বিপ্লবকেতন চক্রবর্তী এবং বিদীপ্তা চক্রবর্তী।
মানুষ স্মরণ করছেন বিপ্লবকেতন চক্রবর্তীকে। দেখে ভাল লাগছে, বাবা আজও সমসাময়িক। সারা দিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে বড্ড মনে পড়ছে। বাবার জন্মদিন মানেই বাবাকে নতুন করে যেন মনে করার দিন। শুক্রবার রাতে আমি আর আমার ছোট মেয়ে ইদা বারান্দায় বসে। তখনই কথায় কথায় হঠাৎ ইদা বলে উঠল, ‘‘শনিবার দাদাইয়ের জন্মদিন। দাদাই নেই। মা তোমার কি খুব মনখারাপ করবে?’’ আবার ভাবতে বসলাম বাবাকে নিয়ে।
আমার বাবা নাটকপাগল, আপাদমস্তক ভালমানুষ। অভিনয়ের বাইরে কিচ্ছু বুঝতেন না। বুঝতে চাইতেনও না। অসম্ভব নিয়মনিষ্ঠ। একটু বেচাল হলেই বকুনি, পিটুনি! আমি ডানপিটে, দুষ্টু। এক বার দুষ্টুমির জন্য স্কুল থেকে বাবাকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। ফিরে এসে বাবার সে কী ধমক, ‘‘মান-সম্মান কিছুই আর রাখলে না! সবাই চেনেন আমায়। আর আমার মেয়ে এ সব করে বেড়াচ্ছে! কথা না শুনলে কপালে দুঃখ আছে।’’ ঠিক আর পাঁচ জন বাবা যে ভাবে বকে। শুধু তাঁর পেশা ছিল অভিনয়। এখানেই আমার বাবা বাকি অনেক বাবাদের থেকে আলাদা। আমার বাবাও খেতে ভালবাসতেন। আমার মায়ের রান্নার হাত দুর্দান্ত। বাবা কোনও দিন জন্মদিনে কিচ্ছু আবদার করতেন না। তবে মা নিজের রাতে রেঁধে বাটিতে বাটিতে সাজিয়ে খেতে দিলে খুব খুশি হতেন। মায়ের হাতের সুক্তো, তরকারি, পাঁঠার মাংস পেলে বাবার মুখটা দেখার মতো হত। খুশিতে ঝলমলিয়ে উঠতেন।
বাবা খুব নাতনি অন্তপ্রাণ ছিলেন। বিশেষত বড় মেয়ে মেঘলাকে নিয়ে। মেঘলা আমার থেকে আমার মা-বাবার কাছে বেশি থাকত। একটা সময় এমনও গিয়েছে, আমার দম ফেলার ফুরসৎ নেই। বাবা মেয়েকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছেন। তার পর মা-বাবা মিলে নাতনিকে নিয়ে বেড়াতে চলে গিয়েছেন বাইরে, পাহাড়ে। তুলনায় ইদা দাদুকে তেমন পায়নি। ওর জন্মের আগে থেকেই বাবা অসুস্থ। তবু যতটা পেরেছেন, করে গিয়েছেন ওর জন্য। তাঁর পথে চলে আমরা তিন বোন অভিনয়কে ভালবেসেছি। অভিনয়ে নিয়ে বাঁচছি। বাবা দেখে গিয়েছেন। খুশিও হয়েছিলেন খুব। নাতনিরাও যে অভিনয়ে, সেটা বাবা আর দেখে যেতে পারলেন না।
বিরসা দাশগুপ্তের ‘হাওয়া বন্দুক’-এ মেঘলা আবার অভিনয়ে ফিরছে। বাবার পরিচালনায় মেয়ে ক্যামেরার সামনে। খুশির পাশাপাশি আফশোস হচ্ছে। দাদুর প্রিয় নাতনি ফের অভিনয়ে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাবা যদি একটু দেখে যেতে পারতেন!