বাহুবলে কোণঠাসা টলিউড

‘বাহুবলী’ কতটা বিপাকে ফেলল বাংলা ছবিকে? উত্তর খুঁজল আনন্দ প্লাসবীরের অভাব ছিল না। তবে মাহিষ্মতীর সিংহাসন দখলের টক্করে এক্কেবারে ক্লাইম্যাক্সে বল্লালদেবকে খতম করে রাজা হলেন মহেন্দ্র বাহুবলী।বক্সঅফিস দখলের যুদ্ধটায় কিন্তু প্রথম রাউন্ড থেকেই বাকিরা কুপোকাত।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৭ ০০:৫৫
Share:

বাহুবলী

বীরের অভাব ছিল না। তবে মাহিষ্মতীর সিংহাসন দখলের টক্করে এক্কেবারে ক্লাইম্যাক্সে বল্লালদেবকে খতম করে রাজা হলেন মহেন্দ্র বাহুবলী।

Advertisement

বক্সঅফিস দখলের যুদ্ধটায় কিন্তু প্রথম রাউন্ড থেকেই বাকিরা কুপোকাত। তৃতীয় সপ্তাহান্তে পা রেখেও উত্তর কলকাতার ১০০০ আসনের হলে ম্যাটিনি শো ‘হাউজফুল’ যাচ্ছে রবিবারের ছুটিতে। সবে মুক্তি পাওয়া অঙ্কুশ-নুসরত-সায়ন্তিকাদের নতুন ছবি সেখানে টেনেটুনে অর্ধেক ভরাতে পারলেই হল-মালিক ধন্য। প্রভাবশালী প্রযোজক গোষ্ঠীর ছবি বলে তাও অনেকেই গিলতে বাধ্য হয়েছেন টলিউডি ছবিটি। শহরের এক নামী সিনেমা হল কর্তা দুশ্চিন্তায়, ‘‘পরের হপ্তায় টানার মতো ‘বাহুবলী টু’ ছাড়া সিনেমা কই? ভাবছি সচিন (সচিন: আ বিলিয়ন ড্রিমস) রিলিজ করাব।’’

গোটা দুনিয়ার কথা আপাতত উহ্য থাকুক। স্রেফ পশ্চিমবঙ্গেই তিন সপ্তাহ আগে ২০০টি হলে রিলিজ করেছিল দক্ষিণী ছবির হিন্দি সংস্করণ। এখনও হলের সংখ্যা কমেনি। ‘বাহুবলী’ কাহিনির দ্বিতীয় পর্ব ঘিরে উন্মাদনার দাপটে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘বিসর্জন’ পর্যন্ত কলকাতার বেশ কয়েকটি হল থেকে এক রকম নির্বাসিত। তখন অনেকেরই মনে ধরেছিল কৌশিকের আহত টুইট, ‘আমরা বাঙালি, ওরা বাহুবলী! ওরা শাসন করে, আমরা আত্মসমর্পণ...’

Advertisement

দুর্গা সহায়

বাঙালির অভিমান-অভিযোগ আপাতত ধোপে টিকছে না। ‘বাহুবলী’র সপ্তাহে মুক্তিপ্রাপ্ত অরিন্দম শীলের ‘দুর্গা সহায়’ ৩৮টা হল থেকে মোটে ১০টায় টিকে আছে। ‘বাহুবলী টু’ রিলিজের দু’হপ্তা বাদে মু্ক্তি পেলেও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের ‘পোস্ত’কে পর্যন্ত প্রত্যাশামাফিক হল বা শো পেতে হিমশিম খেতে হয়েছে। ‘বিসর্জন’ বা ‘পোস্ত’ তাও লড়াই করেছে। ‘পোস্ত’র বেশ কয়েকটি শো হাউজফুলও হয়েছে গত রবিবার। পরিচালকদের শ্লাঘা বলতে এখানে হিন্দি ছবি ‘সরকার থ্রি’, ‘হাফ গার্লফ্রেন্ড’, ‘হিন্দি মিডিয়াম’ বা ‘মেরি পেয়ারি বিন্দু’র থেকে এগিয়ে ‘পোস্ত’। তবু বাহুবলী-র দাপটে যে কোনও বাংলা ছবিকেই লিলিপুটের মতো দেখাচ্ছে।

পোস্ত

কৌশিক বা শিবপ্রসাদ অবশ্য এতটা হতাশ নন। তাঁদের দাবি, ২৫০ কোটির বাহুবলী-র সঙ্গে দু’-এক কোটি বাজেটের বাংলা ছবির ব্যবসার অনুপাত খুব খারাপ নয়। কৌশিকের কথায়, ‘‘দেখতে ছোট হলেও আমরাও রুমাল দিয়ে প্যান্ডেল করছি।’’ শিবপ্রসাদ মনে করাচ্ছেন, ‘বাহুবলী’র মতো ৯০০০ স্ক্রিনে রিলিজ না-হোক, মরাঠি ছবিও ১৩০০ স্ক্রিনে মুক্তি পায়। ওই তল্লাটে মাল্টিপ্লেক্সের সংখ্যাই বাংলার ১০ গুণ। সেখানে ‘বাহুবলী’ তো দূর আকাশের তারা, মরাঠি ছবি ‘সাইরাত’-এর মতো বক্সঅফিসে ২৫ কোটির কারবারও টালিগঞ্জের জন্য কঠিন বললে কম বলা হবে। তা-ই মাপা বাজেটে শহুরে দর্শককে টার্গেট করে সীমিত হলে ছবি রিলিজ করানো চলছে। ‘সস্তায় পুষ্টিকর’-এর মন্ত্রই কয়েক বছর ধরে টলিউডের ফর্মুলা। দেড়-দু’কোটির বেশি বাজেটের বাংলা ছবি ইদানীংকালে খরচ তুলতে পেরেছে এমন ঘটনা বিরল।

ইন্ডাস্ট্রির হিসেব, শাহরুখ-সলমন-আমিরদের ব্লকবাস্টার ছবিও এই বাংলা মুলুকে কমবেশি ১৫ কোটি আদায় করে। সেখানে প্রথম হপ্তাতেই ১৪ কোটির ওভারবাউন্ডারি হাঁকিয়ে শুরু প্রভাস-অনুষ্কাদের দৌড়! আরও দু’-এক সপ্তাহ হলে টিকলেও তা কোথায় থামবে বলা মুশকিল। বাংলা বাজারেও যে এত দূর এগোনো যায়, তা দেখাল হিন্দিতে ডাব করা তেলুগু ছবিই।

টালিগঞ্জ ভেবে সান্ত্বনা পেতে পারে, তেলুগু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ডাক নামও কিন্তু টলিউড!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement