প্রয়াত মনোজ মিত্র। —আনন্দবাজার আর্কাইভ।
স্বাধীনতার লগ্নে তিনি জানতেন, তাঁর ‘দেশ’ খুলনা ভারতেই পড়বে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে জানা গেল, সেই জেলা ‘বিভুঁই’ হয়ে গিয়েছে চুপিসারে। দেশভাগ আর রাষ্ট্রিক খামখেয়ালকে কি এক মশকরা হিসেবে দেখেছিলেন মনোজ মিত্র নামের সে দিনের বালকটি? আর তাই সারা জীবন একটা কৌতুকমিশ্রিত নৈর্ব্যক্তিকতা বার বার দেখা দিয়েছে তাঁর লেখা নাটকে, তাঁর অভিনীত চরিত্রগুলিতে? ‘সাজানো বাগান’ থেকে ‘নরক গুলজার’-এ ছড়িয়ে রয়েছে সেই জীবনবোধ, যেখানে প্রবল সঙ্কট-মুহূর্তেও চরিত্রেরা কিছুতেই রসবোধ হারায় না। ‘বাস্তব’-এর সমান্তরালে যে বজায় থাকে ‘অ-সম্ভব’, জগতের বিচিত্র সেই স্বাদকে তিনি চিনতে পেরেছিলেন শৈশব থেকেই।
১৯৩৮ সালে অবিভক্ত বাংলার খুলনা জেলার সাতক্ষীরা মহকুমার ধূলিহর গ্রামে মনোজের জন্ম। তিনি তাঁর বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। বাবা অশোককুমার মিত্র প্রাথমিক জীবনে শিক্ষকতা করতেন। পরে ব্রিটিশ সরকারের ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক হিসেবে কাজ করেন। বাবার চাকরির সুবাদে ছোটবেলায় মনোজকে বাংলার বিভিন্ন জায়গায় থাকতে হয়েছে। ফলে শৈশব থেকেই বিবিধ প্রকৃতির মানুষ, তাদের বিচিত্র সব পেশা আর তার পাশাপাশি প্রকৃতির উজাড় করা সৌন্দর্যকে যে তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন, সে কথাও বার বার উঠে এসেছে তাঁর বহু লেখায়, সাক্ষাৎকারে। মনোজের শিক্ষা শুরু হয় গ্রামের স্কুলেই। কিন্তু বাল্যকাল থেকে রুগ্ন মনোজকে ঘুরতে হয়েছে বাবার কর্মস্থল অনুযায়ী। ছোটবেলায় এক গৃহশিক্ষকের সাহচর্য তাঁকে পাঠ্য বিষয়ের বাইরের জগৎ সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলে। সৃজনশীল লেখালিখির সলতে পাকানোর কাজ সম্ভবত সেই সময় থেকেই শুরু হয়।
প্রথমে দর্শনের অধ্যাপক হিসাবে পেশাজীবন শুরু করলেও পরে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক বিভাগেই অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন। ছবি: সংগৃহীত
স্বাধীনতা বালক মনোজের কাছে এক আশ্চর্য ঘটনা। ১৯৪৭-এর ১৫ অগস্ট তাঁর বাবার তৎকালীন কর্মস্থান ময়মনসিংহ পড়ে পাকিস্তানে আর তাঁর পৈতৃক নিবাস খুলনা জেলা পড়ে ভারতে। এর এক দিন পরেই জানতে পারেন, খুলনা পড়েছে পাকিস্তানে। মুহূর্তের মধ্যে নিজভূমিকে পরবাসে পরিণত হতে দেখেই কি জীবনের নিষ্ঠুর রসিকতার দিকটিকে চিনতে শুরু করেন মনোজ? পরে যখন তিনি মনপ্রাণ দিয়ে নাটক লিখছেন, পরিচালনা করছেন, অভিনয়ে নামছেন, তখনও এই দৈব-বিড়ম্বিত মানুষের বিষয় থেকে সরে আসেননি। আবার এই বিড়ম্বনাকে অতিক্রম করে উঠে দাঁড়ানো মানুষকেও তিনি দেখিয়েছেন প্রায় সর্বত্র।
