Locket chatterjee

পর পর দু’দিন পুলিশের সঙ্গে সম্মুখসমর, তর্জনই সার? না কি আরও এক লড়াকু ইনিংসের লক্ষ্যে গা ঘামাচ্ছেন লকেট?

পুলিশের তৎপরতায় যখন এক্সাইড মোড়ে উত্তাপ বাড়ছে, তখনই সেখানে পৌঁছোন লকেট। বন্দরের অতিথি নিবাসের ভিতরে ঢুকে বিজেপি কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অনেকে লকেটের কাছে অভিযোগ জানান।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:২৭
Share:
State BJP General Secretary Locket Chatterjee surfaces in street battles again, Is it a Warm up for another challenging innings

সোমবার এক্সাইড মোড়ে তর্জনী উঁচিয়ে প্রিজ়ন ভ্যানে উঠছেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির প্রতিবাদে ‘কালীঘাট চলো’র ডাক দিয়েছিল বিজেপির যুব মোর্চা। সে কর্মসূচির জমায়েতস্থলে পৌঁছোনোর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদিকা তথা প্রাক্তন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। পুলিশের সঙ্গে লকেটের ধস্তাধস্তি-বচসায় উত্তপ্ত হয়ে উঠল এক্সাইড মোড়। কিছু ক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে গেল যান চলাচলও।

Advertisement

রবিবার রামনবমীর মিছিল এবং সোমবার যুব মোর্চার বিক্ষোভ। পর পর দু’দিন লকেট যে ভাবে তেড়েফুঁড়ে পুলিশের মুখোমুখি হলেন, হুগলির প্রাক্তন সাংসদকে অনেক দিন পর সেই মূর্তিতে দেখা যাচ্ছে বলে দলের লোকেরাই বলছেন। পাশাপাশিই জল্পনা শুরু হয়েছে, লকেট কি বিধানসভা ভোটের জন্য গা ঘামানো শুরু করে দিলেন?

এক্সাইড মোড়ে জমায়েতের ডাক দিয়েছিল যুব মোর্চা। সেখান থেকে মিছিল করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়ির দিকে যাওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু যুব মোর্চাকে এক্সাইড মোড়ে জমায়েতই করতে দিল না পুলিশ। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ থেকে সাধারণ কর্মী— গ্রেফতার করে গাড়িতে তোলা হল প্রায় সবাইকেই।

Advertisement

এক্সাইড মোড়ে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের যে অতিথি নিবাস আছে, সেখানে ঢুকে বিজেপি কর্মীদের পুলিশ গ্রেফতার করে। অতিথি নিবাসের নিরাপত্তারক্ষীরা পুলিশকে প্রথমে বাধা দেন। বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া পুলিশকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না বলে তাঁরা জানান। কিন্তু প্রায় জোর করেই পুলিশ ভিতরে ঢোকে বলে বিজেপির অভিযোগ। অতিথি নিবাসের ভিতর থেকে কয়েক জনকে গ্রেফতারও করে।

এক্সাইড মোড়ে উত্তাপ বাড়তে বাড়তেই সেখানে পৌঁছোন লকেট। অতিথি নিবাসের ভিতরে ঢুকে বিজেপি কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অনেকে লকেটের কাছে অভিযোগ জানান। লকেট তা নিয়ে কথা বলা শুরু করতেই পুলিশ তাঁকে ঘিরে নেয়। তার পরে গ্রেফতার করে প্রিজ়ন ভ্যানের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। লকেটকে গ্রেফতার করার জন্য মহিলা পুলিশবাহিনীকেই এগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। হুগলির প্রাক্তন সাংসদের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। কিছু ক্ষণের চেষ্টায় লকেটকে গাড়িতে তোলা হয়।

সোমবার ছিল লকেট-পুলিশ দ্বিতীয় বচসা। প্রথমটি হয়েছিল রবিবার সকালে নিউ টাউনে রামনবমীর মিছিলে। নিউ টাউন হনুমান মন্দির থেকে মিছিল যে পথে যাওয়ার কথা, সেই পথে পুলিশ মিছিল যেতে দিচ্ছে না বলে লকেট অভিযোগ করেন। পুলিশের বক্তব্য ছিল, মিছিলের ‘রুট’ বদল করার চেষ্টা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত পুলিশের বেঁধে দেওয়া পথেই মিছিল করতে হয় বিজেপিকে। কিন্তু অনেক দিন পরে লকেটকে আবার রাস্তায় নেমে লড়তে দেখা যায়।

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে হুগলিতে লকেট হেরে যান তৃণমূলের রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তার পর থেকে প্রকাশ্য কর্মসূচিতে লকেটের দৌড়ঝাঁপ তেমন দেখা যাচ্ছিল না। এমনকি, আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের সমাবেশে হুগলি জেলা তথা মধ্যবঙ্গের প্রায় সব বিজেপি নেতাকে দেখা গেলেও লকেটকে দেখা যায়নি। তিনি অবশ্য তখন অসুস্থ ছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু যে জেলা থেকে তিনি ২০১৯ সালে সাংসদ হয়েছিলেন, সেই হুগলিতে রাজনীতি করতে যে তিনি আর তেমন উৎসাহী নন, তা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘আমায় শুধু হুগলিতেই রাজনীতি করতে হবে বা শুধু হুগলি জেলা থেকেই ভোটে লড়তে হবে, এমন ভাবা হচ্ছে কেন? আমি তো রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদিকা। আমি তো সারা রাজ্যেই দলের জন্য কাজ করতে পারি। ভোটে লড়তে হলে হুগলিতেই লড়তে হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা তো নেই।’’

লোকসভা ভোটের পর থেকে কোন বড় কর্মসূচিতে লকেটকে এর আগে কবে দেখা গিয়েছে, তার জবাব বিজেপি কর্মীরাও চট করে দিতে পারছেন না। আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে ২০২৪ সালের অগস্টে শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে বিজেপির ধর্নায় রাজ্য বিজেপির অন্য প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গে লকেটকে দেখা গিয়েছিল। তা-ও তেমন ‘উজ্জ্বল’ ভূমিকায় নয়। সংগঠন পর্বের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছিলেন। দল যখন যে বৈঠকে ডাকছিল, সেখানে হাজির হচ্ছিলেন। কিন্তু সেটুকুই। মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী থাকাকালীন বা সাংসদ থাকাকালীন ‘লড়াকু লকেট’ কার্যত নিখোঁজই ছিলেন।

সংগঠন পর্ব মিটিয়ে দল যখন বিধানসভা নির্বাচনের জন্য কোমর বাঁধছে, তখন লকেট কি ফের স্বমহিমায় ফিরছেন? রাস্তাঘাটে দলের কর্মসূচিতে পর পর দু’দিন তাঁর ‘লড়াকু’ ভঙ্গিই দেখা গিয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়েছেন। পুলিশের ধাক্কা খেতে খেতে প্রিজ়ন ভ্যানে উঠেছেন। ঘুরে দাঁড়িয়ে তর্জনী তুলেছেন।

তর্জনই সার হবে কি না, সে জবাব দেবে ২০২৬। কিন্তু লকেট ‘লড়াকু’ ইনিংসের লক্ষ্যে গা ঘামানো শুরু করে দিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement