৫০ হয়েছে? এ বার সিলভার সেপারেশন

শুধু পশ্চিম নয়। শহর কলকাতাতেও এখন পঞ্চাশোর্ধ্ব ডিভোর্সের রমরমা। নতুন বাংলা ছবির বিষয়ও। লিখছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত।কী বলে ডাকলে ঠিক হবে, তা বুঝতে খানিকটা সময় লেগে গেল। এ কি ‘ঘরে বাইরে’র সন্দীপ আর তার মক্ষীরানি? ৩০ বছর পর আবার তাদের দেখা। জীবনের সায়াহ্নে এসে দাঁড়িয়ে। যখন সন্দীপের একমুখ দাড়ি নেই। নেই মক্ষীরানির খোঁপার সেই কাঁটাও। মন্দ হত না যদি এমন ভাবেও ভাবা যেত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share:

কী বলে ডাকলে ঠিক হবে, তা বুঝতে খানিকটা সময় লেগে গেল।

Advertisement

এ কি ‘ঘরে বাইরে’র সন্দীপ আর তার মক্ষীরানি?

৩০ বছর পর আবার তাদের দেখা। জীবনের সায়াহ্নে এসে দাঁড়িয়ে।

Advertisement

যখন সন্দীপের একমুখ দাড়ি নেই। নেই মক্ষীরানির খোঁপার সেই কাঁটাও।

মন্দ হত না যদি এমন ভাবেও ভাবা যেত।

আবার তিরিশ বছর পর: ‘ঘরে বাইরে’র সন্দীপ ও বিমলা।

কিন্তু সে চিত্রনাট্য তোলা থাক। ‘ঘরে বাইরে’র সন্দীপ তো তার মক্ষীরানিকে ছেড়েই চলে গিয়েছিল।

তবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত আবার পর্দায় ফিরে আসছেন।

১৯৮৪তে সত্যজিত্‌ রায়ের ছবির পর আবার তাঁরা একসঙ্গে।

নতুন ছবির নাম ‘বেলাশেষে’। পরিচালক নন্দিতা রায় আর শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। শ্যুটিং শুরু হবে ২৪ নভেম্বর। সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে থাকছেন অনুপম রায়।

না, এ কোনও সিক্যুয়েল নয়। বেশ অদ্ভুত এক বিষয় নিয়ে তৈরি ছবিটি। বার্ধক্যে এসে বিবাহ বিচ্ছেদ!

এক বাঙালি দম্পতিকে নিয়ে লেখা চিত্রনাট্য। মুখ্যচরিত্রে পঁচাত্তর বছর বয়সি এক প্রকাশক। নাম বিশ্বনাথ মজুমদার। পঞ্চাশোর্ধ্ব স্ত্রী আরতিদেবী। ঘরসংসার, চার ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিদের নিয়েই ব্যস্ত তিনি। হঠাত্‌ একদিন বিশ্বনাথবাবু সেপারেশনের কথা পেড়ে বসেন। তার পর যা হয়, তা নিয়েই এই ছবি।

এ সব তো বিদেশে হয়েই থাকে

বিদেশে বেশ কয়েক বছর ধরে এই ট্রেন্ডটা লক্ষ করা যাচ্ছে। এতটাই প্রচলিত হয়ে গিয়েছে ব্যাপারটা যে, এই ধরনের বিচ্ছেদকে বলা হয় ‘সিলভার সেপারেশন’ বা ‘গ্রে ডিভোর্স’। অর্থাত্‌ বেশি বয়সে এসে বিবাহবিচ্ছেদ। যখন ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে গিয়েছে, সম্পর্কে হয়তো মরচে পড়েছে বা একঘেয়েমি এসেছে। বার্ধক্য এলেও যখন বিচ্ছেদ বলতে বাধা হয় না জীবন তো একটাই। দমবন্ধ না-হয়ে নিজের মতো করে বাঁচতে চাওয়াটা স্বার্থপরতা নয়। চল্লিশ বছর বিয়ের পর আমেরিকার প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাল গোর তাঁর স্ত্রীর থেকে আলাদা হয়ে যান। বিচ্ছেদের সময় অ্যাল গোরের বয়স ছিল ৬৪ বছর। হলিউড অভিনেতা আর্নল্ড সোয়াত্‌জেনেগার তো বিয়ের ২৫ বছর পর তাঁর স্ত্রী মারিয়া শ্রিভারকে ডিভোর্স করেন। সিলভার সেপারেশনের সময় আর্নল্ডের বয়স ছিল ৬৫। সাতাশ বছর বিয়ের পর অভিনেত্রী ডায়ানা কুইকের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তাঁর পার্টনার বিল নাইটির সঙ্গে। ছাড়াছাড়ির সময় ডায়ানার বয়স ছিল ৬১। শুধু সেলিব্রিটি নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই ট্রেন্ডটা ভালভাবেই ছড়িয়ে পড়েছে। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই দম্পতিদের যুক্তি হল৬০এর চৌকাঠে দাঁড়িয়ে আছি মানেই কিন্তু জীবন শেষ হয়ে যায়নি। রিটায়ারমেন্ট হয়ে গিয়েছে। সন্তানরা মানুষ হয়ে গিয়েছে। তাঁদের নিজস্ব জীবন রয়েছে। তার মানে তো এই নয় যে জীবন থেকে আর কিছু পাওয়ার নেই। ছিদ্রান্বেষীরা প্রশ্ন তুললে, এঁরা বলেন আলাদা থেকে যদি ভাল ভাবে বাঁচা যায় তা হলে আপত্তিই বা কোথায়?