নাটক-যাত্রা-থিয়েটার ধূলিহরের মিত্র পরিবারে খানিক পরিত্যাজ্য ছিল। কিন্তু গ্রামের সম্পন্ন গৃহস্থ হিসাবে পুজোর সময় আর বসন্তকালে তাঁদের পরিবারের চণ্ডীমণ্ডপেই নাটক মঞ্চস্থ হত। কড়া ধাতের এক কাকার দাপটে বাড়ির ছেলেপুলেরা সে দিকে ঘেঁষতে পারত না। কিন্তু এক সময়ে নিয়ম শিথিল হয়। ‘রামের সুমতি’র মতো ‘নিরীহ’ নাটক প্রথম দেখার সুযোগ পান মনোজ। প্রায় কাছাকাছি সময়ে গ্রামের বিজয়া সম্মিলনী উপলক্ষে আয়োজিত রবীন্দ্রনাথের হাসির নাটক ‘রোগের চিকিৎসা’য় প্রথম অভিনয়। তার পরে গ্রামের নাটকে প্রায়শই অংশ নিয়েছেন তিনি। এই সব নাটকে ‘বাস্তব’কে নিয়ে আসতে গিয়ে মাঝেমাঝেই বিপাকে পড়তেন মনোজ। সেই সব কৌতুকের স্মৃতি তিনি অকপটেই বলেছেন, লিখেছেনও।
১৯৫০ নাগাদ চলে আসেন এ পার বাংলায়। স্কুলজীবনেই থিয়েটারচর্চার সূত্রপাত। ১৯৫৪ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হলে সহপাঠী হিসাবে পান বেশ কিছু সমমনস্ক মানুষকে। কলেজের অধ্যাপকদের অনেকেই ছিলেন সৃজনশীল বিষয়ে উৎসাহদাতা। এই সময়েই মনোজ ছোটগল্প লিখতে শুরু করেন। পরে এই কলেজেই দর্শনে অনার্স নিয়ে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা চলাকালীন পার্থপ্রতিম চৌধুরীর মতো বন্ধুদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন নাটকের দল ‘সুন্দরম’। এই পর্ব থেকেই পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন নাটকের সঙ্গে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ পড়াকালীনই দলের জন্য প্রথম নাটক লেখা। ২১ বছর বয়সে মনোজের প্রথম লেখা নাটক ‘মৃত্যুর চোখে জল’। সেটি লেখা হয়েছিল এক একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতার জন্য। সেই প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান লাভ করে সে নাটক। এই সময় থেকেই ছো়টগল্প থেকে নিজের কলমকে নাটক রচনায় স্থানান্তরিত করেন মনোজ। নাটককেই তাঁর যাবতীয় ভাবনার প্রকাশমাধ্যম করে তুলতে সচেষ্ট হন।
মনোজ ছিলেন উত্তর কলকাতার বাসিন্দা। তবে বেশ কয়েক বার বাসাবদল ঘটেছে তাঁর জীবনে। পরবর্তী কালে পাকাপাকি ভাবে সল্টলেকে থিতু হয়েছিলেন। স্ত্রী আরতি মিত্র। তাঁদের একমাত্র কন্যা ময়ূরী। মনোজের অনুজ অমর মিত্র খ্যাতনামী কথাসাহিত্যিক। আর এক অনুজ উদয়ন ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ স্টেট আর্কাইভ্সের ডেপুটি ডিরেক্টর। ইতিহাস গবেষণার জগতে সুপরিচিত নাম।
মনোজ কর্মজীবনে প্রবেশ করেন দর্শনের অধ্যাপক হিসাবে। কিন্তু পরে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক বিভাগেই অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন। ‘প্যাশন’-এর সঙ্গে পেশার আপস করার দিন শেষ হয়। মাঝে ‘সুন্দরম’ ছেড়ে ‘ঋতায়ণ’ নামে এক দল গড়লেও কিছু দিনের মধ্যে ‘সুন্দরম’-এই ফিরে আসেন। সেই সময়েই তিনি লেখেন ‘চাক ভাঙা মধু’। পরে আবার ‘সুন্দরম’-এ ফিরে এলে লেখেন ‘পরবাস’। এই সময় থেকেই দলের প্রধান নাট্যকার-নির্দেশক-অভিনেতা হিসাবে তাঁর আত্মপ্রকাশ।
১৯৭৭ সালে মনোজ লিখলেন ‘সাজানো বাগান’। প্রধান ভূমিকায় তিনি নিজে। বাংলা নাটকের দর্শক উপহার পেলেন এমন এক নাটক, যার ‘ধরন’-এর সঙ্গে তেমন পরিচয় তাঁদের ছিল না বললেই চলে। বাংলা সমান্তরাল ধারার নাটকের সূত্রপাত যদি গণনাট্য সঙ্ঘের হাতে হয় বলে ধরা যায়, তবে সেই ধারা থেকে ‘সাজানো বাগান’ ছিল অনেকখানি দূরে। তাঁর নিজের মতে, পঞ্চাশের দশকে গণনাট্য যে নাট্যধারা প্রবর্তন করে, সত্তরের দশকের শেষ দিকেও গ্রুপ থিয়েটার তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। ঘটনাপরম্পরার মধ্য দিয়ে পৌঁছনো সিদ্ধান্তকে যেন দর্শকের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বক্তব্য ভারাক্রান্ততা থেকে নাটকের মুক্তি চেয়েছিল ‘সাজানো বাগান’। সেখানে মানুষের সুখ-দুঃখ ছিল, আশা-আকাঙ্ক্ষার দোলাচল ছিল, প্রাকৃত আর অপ্রাকৃতের সহজ সহাবস্থান ছিল। কিন্তু শ্রেণিসংগ্রামের তত্ত্বকঠিন প্রয়োগ ছিল না। তথাকথিত সামাজিক দায়বোধ বাংলা নাটককে ক্রমশ ক্লান্ত এবং বৈচিত্রহীন করে তুলছে, সে কথা তিনি বুঝেছিলেন। কিন্তু তাঁর নাটক ‘বক্তব্যহীন’ হয়ে যায়নি। শ্রেণি নয়, ব্যক্তিমানুষই তাঁর নাটকের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়। ‘চাক ভাঙা মধু’র জটা বা মাতলা, ‘সাজানো বাগান’-এর বাঞ্ছা, সকলেই একক। সামাজিক বিন্দু থেকে দেখলে তারা প্রান্তজন। কিন্তু প্রান্ত থেকেই যদি বিশ্বকে দেখা হয়, তা হলে তার চেহারাটাই বদলে যায়। ‘সাজানো বাগান’-এ বাঞ্ছার নাতিকে দেখানো উত্তরাধিকারের মধ্যে বিপুল আশাবাদ কি ‘নরক গুলজার’-এও নেই? হঠাৎ কেউ এই সব নাটকের সঙ্গে মিল পেতে পারেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের তামাম ছোটগল্প আর উপন্যাসে ছড়িয়ে থাকা দর্শনের। একজন কথাসাহিত্যিক আর একজন নাট্যকার। সমসাময়িক। কিন্তু দু’জনের কেউই ‘আধুনিক’ শিল্পদর্শনের নাগরিক ক্লান্তি বা শ্রেণিচেতনার কাছে নিজেকে সঁপে দিচ্ছেন না। শীর্ষেন্দুর ফজল আলি বা বাঘু মান্না যেন চকিতে দেখা দিয়ে যায় ‘চাক ভাঙা মধু’ বা ‘সাজানো বাগান’-এ। অথবা তার উল্টোটা। ‘বক্তব্য’ একটা কোথাও থাকে বটে, কিন্তু সে তার সর্বস্বতা নিয়ে গ্রাস করে না একা মানুষের লড়াইকে। বেদনার সঙ্গে ফুলঝুরির আলোবিন্দুর মতো ঝলকায় কৌতুক। যা শত-সহস্র মারি আর মড়কের পরে আবার নতুন করে বাঁচতে শেখায়।
নাট্যকার-পরিচালক মনোজকে চলচ্চিত্র অভিনয়ে প্রথম পাওয়া গেল ১৯৮০ সালে, তপন সিংহ পরিচালিত ‘বাঞ্ছারামের বাগান’-এ। ছবি: সংগৃহীত
এই বেঁচে থাকার গল্প ক্রমেই প্রসারিত হয় ‘দম্পতি’ বা ‘আমি মদন বলছি’-র মতো নাটকে। কমেডির উল্লাস যেন সংযত, ফল্গুস্রোতে বয়ে যায় জীবনের বেদনার স্রোত। কিন্তু তার পরেও থাকে ঘর বাঁধার স্বপ্ন, ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়। সংলাপ থেকে সংলাপে কাহিনি এগোয়। যদি তাঁর নাট্য প্রযোজনা কেউ না দেখেও থাকেন, তবে ক্ষতি নেই, তাঁর নাটকের অন্যতম গুণই হল সেগুলির পাঠযোগ্যতা। অনায়াসে একের পর এক নাটক পাঠ করে যাওয়া যায়। লিখনের প্রসাদগুণে সেই সব নাটক আখ্যানের চেহারা নেয়। সাহিত্যের বিন্দু থেকে দেখলেও মনোজ মিত্র এমন এক সিদ্ধিতে স্থিত, যেখানে উপন্যাস আর নাটক— এই দুই ‘ফর্ম’-এর ফারাক কোথাও যেন ধুয়েমুছে যায়।
