অঙ্কুশ-পাওলি-জয়া-ধ্রুব
কথা ছিল, বাংলা বছরের প্রথম দিনে লকডাউন ওঠার। তবে করোনা মহামারির সঙ্গে যুদ্ধ এখনই শেষ হওয়ার নয়। তাই দেশের বেশির ভাগ রাজ্যের মতোই এ রাজ্যেও লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতির নিয়মে বৈশাখ এসে গিয়েছে। তবে এ বার চারপাশ দেখে তা বোঝার উপায় নেই। ঘরবন্দি হয়েই নতুন বছরের উদ্যাপনে শামিল বাংলার সাধারণ মানুষ, টলিউডের সেলেবরাও।
বাংলাদেশ থেকে ফোনে জয়া আহসান বললেন, ‘‘আজ পয়লা বৈশাখ যেমন সত্যি, তার চেয়েও বড় সত্যি এখন করোনা। এই রোগটা এমন মৃত্যুভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে মানুষের মনে যে, এই দিনেও আলাদা কিছু করতে পারব না। তবে ভিডিয়ো কলে দেশ-বিদেশের বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানাব, বড়দের প্রণাম জানাব।’’ প্রণাম জানানোর রীতি বদলাবে না অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও।
নববর্ষ মানেই মনের কোণে ভিড় করে আসা স্মৃতি। আর এ বার ছোট-বড় সকলের জন্য স্মৃতিটুকুই সম্বল। ‘‘বাবার দোকানে হালখাতা, ভাল ভাল মেনু, আমাদের নতুন জামাকাপড় পরে হইহই করা... এ বারের নববর্ষে যেন আরও বেশি করে মনে পড়ছে সব কিছু,’’ মন খারাপের সুর পাওলি দামের কণ্ঠে। পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘বাবা-মা, আমি আর আমার স্ত্রী বসে ছোটবেলার নববর্ষের কথাই আলোচনা করছিলাম। বাবাদের ছোটবেলায় চড়কের মেলায় যাওয়া ছিল খুব আনন্দের।’’ তবে স্মৃতিমেদুরতার আড়ালেই উঁকি দিচ্ছে উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ। বৃদ্ধ বাবা-মায়ের জন্য চিন্তিত পাওলি। আবার আমেরিকাবাসী দিদি-জামাইবাবুর জন্য মন কেমন অঙ্কুশের।
আরও পড়ুন: পড়াশোনায় সাহায্য প্রিয়ঙ্কার
লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই পরিমিত খাওয়াদাওয়ার অভ্যেস করছেন সকলে। তবু নতুন বছরের প্রথম দিনে স্বাদবদলের ইচ্ছে তো হয়ই। বাইরে গিয়ে খাওয়াদাওয়ার সুযোগ যখন নেই, তখন বাড়িতেই কি আর পাঁচটা কোয়রান্টিন দিনের চেয়ে আলাদা কিছু রান্না হচ্ছে? জয়া বললেন, ‘‘পান্তা হবে। তবে নিয়মরক্ষার খাতিরে। কোনও আতিশয্য থাকবে না।’’ মা-বাবার জন্য ভাইয়ের সঙ্গে রান্না করবেন পাওলি, ‘‘খিচুড়ি, বেগুন ভাজা, ডিম ভাজার মতো ছিমছাম মেনুই থাকবে। লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই ফুড রেশনিংয়ের কথা মাথায় রেখে চলছি।’’
নিত্যনতুন পদ রান্নার জন্য সুনাম রয়েছে অর্পিতার। বললেন, ‘‘পরশুই চিকেন ভুনা খিচুড়ি বানালাম। তবে নববর্ষের জন্য আলাদা করে কিছু ভাবিনি। মিশুকের জন্য কিছু স্পেশ্যাল করব হয়তো, ও যা খেতে চায়।’’ অঙ্কুশ বললেন, ‘‘মায়ের হাতে আমি যা যা খেতে ভালবাসি, লাঞ্চে তাই হবে। পনিরের ডালনা, কষা মাংস, স্পেশ্যাল আলু পোস্ত, আমের চাটনি... এই সব আর কী। আর যদি সকাল-সকাল ঘুম ভাঙে, তা হলে জলখাবারে লুচি। ডায়েট আজ মানছি না।’’ ধ্রুব আবার ধোকার ডালনা আর পায়েসেই খুশি, ‘‘এর জন্য বেশি ঝক্কি নিতে হবে না। আর এখন তো এক-একটা দিন যে ভাবে কাটছে, তাতে একটু অন্য রকম হলেই মনে হচ্ছে অনেক বেশি পাচ্ছি।’’
আরও পড়ুন: ঘরের খিড়কি আমরা বন্ধ করব, কিন্তু খুলে রাখব মনের সব জানলা
পরিবার-পরিজন তো রয়েছেনই। তবে এই দুর্দিনে অনেকেই গৃহহীন-অন্নহীন মানুষদের পাশে এসেও দাঁড়িয়েছেন। যেমন, গায়িকা ইমন চক্রবর্তী। ‘‘আমার সঙ্গীত অ্যাকাডেমির ট্রাস্ট থেকে জনা কুড়ি সদস্য মিলে প্রায় ৪০০ জনকে সাহায্য করেছি ইতিমধ্যেই। পয়লা বৈশাখের দিনটাও তাই-ই করব।’’
নতুন বছরে জরা-ব্যাধির জীর্ণতা যেন মানুষের আগামী দিনগুলোকে ভারাক্রান্ত না করে, সেই প্রার্থনাই এখন করছেন টলিউডের সেলেবরা।