এ শহরেও এমনটা হয়ে থাকে

গ্লোবালাইজেশনের যুগে শুধু বিলেতেই এমনটা হচ্ছে তা ভাবার কোনও কারণ নেই। আলিপুর থেকে সল্ট লেক, বালিগঞ্জ থেকে টালিগঞ্জ এ রকম ঘটনা এখানেও অস্বাভাবিক নয়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জয়রঞ্জন রাম বলছেন, “আমার চেনা অন্তত ১০টা কেস এ রকম দেখেছি যেখানে ৫০ বছরের পরে দম্পতিরা ডিভোর্সের কথা ভাবছেন। আসলে এসবের পিছনে একটা বড় কারণ হল, আজকের দিনে মানুষ নিজেদের আইডেনটিটিকে বিশেষ প্রাধান্য দিচ্ছে। নিজের জন্য যে বাঁচা উচিত, এটা তাঁরা বেশি করে বিশ্বাস করছেন।”

এ রকম একটা যুক্তি দেখিয়েই তো ‘বেলাশেষে’র বিশ্বনাথ হঠাত্‌ একদিন বিয়ে ভাঙার কথা বলে। “বিয়ের ঊনপঞ্চাশতম বছরে এসেও ডিভোর্স চেয়ে বসেন। কারণ? একঘেয়েমি আর স্বপ্নভঙ্গ। এত বছরের দাম্পত্যে স্ত্রীর উপর নির্ভরতা রয়েছে। এমনকী ডিভোর্স পিটিশন ফাইল করার দিনেও সকালে জুতোটা না-খুঁজে পেয়ে সেই স্ত্রীর শরণাপন্ন হতে হয় বিশ্বনাথকে! রোজকার জীবনের নির্ভরতার বাইরেও যে একটা মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে সেটা আরতি বোঝেনি। সে সন্তানদের নিয়েই ব্যস্ত। পরিবারের প্রতি দায়িত্ব তার কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এই যে দূরত্বটা তৈরি হয়েছে এটা সে বুঝতেই পারেনি,” বলছেন নন্দিতা আর শিবপ্রসাদ। নভেম্বরে বোলপুর আর কলকাতা মিলিয়ে শ্যুটিং হবে এ ছবির। আর ক্যানসার সারভাইভারদের নিয়ে যে ছবিটা করার কথা ছিল সেটা শুরু হবে পরের বছর।

‘ঘরে বাইরে’র ডিভিডি হাতে।

এক ছাদের তলায় আলাদা থাকার মানে নেই

আগেও যে মানসিক বিচ্ছেদ হত না, তা নয়। তবে যেটা একটু আলাদা ছিল তা হল পারিবারিক জীবনের গঠন। মানসিক দূরত্ব বাড়তে থাকলেও কিন্তু সমাজ কী বলবে এই ভয়ে বেলা শেষে এসে ডিভোর্সের কথা ভাবতে হয়ত অসুবিধা হত অনেকেরই। “আগে এক ছাদের তলায় আলাদা আলাদা জীবন চালাতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন দম্পতিরা। নিজেদের পার্টনার খুঁজে নিতেন কিন্তু বিয়েটা ভাঙতেন না। এখন অবশ্য সেই লোকদেখানো ব্যাপারটা আর নেই। লোকে বুঝছে যে, যদি বিয়েতে সত্যি দেওয়ার কিছু না-থাকে, তা হলে শুধু সমাজের ভয়ে বিয়ে টিকিয়ে রাখার মানে হয় না।

