তাঁকে বলা হয় ‘ভারতের মাইকেল জ্যাকসন’। নৃত্যশিল্পীর পাশাপাশি প্রভু দেবা কোরিয়োগ্রাফার এবং ছবির পরিচালকও। তাঁর নাচের ভঙ্গি মসৃণ হলেও ব্যক্তিগত জীবন যথেষ্ট বন্ধুর। ওঠাপড়ার ঘাত প্রতিঘাতে দগ্ধ হতে হয়েছে তাঁকে। বান্ধবীর জন্য ছেড়ে গিয়েছিলেন স্ত্রীকে। পরে বান্ধবীর সঙ্গে প্রেমও দীর্ঘস্থায়ী হল না।
১৯৭৩ সালের ৩ এপ্রিল মহীশূরে জন্ম প্রভু দেবার। তাঁর বাবা মুগুর সুন্দর ছিলেন দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির নামী কোরিয়োগ্রাফার। বাবার পথে পা রাখেন ছেলেও। ছোট থেকেই তিনি ছিলেন বিস্ময়প্রতিভা। ভরতনাট্যমের পাশাপাশি শিখেছেন পাশ্চাত্য ঘরানার নাচও। সিনেমায় হাতেখড়ি দক্ষিণী ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড ডান্সার হিসেবে।
সেখান থেকে শুরু করে প্রথম সারির কোরিয়োগ্রাফার হতে সময় লাগেনি। পরে তিনি ছবি প্রযোজনা এবং পরিচালনাও করেন। ২০০৯ সালে তিনি প্রথম হিন্দি ছবি পরিচালনা করেন। সলমন খান অভিনীত সে ছবির নাম ‘ওয়ান্টেড’। বক্স অফিসে তুমুল সফল হয় ছবিটি।
ইন্ডাস্ট্রিতে কেরিয়ারের শুরুতেই ১৯৯৫ সালে বিয়েও করে নেন প্রভুদেবা। তাঁর প্রথম স্ত্রীর নাম ছিল রামলতা। পরে ছোট করে নাম নেন ‘লতা’। তিনিও নৃত্যশিল্পী ছিলেন। দু’জনের পছন্দের বিষয় একই হওয়ায় প্রভুদেবা-লতার আলাপ, প্রণয়ে পরিবর্তিত হতে সময় নেয়নি।
তিন সন্তানকে নিয়ে তাঁদের ভরপুর সংসারে ফাটল ধরে তৃতীয় নারীর আগমনে। তামিল ও তেলুগু ছবির নায়িকা নয়নতারার সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন প্রভু দেবা। কিন্তু প্রথম দিকে তিনি বা নয়নতারা, দু’জনের কেউ এই সম্পর্ক স্বীকার করেননি, আবার অস্বীকারও করেননি।
তাঁর প্রথম স্ত্রী লতার অভিযোগ, বিবাহিত অবস্থাতেই প্রেমিকা নয়নতারার সঙ্গে লিভ ইন করতেন প্রভু দেবা। সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যে চরম মানসিক আঘাত। ২০০৮ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তাঁদের বড় ছেলে, বিশাল।
প্রভু দেবাকে ফিরিয়ে আনার জন্য বহু চেষ্টা করেছেন লতা। প্রথমে অনুরোধ। যাতে লিভ ইন সম্পর্ক থেকে সরে আসেন প্রভু দেবা। কিন্তু সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর জোর খাটানোর চেষ্টা করেন লতা। হুমকি দেন, নয়নতারার সঙ্গে প্রভু দেবা সম্পর্ক শেষ না করলে তিনি অনশন শুরু করবেন।
কিন্তু ছেলের মৃত্যু, স্ত্রীর অনুরোধ-হুমকি, কোনও কিছুতেই টলানো যায়নি প্রভু দেবাকে। তিনি নিজের প্রেমের প্রতিই অবিচল থেকেছেন। ২০১০ সালে প্রভু দেবা সংবাদমাধ্যমে জানান, তিনি নয়নতারাকে ভালবাসেন, বিয়ে করতে চান।
কিন্তু তারপরেও স্ত্রী লতা তাঁকে ডিভোর্স দিতে চাননি। বরং তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। অভিযোগ জানিয়েছেন, প্রভু দেবা তাঁর সন্তানদের ভরণপোষণেরও কোনও দায়িত্ব নেন না। লড়াইয়ে তিনি পাশে পেয়েছিলেন বিভিন্ন মহিলা সংগঠনকেও। তাদের প্রতিবাদ জমায়েতে দাহ করা হয়েছিল নয়নতারার কুশপুতুল।
শেষ অবধি অবশ্য ভেঙে পড়ে লতার প্রতিরোধ। ২০১১ সালে তিনি বিবাহবিচ্ছেদে সম্মত হন। শেষ হয়ে যায় তাঁদের ষোল বছরের দাম্পত্য। দুই ছেলের কাস্টডি পান লতা। প্রভু দেবাকে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়।
কিন্তু নয়নতারার সঙ্গে নতুন সংসারও অধরাই থেকে গেল প্রভু দেবার কাছে। তত দিনে ছবিতে অভিনয় ছেড়ে দিয়েছেন নয়নতারা। কিন্তু ছাড়তে পারেননি বিলাসবহুল জীবনযাত্রার অভ্যাস। তিনি মুম্বইয়ে লিভ ইন করতেন প্রভু দেবার সঙ্গে।
বিলাসী জীবনের ব্যয়ের জন্য নয়নতারা পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিলেন প্রেমিক প্রভু দেবার উপরেই। ফলে ক্রমশ অর্থিক দেনায় ডুবে যান প্রভু দেবা নিজে। তাছাড়া শোনা যায়, সন্তানদের সঙ্গে প্রভু দেবা যে সম্পর্ক রেখেছিলেন, সেটাও মেনে নিতে পারেননি নয়নতারা। তাঁর কাছে গোপন করে নাকি প্রভু দেবা চেন্নাই যেতেন, প্রাক্তন স্ত্রী এবং দুই ছেলের কাছে।
যদিও নয়নতারার অভিযোগ ছিল, প্রভু দেবা বিয়ে করতে চাননি। অনেক বার বিয়ের জন্য এগিয়েও শেষ অবধি পিছিয়ে গিয়েছেন। ২০১২ সালে প্রভু দেবা এবং নয়নতারা বিবৃতি দিয়ে জানান, তাঁরা সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসেছেন।
এরপর প্রভু দেবা আর নতুন করে কোনও সম্পর্কে জাড়াননি। তবে নয়নতারা লিভ ইন করেন তামিল পরিচালক ও গীতিকার বিঘ্নেশ শিবমের সঙ্গে। (ছবি: ফেসবুক)