ভরত কল।
২০২২-এর জন্মদিন আজীবন মনে রাখার মতো। একটা করে বছর পেরোচ্ছে। ক্রমশ পরিণত হচ্ছি। কিন্তু এত ঘটনাবহুল জন্মদিন এই প্রথম! কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি? আগে বরং নিজের গল্পেই শুরু করি। জন্মদিনের দিন বাড়িতে থাকতে পারব না। এটাও প্রথম। অথচ বাড়িতে থাকব বলে ছোটপর্দার কাজ থেকে আগাম ছুটি নিয়েছিলাম! কিন্তু সন্দীপ রায়ের ‘হত্যাপুরী’র শ্যুট থেকে ছুটি হল না। বাবুদাকে না বলার সাধ্য নেই। ফলে, এ বারের জন্মদিন পুরীতে। যদিও সেটের কাউকে কিচ্ছু বলিনি। আগের রাতে স্ত্রী জয়শ্রী, মেয়ে আর্যাকে নিয়ে কেক কেটেছি। এ বছর এতেই খুশি। আর জন্মদিনের উপহার বাবুদার ছবির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ‘মহেশ হিঙ্গোরানি’। ধূসর চরিত্র হলেও তাতে নানা স্তর আছে।
এ বছর আরও একটি বড় উপহার পেয়েছি। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে। ২০০১ সাল থেকে আমি ‘দিদি’র সঙ্গে। ২০২২-এ জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে এই প্রথম চিঠি দিলেন! ওঁর সরাসরি আশীর্বাদ পেতে ১১ বছর কাটিয়ে দিলাম! তবে জানেনই তো, মানুষের জীবনে আনন্দ কখনও একা আসে না। তাতে বিষাদের ছোঁয়া থাকবেই। দিদির শুভেচ্ছা বার্তাতেও যেন মনখারাপ, দুশ্চিন্তার ছায়া! আমি ওঁকে খুব ভাল অনুভব করতে পারি। ওঁর বিষাদ তাই ছুঁয়ে গিয়েছে আমাকেও। যদিও আমার চোখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমুদ্র। আমি তার মধ্যে এক আঁজলা জল। তবু ‘দিদি’র আশীর্বাদ সসম্মানে গ্রহণ করে বলছি, ‘‘দিদি, আপনি যত দিন আছেন, আমি আপনাকেই চাই। আপনার পাশে থাকতে চাই। আপনার কাজের অংশ হয়ে থাকতে চাই।’’ স্বাধীন দেশের নাগরিকের প্রধান কর্তব্য দেশের প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান করা। সংবিধান মেনে সেটি অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। একই ভাবে সম্মানীয় মুখ্যমন্ত্রীও। তিনি কোনও দলের মাথা নন। রাজ্যের রক্ষাকর্তা। সেই সম্মান তাঁর প্রাপ্য।
একই সঙ্গে এ বারের জন্মদিনে জানলাম, কাকও কাকের মাংস খায়! কথাটা অবশ্যই রূপক। পার্থ চট্টোপাধ্যায়-অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই কেউ নেটমাধ্যমে অনবরত সহ-অভিনেতাদের প্রতি বিষ উগরে দিচ্ছেন! ‘‘এ রকম আরও বহু অভিনেত্রী আছেন। নাম জানি। বলব?’’— এ রকমই মন্তব্য তাঁর। সঙ্গে সঙ্গে বাকিদের প্রতিক্রিয়া আছড়ে পড়ছে! অর্পিতাকে ছোট না করেই বলছি, কত দিন অভিনয় করেছেন? কে চেনেন তাঁকে? আমার ৩০ বছরের অভিনয় জীবন। আমি চিনি না। হয়তো দু-চারটি ছবিতে কাজ করেছেন। বাংলা-ওড়িয়া মিলিয়ে। তাতেই তিনি অভিনেত্রী! সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের বাকি অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে কুৎসা শুরু! কেন? আমাদের সহজে জড়িয়ে ফেলা যায়, তাই?
মনে পড়ছে, ২০০১ সালে তাপস পাল প্রথম বিধায়ক নির্বাচনের টিকিট পেয়েছিল। ওঁর হয়ে প্রথম প্রচারে অংশগ্রহণ। তাপসের হাতে তুলি। আমার হাতে রঙের কৌটো। আমরা দেওয়াল লিখছি! আমি কি সেই প্রচারে টাকা নিয়েছিলাম? কে কী করল। কোপ আমাদের ঘাড়ে। আর যিনি ভূরি ভূরি নিন্দে করে বেড়াচ্ছেন, তিনিও যে রাজনীতির বাইরে তা কিন্তু নয়। তিনি বাম সমর্থক। ওমনি সেটি শিক্ষিতদের মঞ্চ! বিজেপি-তে গেলেও এত কথা হয় না। যত কথা হয়, মুখ্যমন্ত্রীকে সমর্থন জানালে। একটাই কটূক্তি, ‘চটিচাটার দল’! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চটি কেন চাটতে যাব? দিদি প্রযোজক না পরিচালক! এ দিন আমাদের বলেছেন। এ বার ঋদ্ধি সেনের পিছনে পড়েছেন। তিনি নিজেও তো একই পেশার। তার পরেও আগের-পরের কোনও প্রজন্মকেই ছাড়ছেন না!
এ বারের জন্মদিন যেন শিখিয়ে দিল— ঝোপ বুঝে কোপ মারার দিন আগেও ছিল, কিন্তু এমন নগ্ন ভাবে ছিল না। নিজের পেশা, পেশার সঙ্গে যুক্ত বাকিদের সম্মান করার দিন শেষ। সম্মানিত নন কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও। তাঁকেও প্রকাশ্যে কটূক্তি করা যায়। এত কিছু দেখার পরেও আমার ভরসা রয়েছে দিদির উপরে। ভরসা রয়েছে বিচার-ব্যবস্থার উপরে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী অন্যায় বরদাস্ত করেন না। ফলে, প্রকৃত দোষী শাস্তি পাবেই। এবং রাজ্যের উপরে ঘনিয়ে ওঠা দুর্নীতির কালো মেঘও সরে যাবে। আমি সেই দিন দেখার অপেক্ষায়।