দে অপ্ট ফর ডিভোর্স। ডিভোর্স প্রোসিডিংয়ের সময় এরা নিজেদের পার্টনারদের সঙ্গে শিফ্ট করে যায়। ডিভোর্স হয়ে গেলে আবার বিয়ে করে নেয়,” বলছেন ডা. রাম।

আর থাকতে পারিনি

তবে সব সময় যে শুধুমাত্র অন্য কোনও মানুষের কারণে এই বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, তা নয়। এই ধরুন, সাগরিকা রাহা (নাম পরিবর্তিত)-র কথা। বিয়ে হয়েছিল ১৯৭৪য়ে। ২০০৫-এ মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পরে নিজের বিয়ে ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন সাগরিকা। তেত্রিশ বছর দাম্পত্য জীবনের পরে এমন সিদ্ধান্ত নিলেন কেন তিনি? “আমি ওর সঙ্গে আর থাকতে পারছিলাম না। রোজ আমার উপর অপরিসীম অত্যাচার করত। শুধু মেয়ের মুখ চেয়ে ডিভোর্সের

কথা আগে ভাবিনি। ভয় পেতাম যে মেয়ের বিয়ে হওয়ার আগে বাবা-মায়ের ডিভোর্সের ট্যাগটা যদি সমস্যার কারণ হয়। মেয়ে বিয়ের পরে ও আমেরিকা চলে যায়। তখন ওকেই প্রথম জানাই যে আমি আর এভাবে বাঁচতে পারছি না। আই ডিডন্ট ওয়ান্ট টু সাফার ইন সায়লেন্স,” বলেন সাগরিকা। ২০০৬-০৭য়ে তিনি ডিভোর্স ফাইল করেন। “এখনও কেসটা পেন্ডিং। আজ আমি একলা থাকি। তবে এটুকু বলতে পারি যে, নিত্যকারের যন্ত্রণা থেকে আমি মুক্তি পেয়েছি,” বলছেন তিনি। দুর্ভাগ্যবশত যে কোনও কারণেই হোক, আজকে তাঁর মেয়ের সঙ্গে আর যোগাযোগ নেই। “যে সন্তানের জন্য আমি স্যাক্রিফাইস করলাম, সে কিন্তু আমায় ভুলে গিয়েছে। আমার কমপ্লেক্সের সবাই যে খুব সাপোর্টিভ, তা নয়। মাঝে মাঝে ওদের ব্যবহার দেখে মনে হয় আমি যেন মঙ্গলগ্রহ থেকে এসেছি,” বলেন সাগরিকা। সাগরিকার আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “অন্তত চার থেকে পাঁচটা সিলভার সেপারেশনের কেস আমি হ্যান্ডল করছি। অভিজ্ঞতা থেকে বলছি এরা সব্বাই নিজের মতো করে বাঁচতে চায়। তবে তার জন্য প্রয়োজন সাহস। গড়পড়তা বাঙালি মেয়েরা শুধু আর্থিক কষ্টে ভোগে তা-ই নয়, সাহসের অভাবেও ভোগে। আমার মত হল খুনোখুনি করার থেকে যদি মতের মিল একদম না-হয় তা হলে ডিভোর্স হয়ে গেলে মন্দ কী? বিয়ের মধ্যে তারা ব্রিদিং স্পেস চাইছে। তাতে আপত্তি কোথায়?”

অনেক ক্ষেত্রে সন্তানেরাও সমর্থন করে

সাগরিকার ঘটনাটা এক রকম। তবে এমনও শোনা যায় যে ছেলেমেয়েরাও এই বিচ্ছেদে সমর্থন করে। ‘বেলাশেষে’র প্রযোজক অতনু রায়চৌধুরী এমন একটি কেসের কথা বলছেন যেখানে ২১ বছরের একটি মেয়ে তার বাবা-মা’র ডিভোর্সের জন্য উদ্যোগী হয়েছিল। “ঘটনাটা ঘটেছিল ২০১১-তে। মেয়েটির বাবা বাইরে থাকতেন। কলকাতায় মেয়েটি থাকত মায়ের সঙ্গে। ও বুঝেছিল বাবা-মা’র অ্যাডজাস্টমেন্ট হচ্ছে না। বাবা দেশে ফেরার পর ও উদ্যোগ নিয়ে মিউচুয়াল ডিভোর্সের কথা বলে।

তার পর সেটাই হয়।” ডা. জয়রঞ্জন রামেরও একই রকম একটা অভিজ্ঞতা রয়েছে। “আমার এক পরিচিত তাঁর ৬২ বছরের মা-কে ডিভোর্স করার পরামর্শ দেয়। প্রথমে তাঁর মা সে কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে যান। শেষ পর্যন্ত ডিভোর্সটা হয়ে যায়।”

স্বনির্ভরতাই কি শক্তি জোগায়?

