তাঁরা ছিলেন বাংলাদেশের জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা অভিনেতা এবং অভিনেত্রী। পর্দার বাইরেও বিয়ে করেন তাঁরা। তাঁদের দাম্পত্য গোপন ছিল বেশ কয়েক বছর। বিয়ের কথা প্রকাশ্যে আসার পরে দ্রুত সেই সম্পর্ক ভেঙেও যায়। শাকিব খান এবং অপু বিশ্বাসের চলার পথ এখন আলাদা। তবে কোথাও যেন দুই প্রাক্তনকে এক বিন্দুতে মিলিয়ে দেয় বিতর্কের ঝড়।
অপুর জন্ম ১৯৮৯ সালের ১১ অক্টোবর বাংলাদেশের বগুড়া জেলায়। উপেন্দ্রনাথ এবং শেফালি বিশ্বাসের ৩ মেয়ে এবং ১ ছেলের মধ্যে অপু ছিলেন সবথেকে ছোট। জন্মের পরে তাঁর নাম ছিল অবন্তী। পরে অভিনেত্রী জীবনে তিনি পরিচিত হন নতুন নামে।
২০০৬ সালে অপু প্রথম অভিনয় করেন ‘কাল সকালে’ ছবিতে। তাঁর কেরিয়ারে উল্লেখযোগ্য ছবি হল ‘দেবদাস’ এবং ‘মাই নেম ইজ খান’। দু’টি ছবিই বলিউডের মূল ছবি থেকে অনুপ্রাণিত। ‘দেবদাস’-এ অপু অভিনয় করেছিলেন পার্বতীর ভূমিকায়।
শাকিবের জন্ম ঢাকায়, ১৯৭৯ সালের ২৮ মার্চ। লেখাপড়ায় মেধাবী শাকিব মার্শাল আর্টেও দক্ষ। নিজেই জানিয়েছেন, তাঁর আশৈশব ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়র হবেন। কিন্তু স্কুলের পর থেকেই ছোটবেলার স্বপ্ন ফিকে হয়ে যেতে থাকে। পরিবর্তে, শাকিব আগ্রহী হন সিনেমায়।
১৯৯৯ সালে তাঁর প্রথম ছবি ‘অনন্ত ভালবাসা’ মুক্তি পায়। ধীরে ধীরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি ‘ঢালিউড’-য়ে পায়ের নীচে জমি মজবুত করেন শাকিব। তাঁর অভিনীত ছবিগুলির মধ্যে অন্যতম হল ‘সবাই তো সুখি হতে চায়’, ‘বিষাক্ত নাগিন’, ‘শিকারি’, ‘স্ত্রীর মর্যাদা’, ‘স্বপ্নের বাসর’, ‘নয়ন ভরা জল’, ‘পিতার আসন’, ‘মনে প্রাণে আছো তুমি’, ‘মনের জ্বালা’, ‘মাটির ঠিকানা’, ‘কোটি টাকার প্রেম’, ‘মনের ঘরে বসত করে’, ‘কিং খান’, ‘আদরের জামাই’, ‘দেবদাস’, ‘দুই পৃথিবী’, ‘বসগিরি’, ‘রাজনীতি’, ‘চালবাজ’, ‘নোলক’ এবং ‘শাহেনশা’।
২০১৮ সালের ছবি ‘ভাইজান এলো রে’ ছবির সুবাদে শাকিব হয়ে ওঠেন বাংলাদেশি বিনোদনের দুনিয়ার ‘ভাইজান’। আবার বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যমে তাঁকে ঢালিউডের ‘কিং খান’-ও বলা হয়েছে। এ পার বাংলাতেও তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয়।
২০১৮ সালে শোনা গিয়েছিল শাকিব নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ‘আওয়ামি লিগ’-এর হয়ে। পরে অবশ্য সে সম্ভাবনা বাতিল করে দেন অভিনেতা নিজেই। বলেন, সেই মুহূর্তে রাজনীতিতে সরাসির যোগ দিতে চান না তিনি। তবে বাইরে থেকে ‘আওয়ামি লিগ’-কে সমর্থন করেন তিনি। প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকারও।
