সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করল বিহারের নীতীশ কুমার সরকার। যার বিরুদ্ধে পাল্টা আপিল করেছেন অভিনেতার বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তী।
আজ সাংবাদিক বৈঠকে নীতীশ বলেন, ‘‘সুশান্তের বাবা যে-হেতু বিহার পুলিশের কাছে এফআইআর দায়ের করেছিলেন, আমরা তখনই সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করতে পারিনি। কিন্তু এখন সুশান্তের বাবা সিবিআই তদন্তে সম্মত হয়েছেন। এ বিষয়ে তাঁর ডিজিপি-র সঙ্গে কথাও হয়েছে। কে কে সিংহ সম্মত হওয়ার পরেই আমি ডিজিপি-র সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া সেরে ফেলতে বলেছি। আজই সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করে আবেদন পাঠাব আমরা।’’
নীতীশ আরও বলেন, ‘‘বিহার পুলিশের সঙ্গে অসহযোগিতা করছে মুম্বই পুলিশ। পটনা থেকে পাঠানো আইপিএস অফিসারকে জোর-জবরদস্তি কোয়রান্টিনে পাঠানো হল। সিবিআইয়ের এক্তিয়ার অনেক বেশি। তাই আশা করা যায়, তাদের তন্তকারীরা এ ধরনের বাধার সম্মুখীন হবেন না।’’ সাংবাদিক বৈঠকের কিছু ক্ষণ পরেই নীতীশ টুইট করেন, ‘‘মৃত অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের বাবার করা এফআইআরের ভিত্তিতে এই মামলার সিবিআই তদন্তের সুপারিশ পাঠিয়ে দিয়েছি আমরা।’’
তবে রিয়া চক্রবর্তীর আইনজীবী সতীশ মানশিন্ডে জানিয়েছেন, বিহার সরকারের এই পদক্ষেপ আইন-বিরুদ্ধ এবং নীতীশ কুমার সরকারের এক্তিয়ার বহির্ভুত। তিনি বলেন, ‘‘যে মামলার কোনও যৌক্তিকতাই নেই, সেটা কী করে সিবিআইয়ের হাতে দেওয়ার সুপারিশ করতে পারে বিহার সরকার? এই তদন্তে বিহার পুলিশের অংশ নেওয়ার কোনও আইনি ভিত্তি নেই। সুশান্তের বাবার অভিযোগ পেয়ে বড় জোর তারা ‘জ়িরো এফআইআর’ দায়ের করতে পারত। তখন মামলাটি চলে আসত মুম্বই পুলিশের অধীনে, যারা প্রথম থেকে শুরু করে এত দিন ধরে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।’’ নীতীশের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে মহারাষ্ট্র সরকারও। তাদের দাবি, মহারাষ্ট্র সরকারের কাজে নাক গলাচ্ছে বিহার। মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী এবং এনসিপি-র মুখপাত্র নবাব মালিক বলেন, ‘‘মুম্বইয়ে হওয়া কোনও ঘটনার তদন্ত হঠাৎ কেন করতে যাবে বিহার পুলিশ? আসলে নিজের রাজ্যে করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে এখন সিবিআই তদন্তের কথা বলে নজর সরাতে চাইছেন নীতীশ কুমার।’’
সুশান্তের মৃত্যুর পরে বারবার নাম উঠেছে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধবের ছেলে আদিত্য ঠাকরের। তিনি বলিউডের অনেকেরই খুব ঘনিষ্ঠ। আজ আদিত্য টুইট করেন, ‘‘আমি এত দিন এ নিয়ে মুখ খুলিনি। সুশান্তের মৃত্যুর সঙ্গে আমার নাম জড়ানো হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই। মহারাষ্ট্র সরকারকে অপদস্থ করার চেষ্টা এটা।’’
তবে সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে শুধু বিহার-মহারাষ্ট্র নয়, চাপান-উতোর শুরু হয়ে গিয়েছে মহারাষ্ট্রের ঘরোয়া রাজনীতিতেও। আজ বিজেপি নেতা তথা মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের স্ত্রী অমৃতা টুইট করেন, ‘‘মুম্বই আর বসবাসের জন্য নিরাপদ মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে, এই শহর তার মানবিকতা হারিয়েছে।’’ যার পাল্টা টুইট করেছেন শিবসেনার সাংসদ প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী। অমৃতাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা মুম্বই পুলিশের দেওয়া নিরাপত্তা কর্মী নিয়ে এবং মুম্বইপুলিশের দেওয়া গাড়িতেই ঘোরাফেরা করেন, তাঁদের মুখে এ ধরনের অভিযোগ মানায় না।’’