অনেকের মতে বিশ্বায়ন বা প্রযুক্তির উন্নয়নের পর দুনিয়া অনেকটাই উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছে। আজকালকার মক্ষীরানিরা ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে বাইরে আসছেন। ‘ঘরে বাইরে’র বিমলারা আর চার দেওয়ালের মধ্যে থাকতে রাজি নন। স্বনির্ভরতা বাড়ছে। নিজস্ব পরিচয় বানাচ্ছেন তাঁরা। “অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এই ধরনের মহিলারা বাইরের দুনিয়ার এক্সপোজারের ফলে নতুন করে বাঁচতে চাইছেন। তখন আর তাঁদের গৃহবন্দি হয়ে থাকতে ভাল লাগছে না। আমার পরিচিত এক ভদ্রমহিলা ৪৪ বছর বয়সে এসে ঠিক করেন নতুন করে বাঁচবেন। মেয়ের তখন বয়স ১০-১২। অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও ডিভোর্স আটকানো যায়নি। এখন ওঁর বয়স ৫০। মহিলা একাই থাকেন। বাচ্চাটা থাকে বাবার সঙ্গে,” বলছেন আইনজীবী সুমন মুখোপাধ্যায়। আরও একটা কেস-ও মনে পড়ছে সুমনের। “ভদ্রমহিলা বিয়ের অনেক বছর পর বুঝতে পারেন তাঁর চয়েসটা ভুল হয়েছিল। ততদিনে তিনি পেশাদার জীবনে বেশ প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু তাঁর স্বামী তাঁর কাছে একদম ব্যাগেজ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। পেশাদার জীবনে মহিলার খ্যাতি যত বাড়তে থাকে, তাঁর স্বামীর ততই অবনতি ঘটে। শেষ পর্যন্ত মহিলা বিয়ে ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও আমরা সব সময় চেষ্টা করি যাতে বিয়ে না ভাঙে। তবু এ রকম কেস আজকাল আমরা প্রায়শই পাই।”

বয়সে কী আসে যায়

বিচ্ছেদ বাড়ছে। তবে যাঁরা পদক্ষেপটা নিচ্ছেন তাঁদের গঞ্জনাও যে শুনতে হয় না, এমনটা নয়। অনেকের ধারণা যে এত বছর বিয়ের পর জীবনসায়াহ্নে এসে আর আলাদা হওয়া কেন? আর ক’টা বছর মানিয়ে নিয়ে চলা যেত না কি? একসঙ্গে বসে রোজ ‘তুমি আসবে বলে’, ‘ইষ্টিকুটুম’ দেখে তো বেশ কাটিয়ে দেওয়া যায় জীবনটা। ‘বেলাশেষে’র সুরকার অনুপম রায় বলছেন, “আমার খুব নিকট কিছু বন্ধুর মা-বাবার ডিভোর্স হয়েছে। আর্লি ফিফটিজয়ে। কেউ কেউ ওয়েট করেছে ছেলেমেয়েদের গ্র্যাজুয়েশন অবধি। এখন তাঁরা আলাদা থাকেন। শান্তিতে থাকেন। সম্পর্কের ভাঙা বা জোড়াটা বয়সের ওপর নির্ভর না করে নিজেদের কম্প্যাটিবিলিটির ভিত্তিতেই করা উচিত। একজন মানুষ যদি বেশি বয়সে উচ্চশিক্ষা শুরু করতে পারে, তা হলে সে সম্পর্ক জুড়তে বা গড়তেও পারে।”

