মনোজ মিত্রের স্মৃতিচারণায় মাধবী মুখোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
একের পর এক খারাপ খবর। পরিচিত মানুষেরা এক এক করে চলে যাচ্ছেন। আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে মনোজবাবুর প্রয়াণের খবরটা শুনেই মনখারাপ হয়ে গেল। কিছু দিন আগে শুনেছিলাম, তিনি হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তার পর মঙ্গলবার এই দুঃসংবাদ!
মনোজবাবুর সঙ্গে তো আমার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। আজকে অনেক স্মৃতিই মনের মধ্যে ভিড় করে আসছে। নাটকের সূত্রেই তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ। বিদেশে মনোজবাবুর লেখা নাটকে অভিনয় করেছি। দেখা হলেই দেশ-বিদেশের নাটক নিয়ে আমাদের মধ্যে কথা হত। নাটক নিয়ে তাঁর ছিল অগাধ জ্ঞান। শুনতে ভালই লাগত। বাংলায় একের পর এক পেশাদার নাট্যমঞ্চগুলো যে শেষ হয়ে গিয়েছে, সেটা মনোজবাবুকে খুবই কষ্ট দিত। বলতেন যে, বিদেশে এ রকম ঘটনা কেউ বিশ্বাস করতেই পারেন না। তাঁর থেকে অভিনয় প্রসঙ্গে অনেক কিছু শিখেছি।
মনোজবাবুর লেখা নাটক অবলম্বনে ছবি তৈরি করবেন পরিচালক তপন সিংহ। ‘বাঞ্ছারামের বাগান’। দু’জনে সেই প্রথম একসঙ্গে বড় পর্দায় অভিনয় করব। শুটিং ফ্লোরেই প্রথম মনোজবাবুর অভিনয় দেখলাম। তখন তাঁর অল্প বয়স, কিন্তু বৃদ্ধের চরিত্রে অভিনয় করছেন। চরিত্রটা ভাল করে হাঁটতে পারছে না। তাই একটানা মাটিতে বসে শট দিয়ে চলেছেন! ‘বাঞ্ছারামের বাগান’ ছবিতে তাঁর অভিনয় দেখে বিস্মিত হয়ে যাই।
পরবর্তী সময়ে আমরা বহু ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছি। মনে পড়ছে, কয়েক বছর আগেও আমি আর মনোজবাবু একটা ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেছিলাম। ছবিটার জন্য আউটডোরেও গিয়েছিলাম। ছবিটার নাম মনে নেই। কিন্তু, কোনও কারণে সেই ছবিটা আর মুক্তি পায়নি।
মনোজবাবুর সঙ্গে আমার পরিবারের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। আমি দক্ষিণ কলকাতায় থাকি আর তিনি থাকতেন সল্টলেকে। তাই শেষের দিকে খুব একটা দেখা হত না। কিছু দিন আগে শুনলাম দেবরাজ (অভিনেতা দেবরাজ রায়) চলে গেল। এ বার মনোজবাবু। ঈশ্বর ভাল মানুষগুলোকে বড্ড তাড়াতাড়ি তাঁর কাছে ডেকে নেন!
(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত।)