Sandhya Mukhopadhyay

Sandhya Mukherjee: ‘গায়িকা নন, আমার দিদিভাই ছিলেন সাধিকা’

বসুশ্রীতে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে সন্ধ্যাদির গান শোনার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে থাকতাম। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যাদির গান অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে হত।

Advertisement

বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:১২
Share:

স্মৃতি: ১৯৯৮ সালে এক অনুষ্ঠান মঞ্চে গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে

আমার প্রথম বাংলা হিট ছবি ‘মায়ামৃগ’-য় সন্ধ্যা রায়ের ‘লিপে’ দিদিভাইয়ের একটা গান ছিল, ‘ও বক বক বকম বকম পায়রা’। ওই সময়ে খুব হিট করেছিল গানটা। দিদিভাই! হ্যাঁ, এই নামেই সন্ধ্যাদিকে ডাকতাম। আমার ছবিতে গাওয়ার আগে থেকেই ওঁর গানের ভক্ত আমি। কেই-বা ওঁর গুণগ্রাহী ছিলেন না? সুরকার রবিন চট্টোপাধ্যায় আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন সন্ধ্যাদির সঙ্গে। ওঁর রেকর্ডিং চলছিল। শেষ হলে রবিনদা বললেন, ‘‘এই দেখো, আমাদের নতুন নায়ক বিশ্বজিৎ।’’ কী মনে হল, বলেছিলাম, ‘দিদিভাই।’ শুনে সন্ধ্যাদি বলেছিলেন, ‘‘এই নামেই আমাকে ডাকবেন।’’

Advertisement

বসুশ্রীতে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে সন্ধ্যাদির গান শোনার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে থাকতাম। সাধারণত হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যাদির গান অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে হত। ‘মায়ামৃগ’ ছবির গীতিকার ছিলেন শ্যামল গুপ্ত। ধর্মতলার এম কে জি স্টুডিয়োয় বসে শ্যামলদা গান লিখতেন। প্রায়ই দেখতাম ফোনে সন্ধ্যাদির সঙ্গে কথা বলছেন শ্যামলদা। তখন
কিন্তু ওঁদের সম্পর্কের আঁচ ছিল না আমার। পরে আমি যখন বম্বেতে, তখন খবর পেলাম, সন্ধ্যাদি এবং
শ্যামলদার বিয়ে হচ্ছে। খুব খুশি হয়েছিলাম।

বম্বের চেম্বুর কালীবাড়িতে বাংলার সঙ্গীতশিল্পীদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠান হয়েছিল। সালটা এখন মনে করতে পারছি না। আমি সন্ধ্যাদি, হেমন্তদা (মুখোপাধ্যায়), মান্নাদা (দে), শ্যামলদা (মিত্র)কে নিয়ে এসেছিলাম। বম্বেতে ওঁর আরও একটি অনুষ্ঠানের কথা বলতে চাইব। অনুষ্ঠানের আগে উনি তানপুরা নিয়ে রেওয়াজ করছিলেন। আমি অবাক! ওঁকে মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। যখন বাইরে এলেন, আমি ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘‘আপনার প্র্যাকটিসের কী প্রয়োজন?’’ বললেন, ‘‘প্রয়োজন আছে!’’ আসলে উনি তো গায়িকা নন, সাধিকা ছিলেন!

Advertisement

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গায়ক না হলেও, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত নিয়ে আমার বরাবরের আগ্রহ। বড়ে গুলাম আলি খানের ছাত্রী ছিলেন সন্ধ্যাদি। কিন্তু যখন আধুনিক গান গাইতেন, তখন পাল্টে ফেলতেন গায়কি! এমনই ছিল ওঁর দক্ষতা। মনে‌ পড়ছে আরও একটি ঘটনা। রঞ্জি স্টেডিয়ামে বাংলা এবং বম্বের শিল্পীদের নিয়ে একটি বড় শো হয়েছিল। মহম্মদ রফি, লতা মঙ্গেশকর, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় এক মঞ্চে! ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’ গানটিকে এমন ভাবে সন্ধ্যাদি গাইলেন, হাততালির গুঞ্জন থামছে না! ফুটবলে যেমন ড্রিবল হয়, তেমনই গানটাকে নিয়ে যেন খেলা করলেন সন্ধ্যাদি। বলতে দ্বিধা নেই, শোয়ের লাইমলাইট কিন্তু ছিলেন সন্ধ্যাদি।

লতা মঙ্গেশকর এবং সন্ধ্যাদির সখ্য সকলেরই জানা। আজ মনে হচ্ছে, এক সরস্বতী আর এক সরস্বতীকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন! ঠিক যেন দুই বোনের মতো।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement