Valentine’s Day special

সময়ের সঙ্গে বদলে যায় প্রেমের সংজ্ঞা, ভালবাসা কি ‘পুরাতন’ হয়?

প্রজন্মের সঙ্গে বদলে যায় প্রেমের ধরন। কিন্তু তবুও প্রেম আসে জীবনে। প্রেম দিবসে আনন্দবাজার অনলাইনের পাতায় লিখলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।

Advertisement

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:০০
Share:
Bengali actress Rituparna Sengupta writes about her upcoming film Puratawn on Valentine’s Day dgtl

‘পুরাতন’ ছবির একটি দৃশ্যে (বাঁ দিকে) ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এবং ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। ছবি: সংগৃহীত।

আমার কাছে প্রেম একটা সনাতন ধারণা। যুগে যুগে তার চরিত্র এবং রূপরেখা হয়তো বদলে যায়। কিন্তু প্রেম ছাড়া এই পৃথিবী এবং আমাদের অস্তিত্ব কল্পনা করাও কঠিন। প্রেম দিবসে ভালবাসা নিয়ে লিখতে বসে অনেকগুলো ভাবনা মাথায় চলে আসছে। সেগুলোই আনন্দবাজার অনলাইনের পাঠকদের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছি।

Advertisement

যে কোনও সম্পর্কের ক্ষেত্রেই প্রেমের জায়গাটা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ‘প্রেম’ শব্দটা শুনলে, আগেই আমরা নর-নারীর প্রেমের কথা মনে করি। কিন্তু প্রেম তো শুধুই আর এক জন পুরুষ এবং নারীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। দুই বন্ধুর ভালবাসা হতে পারে। অভিভাবকের সঙ্গে তাঁর সন্তানের মধ্যেও প্রেম, মায়া, মমত্ব থাকতে পারে। সময়ের সঙ্গে প্রেম দিবসের সংজ্ঞাও তাই অনেকাংশে বদলে গিয়েছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রেমকে নতুন ভাবে হয়তো বিশ্লেষণ করা যায়। কিন্তু প্রেমের ধারাবাহিকতায় তাতে কখনও ছেদ পড়ে না। মানুষের জীবনে প্রেম তো চিরকালীন। যুগ পাল্টালেও প্রেমের বীজটাও তাই আমাদের মধ্যে রয়েই গিয়েছে।

‘পুরাতন’ ছবিতে মা ও মেয়ের সম্পর্কের কথা তুলে ধরতে চেয়েছি। মা শর্মিলা আন্টি (শর্মিলা ঠাকুর) আর আমি মেয়ে। সেখানে দু’জনের সম্পর্কের মধ্যে অদ্ভুত কয়েকটি স্তর লুকিয়ে রয়েছে। কখনও তাদের দেখলে যেন মনে হবে, দু’জনের মধ্যে অনেকগুলো অচেনা জায়গা রয়ে গিয়েছে। আবার কিছু চেনা জায়গা রয়েছে, অথচ সেটা হয়তো কেউই উপলব্ধি করতে পারছে না। যেমন, এই মুহূর্তে আমার ‘পারমিতার একদিন’ ছবিটার কথা মনে পড়ছে। শাশুড়ি এবং বৌমার মধ্যে কী সুন্দর একটা সম্পর্ক। বৌমা যখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, তখন শাশুড়ি একটা বাচ্চার মতো কাঁদছে। কোথাও যেন দু’জনের মধ্যে একটা প্রেম এবং অবলম্বন লুকিয়ে ছিল। আবার পারমিতার সঙ্গে যখন শ্রীবাস্তবের প্রেম এবং বিয়ে হচ্ছে, তখন স্বামীর সঙ্গে তার সম্পর্ক কিন্তু একদম শিথিল হয়ে গিয়েছে। দুটো আলাদা প্রেমকে ভিন্ন আঙ্গিকে গ্রহণ করে সে।

