লাদাখে সোনম ওয়াংচুকের সঙ্গে পাভেল। ছবি: সংগৃহীত।
২৫ মার্চ থেকে আমি লাদাখে। জানি, অনেকেই অনেক কিছু ভাববেন। কিন্তু আনন্দবাজার অনলাইনের জন্য লিখতে বসেছি সোনম স্যরের সভায় বসেই। সত্যি বলতে, ২১ দিন একটা মানুষ অনশন করছেন, অথচ তাঁর কথা কেউ শুনছে না! কলকাতায় আর পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকতে পারিনি। বিমান ধরে সোজা চলে এসেছি। এখানে আমার যোগাযোগও ছিল। ফলে বিষয়টা সহজ হয়ে যায়।
একটা মজার বিষয় আগে জানাই। এর আগে আমার ছবির একটা গানের শুটিং লাদাখে হওয়ার কথা ছিল। কাছের বন্ধুরাও অনেক বার লাদাখে ঘুরতে এসেছেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, আমি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ডপলার পজ়িটিভ। তাই পাহাড়ে একটা নির্দিষ্ট উচ্চতা ও তাপমাত্রার উপরে গেলে আমার হাত-পা অবশ হয়ে জ্বর আসে। তাই আমি এ যাবৎ লাদাখ থেকে নিজেকে দূরেই রেখেছি। কিন্তু এ বার আর নিজেকে আটকাতে পারলাম না। কারণ, মানুষটাকে আমি শ্রদ্ধা করি।
মঙ্গলবার থেকে আমি সোনমের দলের সঙ্গেই রয়েছি। আমি এখন যেখানে বসে লিখছি, আশপাশে অগণিত স্থানীয় বাসিন্দা। আর কিছু ক্ষণ পর সোনমজি বক্তব্য রাখবেন। এক দিন আগে সোনমজি ওঁর অনশন ভঙ্গ করেছেন। কিন্তু তিনি বলেছেন, আন্দোলন জারি থাকবে।
পাভেল লাদাখে কেন গেল, তা নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন উঠবে, জানি। পরিচালক হিসেবে আমার পরিচিতি। কিন্তু অনেকেই জানেন না, পাভেল এক সময় হোর্ডিংয়ে লিখত— ‘পরিবর্তন চাই’। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের সময় দাঁড়িয়ে প্রচুর প্রতিবাদ করেছি। তখন বয়স কম। স্বপ্ন দেখে আন্দোলন করে ভুল করিনি। কিন্তু আজ মনে হয়, ভুল করেছিলাম। তখন তো জানতাম না যে, শিক্ষামন্ত্রীর স্বরূপ এই! সোনম ওয়াংচুক তো ‘মাওবাদী’ নন, তিনি আমাদের দেশের রত্ন। কেন দাঁড়াব না তাঁর পাশে? আজকে এই মানুষটির কথা উঠলে আমরা ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবির কথা বলি। অথচ এই মানুষটা পড়ে আছেন, কেন্দ্রের একটা মানুষ এসে দাঁড়াল না! মনে পড়ছে, কংগ্রেসের আমলে অন্না হাজ়ারের অনশন মঞ্চেও সরকারি প্রতিনিধিরা হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু সোনমজির ক্ষেত্রে কেউ এলেন না। শুধু প্রকাশ রাজকে দেখলাম।
লাদাখে সোনমের সমর্থকদের সঙ্গে পাভেল। ছবি: সংগৃহীত।
দেশের তাবড় তারকা মহলের একটা বড় অংশ কেন লাদাখ নিয়ে চুপ করে রয়েছেন, তা নিয়ে সমাজমাধ্যমে প্রচুর মন্তব্য দেখেছি। দেশে এখন লোকসভা ভোটের আবহওয়া। টলিউডেও যিনি যখন পারছেন, দল বদলাচ্ছেন। আমার মনে হয়, সোনমের পাশে দাঁড়াতে হলে তো নিজের গাঁটের কড়ি খসাতে হবে! এখান থেকে তো কিছু পাওয়ার নেই। তাই হয়তো তারকাদের একটা বড় অংশ চুপ করে রয়েছেন।
সোনমজি যে চার দফা দাবি তুলে অনশন শুরু করেছিলেন, সেগুলো কিন্তু খুব সহজ। তার থেকেও বড় কথা, বিজেপি প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও তা পূরণ করেনি। তার মানে কি সেটা ভোটে জেতার কৌশল ছিল? কথা দিয়ে কথা না রাখলে তখন তো প্রতিবাদ করাই উচিত। লাদাখের প্রকৃতি ক্রমশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখানে যদি ভবিষ্যতে কর্পোরেট সংস্কৃতি শুরু হয়, তা হলে তো মুশকিল। পঞ্জাবের কৃষক মোর্চার কয়েক জন সোনমের সমর্থনে এখানে এসেছেন। কাল সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে ওঁদের এক জন বললেন, ‘‘পাহাড়ের হিমবাহ গলা জল পঞ্জাবের উপর দিয়ে যায় বলে আমরা চাষ করতে পারি।’’ লাদাখের নদীই যদি শুকিয়ে যায়, তা হলে আগামী দিনে কোম্পানির প্যাকেটবন্দি চাল কিনে কৃষকদের দিন চলবে কি না, সেটা ওঁদের চিন্তার বিষয়।
সোনমজির সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে। কলকাতা থেকে লাদাখের সমর্থনে এতটা পথ এসেছি শুনে প্রথমে খুব অবাক হয়েছিলেন। কিন্তু, আবার খুব খুশিও হয়েছেন। আমার প্রথম ছবির নাম (‘বাবার নাম গান্ধীজী’) শুনে হেসে বললেন, ‘‘খুব ভাল। আমিও গান্ধীজির আদর্শ মেনে চলি।’’ তার পর ‘রসগোল্লা’ ছবিটার নাম শুনে বললেন, ‘‘ওটা তো আপনাদের পরিচিতি।’’ আমি একটা অন্য রকমের ইউটিউব চ্যানেল শুরু করতে চাইছি। তিনি কথা দিয়েছেন আমাকে সাক্ষাৎকার দেবেন। কিন্তু এখন ওঁর শরীরটা একটু খারাপ বলে সময় চেয়েছেন। আমার এই চ্যানেলটা মূলত হিন্দি এবং ইংরেজি ভাষায় তৈরির ইচ্ছা রয়েছে। ওঁর সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে আমার চ্যানেলটা শুরু করার থেকে ভাল আর কী-ই বা হতে পারে? আগামী এপ্রিল থেকে আমার একটা ছবি শুরু হওয়ার কথা আছে। হয়তো এর মধ্যে আমাকে কলকাতা ফিরে যেতে হবে। কিন্তু সোনমজি সাক্ষাৎকারের সময় দিলেই আমি আবার লাদাখে চলে আসব।