বিনেশের পাশে টলিপাড়ার একাংশ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মাত্র ১০০ গ্রাম! সামান্য ওজন বেশি হওয়ার জন্য বুধবার প্যারিস অলিম্পিক্সে কুস্তির ফাইনাল থেকে ছিটকে গেলেন বিনেশ ফোগাট। সেই সঙ্গে তারকা কুস্তিগিরকে কেন্দ্র করে দেশবাসীর মেডেলের স্বপ্নও যেন অধরা রয়ে গেল। কিন্তু সত্যিই কি তাই? কারণ দেশবাসী বিনেশকে জয়ী হিসেবেই দেখছে। সোনা বা রুপো নয়, বিনেশ যে ভালবাসার পদকে ভারতীয়দের মন জয় করে নিয়েছে সে কথাই সকাল থেকে সমাজমাধ্যমে বার বার উঠে এসেছে।
বিনেশের ঘটনায় হতাশার আবহ টলিপাড়ায়। অনেকেই বিষয়টিতে মর্মাহত। সমাজমাধ্যমে অনেকেই দেশের কুস্তিগিরের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবে একই সঙ্গে অলিম্পিক্সের নিয়ম সম্পর্কেও তাঁরা শ্রদ্ধাশীল। অভিনেত্রী বিদীপ্তা চক্রবর্তী বললেন, ‘‘বুঝতে পারছি না। কিছু দিন আগে দিল্লিতে উনি কুস্তিগিরদের আন্দোলনের মুখ ছিলেন। তাই ‘ষড়যন্ত্র’ তত্ত্বকেও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আশা করছি বিষয়টা নিয়ে আরও তথ্য প্রকাশ্যে আসবে।’’ বিদীপ্তার মন ভেঙে গিয়েছে। তবে অভিনেত্রী মনে করেন, বিনেশ দেশবাসীর ভালবাসায় জিতে গিয়েছেন। বললেন, ‘‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস ভবিষ্যতে উনি আবার সুযোগ পাবেন এবং নিশ্চয়ই নিজেকে প্রমাণ করবেন।’’
মনখারাপ ঋতাভরী চক্রবর্তীরও। বিষয়টিকে তিনি দুর্ভাগ্য হিসেবেই দেখছেন। তবুও ঋতাভরী নিয়মকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘আমি নিজে বডি পজ়িটিভিটিতে বিশ্বাসী। কিন্তু এটা তো অলিম্পিক্স। প্রতিযোগিতার নিয়ম তো সকলের জন্যই সমান।’’
অভিনেত্রীরা নিয়মিত ডায়েট করেন। চরিত্রের প্রয়োজনে মাঝেমধ্যেই তাঁদের ওজন বাড়াতে বা কমাতে হয়। ১০০ গ্রাম নয়, ঋতাভরী জানালেন, মহিলাদের ক্ষেত্রে ওজন বাড়া বা কমার ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় নির্ভর করে। তাঁর কথায়, ‘‘এক দিন কেউ একটু বেশি খাওয়াদাওয়া করলেই তো পরের দিন তার ওজন বেড়ে যায়। নেপথ্যে হরমোন বা পিরিয়ডস জনিত সমস্যাও থাকতে পারে। কখনও কখনও এক দিনে মহিলাদের ছ’শো গ্রাম পর্যন্ত ওজনও বেড়ে যেতে পারে।’’
দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, অলিম্পিক্সে বিনেশের লড়াই শেষ হলেও তিনি যে জয়ী, সে কথাই বিশ্বাস করেন ঋতাভরী। বললেন, ‘‘নিয়মের ঊর্ধ্বে তো কেউ নয়। আজকে ওঁর জায়গায় আমি থাকলেও হয়তো ঝগড়া করতে পারতাম না। কিন্তু আমার কাছে বিনেশ জয়ী। গর্বিত হয়েই তিনি দেশে ফিরবেন।’’
অভিনেত্রী রূপাঞ্জনা মিত্রও বিষয়টি নিয়ে অবগত। শুটিংয়ের ফাঁকে বললেন, ‘‘খবরটা পেয়েই মনখারাপ হয়ে গিয়েছে। কোনও সান্ত্বনাবাক্যই সেখানে যথেষ্ট নয়, কাম্যও নয়। আমি কোনও রকম ‘ষড়যন্ত্র’ তত্ত্ব দিয়ে ওঁর পরিশ্রমকে আমি অশ্রদ্ধা করতে চাই না।’’ রূপাঞ্জনা মনে করেন, একজন ক্রীড়াবিদ অলিম্পিক্সের জন্য নিজেকে দীর্ঘ দিন ধরে তৈরি করেন। সেখানে শেষে এই ধরনের ঘটনা শুধু বিনেশের নয়, সারা দেশের মন ভেঙে দিয়েছে। বললেন, ‘‘৫৩ কেজি থেকে ৫০ কেজির গণ্ডিতে আসার জন্য উনি তো লাগাতার চেষ্টা করেছেন। সেটাকে আমাদের সম্মান করা উচিত।’’ বিনেশের জন্য মন ভাঙলেও অলিম্পিক্সের নিয়মাবলির প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে রূপাঞ্জনার। তিনি বলেন, ‘‘এক নম্বরের জন্যই তো কেউ পরীক্ষায় প্রথম বা দ্বিতীয় হয়। কিন্তু আজ দেশবাসী যে ভাবে ওঁকে নিয়ে আলোচনা করছেন, তাতেই তো প্রমাণিত বিনেশ জিতে গিয়েছেন।’’