বিপাশা বসু।
এই লড়াই গত কয়েক দশকের। একটি নামী প্রসাধনী প্রডাক্টের নাম বদল করে দিলেই আগামী দিনের ছবিটা যে পুরো বদলে যাবে, সেটা ভাবাও ঠিক নয়। তবু ‘ব্ল্যাকলাইভসম্যাটার’-এর ঝড়ে একটি বড়সড় পরিবর্তনের সাক্ষী থাকবে দেশ।
ফর্সা হওয়ার জনপ্রিয় ক্রিমের নামে ‘ফেয়ার’ শব্দটি বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার সংস্থা। এ দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের গায়ের রং ফর্সা নয়। তবু ঔপনিবেশিক মানসিকতা এবং জাতিগত বৈষম্যের কারণে সাধারণ মানুষের কাছে সৌন্দর্যের মাপকাঠি ফর্সা হওয়া। গায়ের রঙের জন্য শ্যামবর্ণা মেয়েদের যে ভাবে নানাবিধ লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়, তা ২০২০তেও সিরিয়াল-সিনেমা বানানোর উপজীব্য হয়ে ওঠে।
গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রিও এই বর্ণ বৈষম্যের ঊর্ধ্বে নয়। বিশেষত, যখন ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারির অভিনেত্রীরা ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপন করেন, তখন প্রতিবাদের ভাষা তার শান হারায়। নাম বদলের সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসার পরে শ্যামবর্ণা অভিনেত্রীরা নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
একটি দীর্ঘ পোস্টে বিপাশা বসু লিখেছেন, ‘‘আমাকে মায়ের মতো দেখতে। আমার মা শ্যামবর্ণা। সুপারমডেল প্রতিযোগিতায় জেতার পরে আমাকে লেখা হল ‘ডাস্কি’ বিউটি’। এই ‘ডাস্কি’ শব্দটা কেমন ভাবে যেন আমার সাফল্যের সঙ্গে জুড়ে গেল। নিউ ইয়র্ক, প্যারিসে যখন ফ্যাশন শো করতে গিয়েছি, গায়ের রঙের জন্যই হয়তো বেশি নজর কেড়েছি। যখন বলিউডে কাজ করা শুরু করলাম, তখনকার তথাকথিত সুন্দরী অভিনেত্রীদের সঙ্গে আমার ফারাক করা হত। আমার ‘যৌন আবেদন’-এর চাবিকাঠি নাকি ছিল গায়ের রং। আমার মতে, যৌনতার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।’’ গত আঠেরো বছরে ফেয়ারনেস ক্রিমের অনেক এনডর্সমেন্ট পেলেও প্রস্তাব গ্রহণ করেননি অভিনেত্রী।
টলিউডেও একই সমস্যার সম্মুখীন শিল্পীরা। পার্নো মিত্র ও পাওলি দাম এ বিষয়ে অনেক দিন ধরেই সরব। ‘ঘরে বাইরে আজ’-এর অভিনেত্রী তুহিনা দাস বললেন, ‘‘যে পরিবেশে বড় হয়েছি, সেখানে গায়ের রং নিয়ে আমাকে কিছু বলা হত না। তবে টেলিভিশনে অডিশন দিতে গিয়ে শুনেছি, ‘ভালই লাগল অডিশন। কিন্তু তোমাকে কী চরিত্র যে দিই... তুমি তো একটু আলাদা...’ তবে আমি ফর্সা হওয়ার জন্য কোনও ট্রিটমেন্ট করাইনি। ভবিষ্যতেও করাব না।’’
তুহিনা (বাঁ দিকে) ও রিচা।
অভিনেত্রী রিচা চড্ডা ‘নট ফেয়ার বাট লাভলি’ লেখা একটি টি-শার্ট পরা ছবি পোস্ট করেছেন। লিখেছেন ‘‘নিজের গায়ের রং মেনে নেওয়ার আত্মবিশ্বাস অনেক বছর লড়াই করার পরে পেয়েছি।’’ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ‘ডার্ক ইজ় বিউটিফুল’ ক্যাম্পেন চালাচ্ছেন নন্দিতা দাস। এই সিদ্ধান্তে তিনিও খুশি। দেরিতে হলেও বদল আসছে...