আজকের মক্ষীরানি তা হলে কী করত

শনিবার সকালে ছবির ফোটোশ্যুটের আগে এই ছবি নিয়েই কথা হচ্ছিল স্বাতীলেখার সঙ্গে। “এই ধরনের একটা চরিত্র আমি এর আগে মঞ্চে করেছি। সে নাটকের নাম ছিল ‘বেলাশেষে কোলাহল’। তবে ব্যক্তিগত জীবনে আমি কোনও দিন এ রকম কাউকে দেখিনি যিনি বার্ধক্যে এসে বিচ্ছেদে রাজি হয়েছেন,” বলছেন তিনি। যদি সন্দীপ অন্য রকমের হত, তা হলে কি মক্ষীরানি একদিন সিলভার সেপারেশনের কথা ভাবতেন? “না, আমার তা মনে হয় না,” বলছেন স্বাতীলেখা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বলছেন, “আমাদের সমাজের সোশ্যাল সিকিউরিটির স্ট্রাকচারটা বিদেশের থেকে অনেকটাই আলাদা। রিটায়ারমেন্টের পর তো এখানে নির্ভরতাটা আরও বেড়ে যায়। সে রকম একটা স্ট্রাকচারে এই ট্রেন্ডটা বাড়তে থাকলে সেটা খুব একটা ভাল হবে না।” তবু যে বলা হয় একঘেয়েমি আসতেই পারে। এমনকী একজন পার্টনার আরেক জনকে ‘আউটগ্রো’ করে যেতে পারেন। জীবনের সায়াহ্নে এসে দম বন্ধ করে থাকার কি প্রয়োজন আছে? সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “কোনও ধরা বাঁধা নিয়ম থাকে না। আমার জীবনে প্রচুর উদ্বেগ রয়েছে। টেনশন রয়েছে। হতাশা আছে। খানিক নিঃসঙ্গতাও আছে। তবে সেগুলো কাটানোর জন্য বই আছে, লেখালিখি আছে, রং-তুলি আছে। গ্রন্থই আমার গ্রন্থী। আমি কাউকে বিচার করছি না। তবে হয়তো কিছু হাইপার রোম্যান্টিকস আছেন যাঁরা প্রশ্ন করেন চিরকালের নবীনা বৌটি কেন নেই আর? আমি যা পেয়েছি ব্যক্তি জীবনে, তাতে পরিপূর্ণ না হলেও সন্তুষ্ট। জীবনের অনিবার্য নিয়মে, পেশার কারণে আই হ্যাভ বিন চেজড বাই উইমেন। এতে ব্র্যাগ করার কিছু নেই। আত্মতৃপ্তির কিছু নেই। আবার গেল গেল রব তোলারও কিছু নেই। এ বয়সে এসে স্ত্রীর প্রতি নির্ভরতা বেড়ে যায়। একটা নীরব তাকানো, দুঃসংবাদ এলে এক রকম ভাবে ফেস করা এটাই অনেক। যদি কেউ বলেন যে বিয়েতে আর কিছু দেওয়ার নেই, তা হলে বলতে হয় তিনি নিজেই ফুরিয়ে গিয়েছেন।”

পাশ থেকে তখন মক্ষীরানি বলে যান, “এ বয়সে তো মনে হয় আরও আঁকড়ে ধরি...” কারও কাছে হয়তো আঁকড়ে ধরাটার মধ্যেই রয়েছে পরমপ্রাপ্তির স্বাদ। যাঁরা বাঁধন ছিঁড়ে বেরোতে চাইছেন, তাঁদের কাছে হয়তো সেটাই দায়বদ্ধতা।

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

‘ঘরে বাইরে’ করার কথা মানিকদা অনেক দিন থেকে ভেবেছিলেন। এমনকী ‘পথের পাঁচালি’ করার আগেই ছিল। প্রথমে ওঁর মুখে শুনতাম আমাকেই নিখিলেশ করা হবে। তার পর বলতেন যদি সে রকম কোনও অভিনেতা পাওয়া যায় যিনি নিখিলেশ করতে পারবেন, তা হলে আমাকে সন্দীপের চরিত্রটা দেবেন। একটা সময় এল যখন মানিকদা নিজে থেকেই বলতে শুরু করলেন যে আমাকেই সন্দীপ করতে হবে! চুম্বন দৃশ্যটা চ্যালেঞ্জিং হলেও আমার কাছে ছবিতে আরও বেশ কয়েকটা কঠিন দৃশ্য ছিল। বিশেষ করে ওই প্রথম বক্তৃতা দেওয়ার দৃশ্যটা

সৌমিত্র

‘ঘরে বাইরে’র চুম্বন দৃশ্যগুলো সবথেকে চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমার বয়স তখন অল্প। তবে যখন সত্যজিত্‌ রায় আমাকে বলেন এই দৃশ্যের কথা, তখন আমি রাজি হয়ে যাই। একটাই কারণ। আমি জানতাম যে উনি শ্যুটিং করলে আমার ভয়ের কিছু থাকবে না। আরও একটা ব্যাপার ছিল। সে যুগে এই দৃশ্য শ্যুট করে সেটা নিয়ে ছবির মার্কেটিং করা হত না। তবে শ্যুটিং করার সময় বেশ সমস্যা হয়েছিল। প্রতিটি চুম্বনদৃশ্যে ৭-৮ টা করে টেক দিতে হত। আলিঙ্গন করার জায়গায় হাতের চুড়িগুলো বারবার সরে যাচ্ছিল। তখন সেলোটেপ লাগিয়ে ঠিক করতে হয়েছিল

স্বাতীলেখা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement