Bauddhayan Mukherji on Anasuya Sengupta

কান-এ অনসূয়ার জয় দেখে মনে হচ্ছে, কত হাজার হাজার অনসূয়াকে দেশে হারিয়ে ফেলছি

টিনি-র (অনসূয়া) এই জয় কি কোথাও বার বার আঘাত করছে না? বলছে না, আমাদের একটু সাহসী হতে? অনসূয়ার গল্প শোনালেন পরিচালক বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২৪ ১৮:৪৭
Share:

অনসূয়া সেনগুপ্ত। ছবি: সংগৃহীত।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘আন সার্টন রিগার্ড’ বিভাগে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পাওয়া টিনি বা অনসূয়াই আজ খবরের আলোয়। এই আলো ওর নিজস্ব। আমিও অনেকের মতো ওকে চিনি।

Advertisement

আমাদের বন্ধুত্বের শুরু লাদাখে। একটা বিজ্ঞাপনের শুটিং করতে গিয়ে। আলাপ যদিও ৬ বছর আগেই। অন্য আর এক বিজ্ঞাপনের কাজ করার সময়। তবে একসঙ্গে কাজ করলে কী হবে! মুম্বইয়ের মতো কর্মব্যস্ত জীবনে কাজ করার ফাঁকে কোনও কথা হয় না। কেবল একের পর এক কাজই হতে থাকে।

বছর দুয়েক আগে যখন বিজ্ঞাপনের কাজে লাদাখে যাই, সেই প্রথম টিনি-র (অনসূয়া সেনগুপ্ত) সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ কথা হয় আমার। তখনই বুঝেছিলাম, কাজের জন্য নিয়োজিত এক চালিকাশক্তি ওকে একটু একটু করে নির্মাণ করছে। ও যখন যেটা করে, তাতেই ডুবে থাকে। মুম্বইয়ে কাজের ক্ষেত্রে কোনও বিষয়ে আমরা ‘না’ শব্দটা ব্যবহার করি না। টিনিও সে ভাবেই তৈরি। পরিচালকের প্রয়োজন পড়লে সেই জিনিস ও মাটি খুঁড়েও নিয়ে আসতে পারে। কাজ করেছি, বুঝিনি, ও অভিনয়ের পোকাটাকে ভিতরে সযত্নে লালন করছে। সত্যি আজ সকাল থেকে মাথার মধ্যে একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। ওর মতো অভিনেতাকে খুঁজে বার করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। আমরা তো পারিনি! আসল হিরে চিনতে সফল হয়েছেন পরিচালক কনস্ট্যান্টিন বোজানোভ। আমি ওই বুলগেরিয়ান পরিচালককে স্যালুট জানাই।

Advertisement

যে সময় টিনির সঙ্গে আলাপ, তত দিনে ওর অবশ্য অভিনেত্রী হিসেবে অভিষেক হয়ে গিয়েছে। কাজ করতে গিয়ে জানতে পারি, টিনি অঞ্জন দত্ত পরিচালিত ‘ম্যাডলি বাঙালি’ ছবিতে অভিনয় করেছে। নিজেই বলেছিল, ‘‘জানো তো, আমি ‘ম্যাডলি বাঙালি’ ছবিতে ছোট একটা চরিত্র করেছি।’’

কলকাতার লেক গার্ডেন্সের মেয়ে আমাদের টিনি বা অনসূয়া যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী। ওর ভাই অভিষেকও পরিচালক। অনসূয়া শুধুই অভিনয় করে, তা কিন্তু নয়। ও বলিউডে প্রোডাকশন ডিজ়াইনার ও আর্ট ডিরেক্টর হিসেবেও পরিচিত। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘রে’ সিরিজ়ে ও ‘মাসাবা মাসাবা’ সিরিজ়েরও প্রোডাকশন ডিজ়াইনার হিসেবে কাজ করেছে। ‘দ্য শেমলেস’ ছবির ঝলকে ওকে দেখে ওর চারিত্রিক গুণগুলি চোখে পড়ছিল। ওর সেই রুক্ষ কণ্ঠের চমক, ঘষামাজা চেহারা, মনেই হয় না আলাদা করে অভিনয় করছে।

শনিবারের এই দিনটা যেমন গর্বের, তেমনই আশঙ্কার। বার বার মনে হয়, আমাদের ইন্ডাস্ট্রির টিনি-র মতো মেয়েদের নিয়ে এখনও কাজ করার সাহস হল না। হাতেগোনা অভিনেতা–অভিনেত্রীদের সঙ্গেই আমরা কাজ করে চলেছি।

আমরা মূলধারার ছবি করতে গিয়ে বড্ড বেশি তারকা কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছি। আর, এই কারণে হাজার হাজার অনসূয়া হারিয়ে যাচ্ছে, হারিয়ে যাবেও।

টিনি-র (অনসূয়া) এই জয় কি কোথাও বার বার আঘাত করছে না? বলছে না, আমাদের একটু সাহসী হতে?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement