প্রতীকী চিত্র।
তেলঙ্গানা ধর্ষণ কাণ্ড নিয়ে বৈঠকখানা থেকে সোশ্যাল মিডিয়া উত্তাল। গত ২৭ নভেম্বর পশু চিকিৎসক মেয়েটি ধর্ষিত হওয়ার পর থেকে ধর্ষকদের কী ভাবে শাস্তি দেওয়া যায়, তা নিয়ে অজস্র মতামত উঠে আসছিল। শুক্রবার ভোররাতে চার অভিযুক্ত পুলিশের এনকাউন্টারে মারা গিয়েছে এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই উল্লাসে ফেটে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। সেলেবরা জানিয়েছেন নিজেদের মতামত। কিন্তু সেটা ছিল প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া। বেলা গড়াতেই পাল্টা প্রতিক্রিয়ার ভিড়ও চোখে পড়তে থাকে। ধর্ষকের কঠোরতম শাস্তি নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। কিন্তু শাস্তির পথ, শাস্তির পন্থা নিয়ে অবশ্যই রয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগেই এনকাউন্টার কি আমাদের প্রশাসনের অব্যবস্থাকেই তুলে ধরে না? এমন প্রশ্নও সোশ্যাল মিডিয়ায় করেছেন অনেক সেলেব্রিটি।
অভিযুক্তদের এনকাউন্টারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই টুইট করেন ঋষি কপূর, ‘ব্রাভো তেলঙ্গানা পুলিশ’। অনুপম খের লেখেন, ‘অভিনন্দন চার ধর্ষণকারীকে এনকাউন্টার করার জন্য।’ পূজা হেগড়ে, সোনু সুদ, রাকুল প্রীত সিংহের মতো সেলেবরাও এনকাউন্টারের ঘটনাকে সমর্থন জানিয়েছেন। বলিউডের প্রথম সারির সেলেব্রিটিরা অবশ্য এই ঘটনা নিয়ে মুখ বন্ধ রেখেছেন। সলমন খান ধর্ষণের ঘটনার নিন্দা করলেও এ দিন কোনও মন্তব্য করেননি। বিরোধী সুর শোনা গিয়েছে পরিচালক ওনিরের কণ্ঠে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গণপিটুনি এবং পুলিশের এনকাউন্টার এখন এ দেশে নিয়মিত হয়ে গিয়েছে। যা কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের পরিপন্থী...’’ পুলিশি এনকাউন্টারের বিরোধী মতামত প্রসঙ্গে শিল্পা শেট্টি আবার কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, ‘ধর্ষণকারীদের প্রতি লোকজনের সহানুভূতি দেখে মহিলা হিসেবে অপমানিত বোধ করছি। নির্যাতিতা এবং তাঁর পরিবারের সম্মানের কথা ভাবুন। অভিযুক্তেরা পার পেয়ে যাচ্ছে, এমন ঘটনা হামেশাই ঘটছে। সেটাই কি কাম্য?’
তেলঙ্গানা পুলিশের জয়গানের মধ্যেই কিছু প্রশ্ন উঠে আসছে। যে পুলিশকে ঘটনার দিন অকুস্থলের দূরদূরান্তেও দেখা যায়নি, মেয়ের ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ জানাতে যাওয়া বাবাকে যে পুলিশ থানার জুরিসডিকশন দেখিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে— তারা কতটা বাহবা পাওয়ার যোগ্য? এনকাউন্টারের নেপথ্যে অন্য কিছু লুকোনো হচ্ছে না তো? চোখের সামনে দেখা ঘটনা কি সব সময়েই সত্যি হয়? এমনও তো হতে পারে, সাজিয়েগুছিয়ে একটা পরত দিয়ে সবটা পরিবেশন করা হল? পর্দা সরিয়ে দিলেই হয়তো আরও নির্মম কিছু বেরিয়ে আসবে...
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় তাঁর টুইটে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, ‘এত পুলিশের পাহারার মধ্যে অভিযুক্তরা পালানোর চেষ্টা করল কী ভাবে!’ যদিও তিনি মনে করেন, এটাই ন্যায়বিচার। টলিউডের অনেকেই এনকাউন্টারকে সমর্থন জানিয়েছেন। দেব, মিমি চক্রবর্তী, নুসরত জাহান, শুভশ্রী, অঙ্কুশ, অরিন্দম শীলের মতো ব্যক্তিত্বেরা মনে করেন, এটাই ন্যায়ের পথ। তবে বিরুদ্ধ মতামত এখানেও আছে। পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায় এই ঘটনা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন। ফেসবুকের পোস্টে লিখেছেন, ‘বিচার ব্যবস্থার কী দরকার আছে? ...এর পিছনে কোনও বিধায়ক সাহেবের পুত্র জড়িত ছিল না তো? আশারাম বাপু থেকে উন্নাওয়ের সেনেগর, এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন?’ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন অভিনেতা ঋদ্ধি সেনও। তাঁর বক্তব্য, ‘ধর্ষকের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই। কিন্তু এই এনকাউন্টার কি আমাদের বিচারব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন তোলে না?’ পাশাপাশি বৃহস্পতিবার উন্নাওয়ে ধর্ষিতাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার ঘটনা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অভিনেতা। তাঁর কথায়, ‘এক লক্ষ তেত্রিশ হাজার কেস পড়ে রয়েছে। সেই মহিলারাও ন্যায়বিচার চান।’
কিছু দিন আগে পরিচালক সুজিত সরকার একটি টুইট করেছিলেন। ‘বলিউড, প্রথমে আমরা শুধরে যাই। তার পর না হয় সকলকে জ্ঞান দেব। প্রোটেস্ট করার আগে বরং আমাদের ফিল্মি এথিক্সের দিকে নজর দিই...’ বুঝতে অসুবিধে হয় না, সুজিতের ইঙ্গিত কোন দিকে। বলিউডি ছবি, নাচ-গানে এখনও মহিলাদের পণ্য হিসেবেই দেখানো হয়। যাঁরা সেই সব গানে কণ্ঠ দেন বা অভিনয় করেন, তাঁরাই আবার প্রগতিশীলতার বাণী আওড়ান! যে ঘটনা নিয়ে গোটা দেশ উত্তাল, তা নিয়ে কিন্তু বলিউডের মুখ অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, আমির খান, অক্ষয়কুমারেরা পুরোপুরি চুপ।
বিচারব্যবস্থাকে ডিঙিয়ে অভিযুক্তদের শাস্তি দিলেই মূল সমস্যা মিটবে তো? কাঠুয়া, কামদুনি, উন্নাওয়ের মতো কত নির্যাতিতা এখনও বিচারের অপেক্ষায়...