তার আগে শাকিবকে ঘিরে আরও একটি চাঞ্চল্যকর খবর ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৭ সালে সংবাদ মাধ্যমে অপু জানান, তিনি এবং শাকিব ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল বিয়ে করেছেন। কিন্তু তাঁরা এত দিন বিবাহিত পরিচয় লুকিয়ে রেখেছিলেন। এর পর তাঁদের একমাত্র পুত্রসন্তান আব্রাহাম খান জয়ের বয়স যখন কয়েক মাস, তখনই খবরটি সকলকে জানানোর সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। বিয়ের পরে ধর্মান্তরিত হন অপু।
তবে এক দশকের পরে গোপন বিয়ের কথা প্রকাশ্যে আনার আরও নেপথ্য কারণ আছে। সে রকমই গুঞ্জন পদ্মার ও পারে। কিছু বছর আগে বাংলাদেশের আর এক নায়িকা শবনম বুবলির সঙ্গে শাকিব একটি ছবি তোলেন। ‘ফ্যামিলি টাইম’ ক্যাপশন দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তা শেয়ার করেন বুবলি। এর পরই অপু-শাকিব সম্পর্কের অবনতি ঘটে। একইসঙ্গে জল্পনা কল্পনায় লাগাম দিতে তাঁদের গোপন বিয়ের কথা প্রকাশ করেন অপু।
সিরাজুলের দাবি, প্রথম অভিযোগ হিসেবে শাকিব উল্লেখ করেছেন, অপু তাঁদের সন্তানকে বাড়িতে পরিচারিকার ভরসায় রেখে, নিজের পুরুষবন্ধুর সঙ্গে নিয়ে ভারতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। শাকিবের দ্বিতীয় অভিযোগ ছিল, স্ত্রী অপু তাঁর নির্দেশ মেনে চলেন না।
বিচ্ছেদের পরে সে বছরই জন্মদিনে নিজের নতুন ছবির কথা ঘোষণা করেন অপু। মনে করা হচ্ছিল শাকিব খানের সঙ্গে সাংসারিক টানাপড়েনের জন্যই অপুকে নতুন সিনেমায় কেউ সই করাচ্ছিলেন না। অবশেষে ৩ বছরের সেই খরা কাটিয়ে ব্যস্ততার মূল স্রোতে ফিরে আসেন তিনি।
ঘনিষ্ঠ মহলের ধারণা, বিয়ের পরেও ছবিতে অভিনয় করে যাওয়া নিয়ে শাকিবের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয় অপুর। সন্তানের জন্মের পরেও অপু অভিনয় চালিয়ে যাবেন, সেটা মেনে নিতে পারেননি শাকিব। অন্য দিকে কেরিয়ার ছাড়তে রাজি ছিলেন না অপুও।
বিচ্ছেদের পরে অপু জানান, তিনি আরও বেশি করে কাজ করবেন। কারণ ছেলেকে ভাল ভাবে বড় করার জন্য নিরবচ্ছিন্ন অর্থের যোগান প্রয়োজন। পাশাপাশি, পর্দায় অভিনয় তাঁকে আলাদা পরিচয় দেয়।
তবে বিচ্ছেদের পরেও সন্তান আব্রাহামের জন্য সৌজন্যমূলক সম্পর্ক বজায় রেখেছেন শাকিব এবং অপু। অনেক দিন দেখা না হলেই কাজের মাঝে আব্রাহামকে মিস করেন শাকিব। ছেলের জন্যই মাঝে মাঝে দেখা করেন এই প্রাক্তন দম্পতি।
এক দশকের দাম্পত্য ভেঙে যাওয়ার পরে শাকিব এবং অপু দু’জনের কেউই আর বিয়ে করেননি। ব্যক্তিগত জীবনে একা থাকতে থাকতেই নিজেদের আরও বেশি ডুবিয়ে দিয়েছেন কাজের মধ্যে।