পর্দায় তিনি জনপ্রিয় হয়েছিলেন কাজলের পাণিপ্রার্থীর ভূমিকায়। এক সময় একসঙ্গে ২০টি ছবির সুযোগ তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। আবার অন্য দিকে এক সময় তিনি নেশার গ্রাসে হারিয়ে গিয়েছিলেন। ফিরে আসার পরে অবশ্য বিজয় আনন্দ চমকে দিয়েছিলেন সকলকে। এই অভিনেতাকে দেখে বলাই যায়, এ ভাবেও ফিরে আসা যায়।
বিজয় আনন্দের ছোটবেলা কেটেছে আর্থিক কষ্টে। সাক্ষাৎকারে নিজেই জানিয়েছেন, স্কুলজীবনে ট্রেনের কামরায় সাবান বিক্রি করতেন। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিজয়ের সুদর্শন চেহারার সঙ্গে সঙ্গে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে তাঁর ব্যক্তিত্বও। বন্ধুরা পরামর্শ দেন, মডেলিং করার জন্য।
১৯৯৫ সালে একটি ফ্যাশন শো-এ অংশ নেন বিজয়। আগমনেই বাজিমাত। তিনি হয়ে ওঠেন নামী ফ্যাশন পত্রিকার মুখ। ক্রমে মডেলিংয়ে তিনি পা রাখেন প্রথম সারিতে।
মডেলিং করতে করতেই টেলিভিশন ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ। ‘আসমান সে আগে’ ধারাবাহিকে তিনি কাজ করতে রাজি হন অমৃতা সিংহের জন্য। ওই ধারাবাহিকে অমৃতা বিশেষ ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। অমৃতা সে সময় ছিলেন যথেষ্ট জনপ্রিয়। তাঁর সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করার সুযোগ হারাতে চাননি বিজয়।
এই ধারাবাহিকের সুবাদে বিনোদন দুনিয়ায় পরিচিতি বাড়ে বিজয়ের। সুযোগ পান ‘যশ’ ছবিতে। কিন্তু এই ছবিটি সিনেমাহলে ছিল ক্ষণস্থায়ী। কবে মুক্তি পেয়েছিল, কবেই বা চলে গিয়েছিল, টের পাননি দর্শকরা।
১৯৯৮ সালে বিজয়কে ‘প্যায়ার তো হোনা হি থা’ ছবিতে সুযোগ দেন আনিস বাজমি। ছবিতে তাঁর চরিত্রের নাম ছিল রাহুল বজাজ। তিনি ছিলেন কাজলের প্রণয়ী। কিন্তু শেষ অবধি কাজলের সঙ্গে প্রতারণা করে কাশ্মীরা শাহের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন রাহুল।
ছবিতে কাজল-অজয় দেবগণের পাশাপাশি দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন বিজয় আনন্দও। এর পর তাঁর কাছে একসঙ্গে ২০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ আসে। কিন্তু তিনি সব সুযোগ ফিরিয়ে দেন। কারণ সে সময় তাঁর অভিনয়ের কেরিয়ারের প্রতি বিতৃষ্ণা এসেছিল।
বিজয়ের মনে হয়েছিল, অভিনেতার জীবন তাঁর জন্য নয়। বরং, তাঁর উচিত আধ্যাত্মিক পথে পা রাখা। অভিনয় ছেড়ে তিনি শিল্পসামগ্রীর ব্যবসা শুরু করেন। ভারতীয় শিল্পসামগ্রী তিনি বিদেশে রফতানি করতেন। কাজের সুবাদে প্রায় ৬০টি দেশে গিয়েছিলেন তিনি।
ব্যবসার সুবাদে তাঁর উপার্জনও এক লাফে বেড়ে যায় অনেকটাই। একটা সময় আসে, আধ্যাত্মিক জীবনের পরিবর্তে বিজয় ডুবে যান পার্টির রঙিন জীবনে এবং সুরার নেশায়। ফলস্বরূপ, শরীরে অসুখ বাসা বাঁধতেও সময় নেয়নি। আর্থ্রাইটিস-সহ বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হন তিনি।
শরীরের পাশাপাশি ভেঙে পড়ে ব্যবসাও। দুনিয়া জুড়ে আর্থিক মন্দা শুরু হওয়ায় তার প্রভাব পড়ে বিজয়ের ব্যবসাতেও। চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে তিনি এ বার আকৃষ্ট হন যোগচর্চার প্রতি। হৃষিকেশে গিয়ে তিনি যোগাভ্যাস চর্চা করেন। কিছু দিন পরে তিনি নিজেই যোগাভ্যাসের প্রশিক্ষক হয়ে যান। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও যোগ প্রশিক্ষক হিসেবে তিনি সমাদৃত।
যোগচর্চার ফলে জীবনের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিতে আমূল পরিবর্তন আসে। শারীরিক এবং মানসিক, দু’ধরনের সমস্যাই তিনি কাটিয়ে ওঠেন। যোগ প্রশিক্ষক হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়ে দেশে এবং বিদেশে।
২০ বছর অভিনয় থেকে দূরে থাকার পরে আবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন বিজয়। জনকরাজার ভূমিকায় তাঁকে দেখা গেল ‘সিয়া কা রাম’ ধারাবাহিকে। ধারাবাহিকটি জনপ্রিয় হয় দর্শকের দরবারে। প্রশংসিত হয় বিজয়ের কাজও। দীর্ঘ দু’দশক পরে তাঁকে নতুন অবতারে দেখা যায় এই ধারাবাহিকে।
সানি লিয়নের জীবনের উপর তথ্যচিত্র ‘করণজিৎ কউর’-এ বিজয় অভিনয় করেছিলেন সানির বাবার ভূমিকায়। কিন্তু অভিনয়ের দ্বিতীয় ইনিংসে বেশিরভাগ দর্শকই তাঁকে চিনতে পারেননি। বুঝতেই পারেননি, তিনি হলেন সেই ‘প্যায়ার তো হোনা হি থা’ ছবির কাজলের প্রণয়প্রত্যাশী।
বিজয় আনন্দ এখন টেলিভিশনের পরিচিত মুখ। অভিনয়ের সঙ্গে জারি যোগ প্রশিক্ষণের কাজও। অভিনয়জীবনের প্রথম পর্বে সে ভাবে সফল হতে না পারলেও দ্বিতীয় ইনিংসে অনেক বেশি ছাপ ফেলতে সফল হয়েছেন তিনি।
মরাঠি অভিনেত্রী সোনালি খারেকে বিয়ে করেছেন বিজয়। স্ত্রী সোনালি এবং মেয়ে সানায়াকে নিয়ে ব্যক্তিগত জীবনেও খুশি ইন্ডাস্ট্রিতে নায়কের ভূমিকায় ব্যর্থ বিজয়।