখন আইটিডিসি-তে কর্মরত। কর্মক্ষেত্র বারাণসী। সেখানে তাঁর সহকর্মী ছিলেন বন্দনা। আলাপ হল বন্দনার বোন আল্যোনার সঙ্গে।
প্রথমে বন্ধুত্ব। তারপর সেখানে থেকে ক্রমশ গভীর হল প্রণয়। চার বছর প্রেমের পরে দু’জনে বিয়ে করলেন ১৯৯২ সালের অক্টোবরে। আজ, সঞ্জীব আর আল্যোনা একে অন্যের পরিপূরক। দুই মেয়ে, রচিতা এবং কৃতীকে নিয়ে তাঁদের ভরপুর সংসার।
সঞ্জীবের সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ আল্যোনা। তিনি নিজে বি কম অনার্স করার পরে কম্পিউটারে ডিপ্লোমা করেছেন। স্বা্মীর সব উদ্যোগের মূল প্রেরণা তিনি-ই।
স্বামীর সেলেব্রিটি প্রোফাইল নিয়ে অসুবিধে হয়? আল্যোনা জানিয়েছেন, হয় না। কারণ সঞ্জীব তাঁর সেলেব-তকমা অন্দরমহলে আনেন না।
বাড়িতে শৌখিন রান্না করেন বটে সঞ্জীব। তবে তাঁর নিজের প্রিয় শেফ কিন্তু গিন্নি আল্যোনা-ই। কোনও বিশেষ ডিশ নয়। স্ত্রী হাতের সব খাবার তাঁর অতুলনীয় বলে মনে হয়।
আর সঞ্জীবের রান্না করা কোন খাবার আল্যোনার সবথেকে প্রিয়? তিনি জানাচ্ছেন, একবার তাঁর জন্মদিনে ইতালিয়ান ডিশ করেছিলেন সঞ্জীব। সেই অসাধারণ স্বাদ-ই এখনও অবধি তাঁর কাছে সেরা।
সুখী দাম্পত্যের কোনও রেসিপি আছে? সঞ্জীব ও আল্যোনা জানিয়েছেন, হাফ কাপ বিশ্বাস, এক কাপ বোঝাপড়া, এক কাপ ধৈর্য, এক কাপ আস্থা এবং অনেকটা ভালবাসা। এই সব উপকরণকে খুব ভাল করে মেশালেই নাকি হাজির উপাদেয় দাম্পত্য ও জীবন। ছবি: সোশ্যল মিডিয়া।