‘বুমেরাং’ ছবিতে রুক্মিণীর বিশেষ লুক। ছবি: সংগৃহীত।
টলিপাড়ায় আপাতত তাঁকে নিয়ে চর্চা। ছবির ফার্স্ট লুক নয়, ‘বুমেরাং’ ছবিতে ন্যাড়া মাথা লুকের জন্য আলোচনার কেন্দ্র রয়েছেন রুক্মিণী মৈত্র। ইন্ডাস্ট্রি কী বলছে? এই রূপটানের জন্য কী ভাবে প্রস্তুতি নিতে হত তাঁকে, আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন রুক্মিণী।
ন্যাড়া মাথায় অভিনেত্রীকে দেখার পর তিনি কী রকম প্রতিক্রিয়া পেলেন? রুক্মিণী বললেন, ‘‘খুব ভাল। অনেকেই প্রশংসা করেছেন। এমনকি, মুম্বইয়েও আমার লুক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আসলে এই প্রথম আমার কোনও লুক নিয়ে এতটা চর্চা হল।’’ রুক্মিণী টলিপাড়ার প্রথম সারির অভিনেত্রী। অনেকেই হয়তো এই ধরনের লুকে অভিনয় করতে রাজি হতেন না। প্রস্তাব আসার পর তাঁর মনের মধ্যে কী চলছিল? রুক্মিণী বললেন, ‘‘মানুষ ভাল বলবেন, না কি খারাপ, আমি সে সব কিছুই ভাবিনি। আমার কাজটা করে ভাল লাগছে কি না, সেটাই বেশি করে মাথায় কাজ করছিল।’’
ইদানীং, পান থেকে চুন খসলে তারকাদের নিয়ে সমাজমাধ্যমে ট্রোলিং শুরু হয়। তবে সে সবকে পাত্তা দিতে নারাজ অভিনেত্রী। রুক্মিণীর সাফ উত্তর, ‘‘লোকে কী ভাববে, সেটা ভেবে জীবন যাপন করলে তখন তা আর নিজের জীবন থাকে না! সেটা করলে আমার জীবনের রিমোটটা তখন তাঁদের হাতে থাকবে। আর আমি সত্যিই রোবট হয়ে যাব।’’
ছবি: সংগৃহীত।
ছবিতে রুক্মিণীর বিপরীতে রয়েছেন জিৎ। দেব আপাতত নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। দুই সুপারস্টার তাঁর এই লুক প্রথম দেখার পর কী বলেছিলেন? প্রথমেই অভিনেত্রী জিতের প্রসঙ্গে এলেন। বললেন, ‘‘জিৎদা খুবই খুশি হয়েছিলেন এবং বিষয়টা সমর্থন করেছিলেন। সেটে প্রথম দিন আমাকে ওই মেকআপে দেখে জিৎদা বললেন, ‘বাহ্! বেশ ভাল লাগছে তো তোমাকে দেখতে।’’’ তবে শুটিংয়ে নয়, প্রথম দিন মেকআপ তৈরি হতেই ফ্লোর থেকেই দেবকে নিজের ছবিটি তুলে পাঠিয়েছিলেন রুক্মিণী। ছবিতে বিশেষ কারণে একটি সুপারবাইক ব্যবহার করা হয়েছে। রুক্মিণী বললেন, ‘‘আমি ওই সুপারবাইকে বসেই ছবিটা তুলে দেবকে পাঠিয়েছিলাম। ও লিখে পাঠিয়েছিল, ‘মাথার চুল ছাড়াও যে তোমাকে এতটা ভাল দেখতে হতে পারে, এর আগে আমার কোনও ধারণা ছিল না।’ আমাকে নাকি সুপারমডেলের মতো দেখতে লাগছে, বলেছিল দেব।’’
রুক্মিণীর মতে, সাধারণত পর্দায় মহিলাদের ন্যাড়া দেখানো হলে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নেপথ্যে নারীর বৈধব্য বা তাঁর কোনও রোগের কারণকে তুলে ধরা হত। অভিনেত্রী বললেন, ‘‘কিন্তু হলিউডে তো এ রকম লুকে অনেক অভিনেত্রীকেই দেখা গিয়েছে। আসলে ন্যাড়া হয়েও যে গ্ল্যামারাস হওয়া সম্ভব, আমার মনে হয়, লুকটা সে কথাই প্রমাণ করে।’’
অনুরাগী বা দর্শকরা অভিনেত্রীর যে লুকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, সেটা কিন্তু বাস্তবায়িত করা এতটা সহজ ছিল না। ছবিতে দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেছেন রুক্মিণী। একটি বাস্তব চরিত্র, অন্যটি রোবটের। তিনি জানালেন, রোবটের চরিত্রের রূপটানের জন্য ২ ঘণ্টা সময় লাগত। তার পর ন্যাড়া লুকের জন্য প্রস্থেটিক তৈরিতে আরও ৩ ঘণ্টা। ৫ ঘণ্টা কী ভাবে চেয়ারে বসে থাকতেন রুক্মিণী। অভিনেত্রী বললেন, ‘‘খুব কঠিন। মনে আছে ভোর ৫টা থেকে মেকআপ শুরু হত। কিন্তু বীথিকা (রূপটান শিল্পী বীথিকা বেনিয়া) আমার সঙ্গে দীর্ঘ দিন কাজ করছে। খুব ভাল কাজ করেছে।’’ পরিশ্রমের ফল যে ভাল হয়, তা বিশ্বাস করেন রুক্মিণী। বললেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত যখন নিজের লুকটা দেখলাম, তখন বুঝলাম, আমাদের পরিশ্রম সার্থক।’’
আর রুক্মিণীর এই লুকের নেপথ্য যাঁর হাতের কাজ, সেই বীথিকা কী বলছেন? ব্যক্তিগত রূপটান শিল্পী হিসেবে রুক্মিণীর সঙ্গে প্রায় ৬ বছর কাজ করছেন তিনি। আর ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছেন প্রায় ১৫ বছর। তবে প্রস্থেটিকের কাজ করলেন এই প্রথম। বীথিকা বললেন, ‘‘পরিচালক এ রকম একটা লুক চেয়েছিলেন। মাত্র ২৪ ঘণ্টা সময় ছিল। কিন্তু চ্যালেঞ্জটা আমি গ্রহণ করেছিলাম।’’ ইন্ডাস্ট্রিতে প্রস্থেটিকের কাজ বলতেই মূলত পুরুষ রূপটান শিল্পীদের প্রসঙ্গ আসে। বীথিকার কথায়, ‘‘আসলে মহিলারাও যে ভাল কাজ করতে পারেন এই কাজের মাধ্যমে আমি সেটাই প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম।’’
তবে এক রাতের মধ্যে কী ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলন তিনি? বিথীকা বললেন, ‘‘কোনও রেফারেন্স ছিল না। আমার মা আমাকে খুব সাহায্য করেছিলেন। সারা রাত জেগে আমি আমার মায়ের উপর লুকটা তৈরি করি। সেটা পছন্দ হয়। তার পর পরদিন ভোর পাঁচটায় ফ্লোরে রুক্মিণীর উপর।’’ রুক্মিণী ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারির অভিনেত্রী। তাঁকে ন্যাড়া মাথায় কেমন দেখাবে, তা নিয়েও শুরুতে চিন্তিত ছিলেন বিথীকা, বললেন, ‘‘খুব বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু ভয় করেনি। তার পর লুকটা দেখে যখন সকলের পছন্দ হল, তখন আমার মনের জোর বাড়ে।’’
প্রস্থেটিকের ক্ষেত্রে ভাল প্রোডাক্ট ব্যবহার না করলেই সমস্যা হতে পারে। বীথিকা জানালেন, সেখানে এক জন অভিনেত্রীর উপর তিনি এই পরীক্ষা করবেন বলে শুরু থেকেই সাবধানী ছিলেন। রুক্মিণীর রোবটের লুক তৈরিতে বিশেষ এক জোড়া কনট্যাক্ট লেন্সও ব্যবহার করেছেন বিথীকা। তা নাকি বিদেশ থেকে আমদানি করত হয়। তাঁর কথায়, ‘‘নীল রঙের ওই লেন্সটা সর্বাপেক্ষা ৩০ দিন ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এক বার অর্ডার করার পর কোম্পানি সেটা তৈরি করা বন্ধ করে দেয়। আমরা এক বছর ধরে এই একই লেন্স দিয়ে শুটিং করি। এটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।’’