Advertisement

আমার মনে হয় মানুষের জীবনে প্রেম একটা খোলা জায়গা। কখন কোন পরিস্থিতিতে যে সেখানে বাতাস এসে তাকে নাড়া দেবে, তা বলা খুব কঠিন। যে কোনও বয়সেই এই জিনিসটা ঘটতে পারে। যেমন ‘বেলাশুরু’ ছবিতে আমরা দেখি সৌমিত্র জেঠু (সোমিত্র চট্টোপাধ্যায়) এবং স্বাতীলেখা আন্টির (স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত) প্রেমটা তাঁরা জীবনে অনেক পরে গিয়ে নতুন করে আবিষ্কার করেন। আবার ‘অলীক সুখ’ ছবিতে প্রেম যেন জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আর মেয়েটা বার বার সেটাকে আঁকড়ে ধরতে চাইছে। অথচ দম্পতি একসঙ্গেই রয়েছে। স্বামী ভাবছে যে প্রেম তো এ রকমই হয়।

লিখতে লিখতে অনেকগুলো উদাহরণ মনে পড়ছে। যেমন ‘গহীন হৃদয়’ ছবিতে স্বামী ক্যানসারে আক্রান্ত। তখন স্ত্রী উপলব্ধি করে যে মনের মিল না থাকলেও স্বামীকে সে কতটা ভালবাসে। এই পারস্পরিক নির্ভরতাও তো প্রেমই। আর যাকে সে সত্যি সত্যিই ভালবেসেছিল, সেই জায়গাটা ক্রমশ শিথিল হয়ে যাচ্ছে।

আমার মনে হয়, প্রেমের ক্ষেত্রে অনেকগুলো রসায়ন একসঙ্গে কাজ করে। কখনও তাদের অভিমুখ আলাদা হতে পারে। প্রেমকে তাই নতুন ভাবে মানুষ বার বার আবিষ্কার করে। আবার ‘পুরাতন’ ছবিতে নর-নারীর প্রেমেরও একটা অন্য দিককে ধরতে চেয়েছি। ছবিতে আমার স্বামীর চরিত্রে ইন্দ্রনীল (ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত) অভিনয় করেছে। মা (শর্মিলা ঠাকুর) এক ভাবে প্রেমকে দেখছে, আবার আমরা অন্য ভাবে দেখছি। এই ছবিতেও প্রেমকে আমি অন্য ভাবে আবিষ্কার করেছি। ‘পুরাতন’ নতুন ভাবে আমাদের দু’জনকেই একটা পুরনো প্রেমকে চিনিয়েছে।

‘পুরাতন’ ছবির একটি দৃশ্যে শর্মিলা ঠাকুর। ছবি: সংগৃহীত।

আরও একটা বিষয় না জানালেই নয়, ‘পুরাতন’-এ অভিনয় করতে গিয়ে আমি ভীষণ ভাবে শর্মিলা আন্টির প্রেমে পড়েছি। একজন সুপারস্টার যাঁর সঙ্গে প্রেম করেছেন, জীবন কাটিয়েছেন— সেখানে কিন্তু নিজেদের মধ্যে সাংস্কৃতিক পার্থক্য থাকলেও সেটা কখনও তাঁদের সম্পর্কে কোনও সমস্যা সৃষ্টি করেনি। দু’জন সফল ব্যক্তিত্ব একসঙ্গে থাকলে অনেক সময়েই সেখানে সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিন্তু শর্মিলা আন্টির ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। তিনি যে ভাবে তিন সন্তানকে বড় করে তুলেছেন সেটাও তো শিক্ষণীয়।

ভালবাসা কী ভাবে অন্যকে অনুপ্রাণিত করতে পারে, সেটাও শর্মিলা আন্টির থেকে নতুন করে শিখলাম। আমার মা যখন হাসপাতালে কোমায় আচ্ছন্ন, আমাকে শর্মিলা আন্টি বলেছিলেন, ‘‘মায়ের কানে কানে কথা বলবে। তিনি কিন্তু শুনতে পাচ্ছেন।’’ কী অদ্ভুত সমাপতন। সম্প্রতি ওঁর পরিবারে এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। পুত্র সইফকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছেন আন্টি। শুনলাম, সেখানেও নাকি ছেলের হাত ধরে ছোটবেলার গান শুনিয়েছেন। এটাও তো প্রেম।

সব শেষে একটাই কথা বলতে পারি, প্রেম আমাদের বাঁচতে শেখায়। জীবনমুখী করে তোলে। আজ প্রেম দিবস প্রত্যেকের ভাল কাটুক। সকলেই ভাল থাকুন, ভালবাসায় থাকুন, এটুকুই চাই।

(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement