সেলেব-সেলেব দোস্তি? তা-ও আবার হয় নাকি? সিনে দুনিয়া মানেই তো রেষারেষি, একে অন্যকে টক্কর দেওয়ার চেষ্টা।সেখানে এমন বন্ধুত্ব! ‘হয় হয় zআনতি পারো না’। শুধুমাত্র বন্ধুত্বের খাতিরে আত্মত্যাগ বলি পাড়া খুব কমই দেখেছে। সৌজন্যে কমেডি কিং গোবিন্দা।
সময়টা ১৯৯৮। সে সময় গোবিন্দার বাজার একেবারে তুঙ্গে। ‘হিরো নম্বর ওয়ান’, ‘কুলি নম্বর ওয়ান’, ‘দুলহে রাজা’, ‘নসিব’ — একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। অভিনেতা ঠিক করেন বিখ্যাত হলিউড রমকম ‘ফ্রেঞ্চ কিস’-এর হিন্দি রিমেকে অভিনয় করবেন।
সে মতোই শুরু হল প্রস্তুতি।নির্ভেজাল প্রেমের ছবি। তাই ‘বেবি ফেস’-এর নায়িকাই দরকার। এ অবস্থায় সেই সময় মনীষা কৈরালার থেকে ভাল পছন্দআর কে-ই বা হতে পারে? অতএব ঠিক হয়, গোবিন্দার বিপরীতে অভিনয় করবেন মনীষা। তিনিও রাজি হয়ে যান।
রোম্যান্টিক কমেডিতে রোম্যান্সের পার্ট তো বাছা হল। বাকি রইল কমেডি। আর কমেডি মানেই জনি লিভার। নেওয়া হল তাঁকেও। যুক্ত হলেন যশপাল ভাট্টি। ঠিক হল পরিচালকের ভূমিকায় থাকবেন নরেন্দ্র মলহোত্র। সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত হল অনু মালিকের হাতে। ছবির নাম ঠিক হয় ‘দিল দিওয়ানা মানে না’। সব মিলিয়ে সে এক ‘টোটাল এন্টারটেনমেন্ট প্যাকেজ’।
ছবির শুটিং শুরু হবে হবে করছে,এমন সময় গোবিন্দার কাছে খবর যায় অজয় দেবগণও ঠিক একই কনসেপ্ট নিয়ে একটি ছবিতে অভিনয় করছেন। ‘ফ্রেঞ্চ কিস’ থেকেই অনুপ্রাণিত সেই ছবির ইতিমধ্যেই শুটিং এক মাস হয়ে গিয়েছে।
অজয় তখন নবাগত। অন্যদিকে গোবিন্দার আকাশ তখন সুবিশাল। এই অবস্থায় সাধারণত সিনিয়রদেরই জায়গা ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু গোবিন্দা খবর পাওয়া মাত্রই ফোন করলেন অজয়কে। জিজ্ঞাসা করলেন খুঁটিনাটি। অজয়ও সবিস্তারে জানালেন সব কথা।
সেই ছবিতে অজয়ের বিপরীতে ছিলেন কাজল। পরিচালনায় দায়িত্ব ছিল অনীশ বাজমির উপর। কোন ছবির কথা বলা হচ্ছে বলুন তো?
কাজল এবং অজয় জুটির অন্যতম সেরা এবং জনপ্রিয় ছবি ‘প্যায়ার তো হোনা হি থা’। সব শুনে গোবিন্দা এক মুহূর্ত চিন্তা না করে তাঁর নিজের ছবির আইডিয়া বাতিল করে দেন। একই কনসেপ্ট নিয়ে বলিউডে দু’টি ছবির কোনও মানে হয় না, এমনটাই মনে করেছিলেন তিনি।
জোর খাটাতে পারতেন তিনি। নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করে বন্ধ করে দিতে পারতেন অজয়-কাজলের সেই আইকনিক ছবির শুটিং। কিন্তু না, তা তিনি করেননি। নিজের বিশাল অঙ্কের টাকা নষ্ট হবে জেনেও সরে এসেছিলেন। জায়গা ছেড়ে দিয়েছিলেন নতুনকে। আর সেখান থেকেই তাঁদের বন্ধুত্ব নতুন মোড় নেয়। সেই বন্ধুত্ব আজও অটুট।
গোবিন্দার দোস্তির এরকম আরও অজস্র উদাহরণ আছে। ১৯৯৭ সালে সলমনের হিট ছবি ‘জুড়ুয়া’-তে প্রথমে গোবিন্দাকেই বাছা হয়েছিল। কিন্তু সলমনের একটি ফোন কল এবং অনুরোধই সমস্ত হিসেব-নিকেশ বদলে দিয়েছিল। এক মুহূর্ত চিন্তা না করে সেই ছবি সলমনকে ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি।
এই মহানুভব মানুষটির ২০০০-র সালের পর থেকে কেরিয়ারে ভাঁটা পড়তে শুরু করে। একের পর এক ফ্লপে ভরে যায় তাঁর ফিল্মি কেরিয়ার। তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ভোটে জিতে সাংসদ হলেও পরবর্তীকালে তেমন কিছু সুবিধা করতে পারেননি।
ঠিক সেই সময়েই গোবিন্দার পাশে দাঁড়ান সলমন। যে সাহায্য বেশ কয়েক বছর আগে গোবিন্দা করেছিলেন, সেই সাহায্যই ফিরিয়ে দিয়ে চেয়েছিলেন ভাইজান।
‘পার্টনার’ ছবিতে তিনি প্রায় জোর করেই গোবিন্দাকে নেওয়ার কথা বলেন প্রযোজকদের। অবশেষে নেওয়া হয় গোবিন্দাকে। আর সেই ছবিও বক্স অফিসে সাফল্য পায়।
এর পরেও যদিও অনেক ছবিতেই কাজ করেছেন গোবিন্দা তবে তাঁর কোনও ছবিই সে ভাবে বক্স অফিসে আঁচড় কাটতে পারেনি। তবে গোবিন্দার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে প্রতি বার।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর স্টারডম হয়তো আজ বিলুপ্তির পথে। কিন্তু গোবিন্দার নিখুঁত অভিনয়, কমেডি সেন্স, নাচ আর মহানুভবতার জন্য তিনি আজও সেলেব থেকে সাধারণের কাছে বেশ পছন্দের।