নাট্যকার-পরিচালক মনোজকে চলচ্চিত্র অভিনয়ে প্রথম পাওয়া গেল ১৯৮০ সালে তপন সিংহ পরিচালিত ‘বাঞ্ছারামের বাগান’-এ। তাঁরই নাটক ‘সাজানো বাগান’-এর চলচ্চিত্রায়নে তিনিই হাজির বাঞ্ছারামের চরিত্রে। মঞ্চাভিনয় থেকে পরিণত বয়সে সিনেমার পর্দায় উঠে আসা খুব সহজ কাজ ছিল বলা যায় না। কিন্তু ‘বাঞ্ছারামের বাগান’-এ সাড়া ফেলে দিলেন মনোজ। পর্দা এবং মঞ্চ— দুইয়েরই নিয়মিত অভিনেতা হয়ে দাঁড়ালেন তিনি। তপন সিংহ, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত বা সত্যজিৎ রায়ের মতো পরিচালকের পাশাপাশি অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়, হরনাথ চক্রবর্তী, প্রভাত রায় বা অঞ্জন চৌধুরীর মতো মূলধারার পরিচালকদের ছবিতেও তাঁর অনায়াস উপস্থিতি। অঞ্জন চৌধুরী পরিচালিত ১৯৮৪-র ছবি ‘শত্রু’র খলনায়ক নিশিকান্ত সাহা বাংলা চলচ্চিত্রে সিরিও-কমিক ভিলেনের উদাহরণ হয়ে রইল। গ্রুপ থিয়েটার আর তথাকথিত শিল্পসম্মত ছবির বাইরে এ ভাবে বেরিয়ে আসতে পারেন খুব কম অভিনেতাই। উৎপল দত্তের পরে এ প্রসঙ্গে যে নামটি উচ্চারিত হতে পারে, সেটি অনিবার্য ভাবেই মনোজ মিত্র। খলনায়কের ‘টাইপ কাস্টিং’ ভেঙে বেরিয়ে এসে তপন সিংহের ‘হুইলচেয়ার’-এর শতদল চরিত্রে তাঁর অভিনয় দর্শককে নতুন অভিজ্ঞতা দিয়েছিল।
তাঁর দীর্ঘ আয়ু জুড়ে অক্লান্ত ভাবে চালিয়ে গিয়েছেন কলমচারণা, নাট্য পরিচালনা, মঞ্চাভিনয় আর পর্দার জীবন। সেরা নাট্যকার হিসেবে পেয়েছেন সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পুরস্কার, এশিয়াটিক সোসাইটির স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ থিয়েটার সোসাইটি প্রদত্ত ‘মুনির চৌধুরী পুরস্কার’। ২০১৯ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ নাট্য অ্যাকাডেমির সভাপতি হিসাবে দায়িত্বও সামলেছেন।
তাঁর অনুপস্থিতি বাংলা নাটককে কি ক্ষতিগ্রস্ত করল? হয়তো অভিনেতা মনোজ মিত্রের অনুপস্থিতি পূরণ করা যাবে না। পরিচালক মনোজ মিত্রেরও। কিন্তু নাট্যকার মনোজ মিত্র? তিনি তো কেবল ‘সুন্দরম’-এ আবদ্ধ থাকেননি! শহর, শহরতল, মফস্সল, গ্রাম— তাঁর নাটক ছড়িয়ে রয়েছে। শখের নাট্যদল, মাটি কামড়ে পড়ে থাকা রাগী গ্রুপ থিয়েটার, আপিস পাড়ার অ্যানুয়াল থিয়েটার, কলেজ সোশ্যালের একাঙ্ক প্রতিযোগিতা…। তালিকা বানাতে বসলে থৈ পাওয়া মুশকিল! ‘কেনারাম বেচারাম’ বা ‘নরক গুলজার’, ‘সাজানো বাগান’ বা ‘দেবী সর্পমস্তা’…। ক্রমশ বাড়তেই থাকবে নাটকের মিছিল। অগণিত কুশীলব, অসংখ্য চেনামুখ, অবিরল অচেনা হয়ে যাওয়া সত্তার সেই মিছিলে কে নেই! শিকড়ের সন্ধান করা লোকনাট্যের স্বপ্নসন্ধানী কিনু কাহার থেকে শুধুমাত্র বাঁচতে চাওয়া (অথবা না চাওয়া) বাঞ্ছারামের পাশে অনায়াসে দাঁড়িয়ে পড়ে বাস্তবের অফিসবাবু, টিউশনি সম্বল করে মুড়ি-তেলেভাজা খেয়ে রিহার্সাল করে যাওয়া মফস্সলবাসী মেয়েটি, অ্যাকাডেমি চত্বরে হাউস ফুল বোর্ড দেখে তৃপ্ত নব্য পরিচালক। এরা সকলেই আজ ‘স্টান্ডিং ওভেশন’-এ। ‘কার্টেন কল’-এ সুবিশাল জীবনমঞ্চে এসে দাঁড়াচ্ছেন একা একজন মানুষ, যিনি স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবের, বাস্তবের সঙ্গে অপ্রাকৃতের, উপকথার সঙ্গে দিনাতিপাতের লড়াইকে এক করতে পেরেছিলেন। নিজের লড়াই থামল ১২ নভেম্বর, মঙ্গলবার। ৮৬ বছর বয়সে।