স্বর্ণযুগের অত্যন্ত সফল অভিনেত্রী তিনি। নাম, যশ, অর্থ, প্রতিপত্তি কোনও কিছুরই অভাব নেই তাঁর। কিন্তু পার্থিব সব কিছু পাওয়ার মধ্যেও আশা পারেখের জীবন জুড়ে রয়েছে ভালবাসার মানুষকে না পাওয়ার যন্ত্রণা। সেই যন্ত্রণা বুকে নিয়েই সারাজীবন নিঃসঙ্গ রয়ে গিয়েছেন তিনি।
শিশুশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন আশা। মাঝে কয়েক বছর বিরতি নিলেও, কিশোরী বয়সেই পুরোদস্তুর নায়িকা হয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরে আসেন। মনের মানুষের হাত ধরে সেই যাত্রার সূচনা হয় তাঁর।
১৯৫৯ সালে ‘দিল দেকে দেখো’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে প্রত্যাবর্তন ঘটে আশার। নায়িকা হিসেবে চলনসই নয় বলে একাধিক প্রযোজক-পরিচালকের কটাক্ষ শুনে, বহু ছবি থেকে বাদ পড়ে অবশেষে এই ছবিটি হাতে পান আশা। ছবির পরিচালক নাসির হুসেনই তাঁকে গড়েপিঠে নেন।
প্রথম ছবিই রাতারাতি তারকা করে তোলে আশাকে। তার পর ‘জব প্যায়ার কিসিসে হোতা হ্যায়’, ‘ফির ওহ দিল লায়া হুঁ’, ‘তিসরি মঞ্জিল’, ‘বাহারোঁ কে সপনে’, ‘প্যায়ার কা মৌসম’ এবং ‘ক্যারাভান’—নাসিরের পরিচালনায় আরও ছ’টি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
ছবির সেটেই কিশোরী থেকে নারী হয়ে ওঠা আশার। সেই যাত্রায় কখনও অভিভাবক কখনও বন্ধু আবার কখনও পথপ্রদর্শক, সব ভূমিকাতেই নাসিরকে পাশে পান তিনি। আর সেখান থেকেই নাসিরের প্রতি গভীর ভালবাসা জন্ম নেয় তাঁর মনে।
তবে এই অনুভূতি একতরফা ছিল না। বিবাহিত এবং দুই সন্তানের বাবা নাসিরও আশার প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। নৃত্যশিল্পী মার্গারেট ফ্রান্সিনা লুইসকে ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন নাসির। বিয়ের পর নাম পাল্টে আয়েশা নামে পরিচিত হন মার্গারেট। কিন্তু এক কিছুর মধ্যেও নাসিরের মনে জায়গা করে নেন আশা।
নাসির স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদে এগিয়েছিলেন কি না জানা যায় না। তবে তিনি এবং আশা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে আগ্রহী ছিলেন। বাড়িতেও তা জানিয়েছিলেন। কিন্তু আশার বাবা যেমন বেঁকে বসেন, তেমনই নাসিরের পরিবারও এই সম্পর্কে সায় দেয়নি।
কাউকে দুঃখ দিয়ে সুখী হতে চাননি আশা ও নাসির। তাই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। তবে নাসির জীবন থেকে বেরিয়ে গেলেও, মন থেকে কখনও তাঁকে আলাদা করতে পারেননি আশা। তাই নাসিরের পর আর কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়াননি তিনি। বিয়েও করেননি।
সম্পর্ক থাকাকালীন কখনও আশার সঙ্গে নাসিরের বিষয়ে মুখরোচক কিছু শোনা যায়নি। ইন্ডাস্ট্রির সকলেই তাঁদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছিলেন। কিন্তু আত্মজীবনী ‘দ্য হিট গার্ল’-এ নাসিরের সঙ্গে সম্পর্কের কথা নিজেই প্রকাশ্যে আনেন আশা। জানান, জীবনে এক জন পুরুষকেই ভালবেসেছেন তিনি। সেই পুরুষ হলেন নাসির।
সম্পর্ক পরিণতি না পেলেও, নাসিরের পরিবারের কেউ কখনও তাঁকে অসম্মান করেননি বলেও জানান আশা। এমনকি তাঁর বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে নাসির-কন্যা নুসরত এবং নাতি অভিনেতা ইমরান খান উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি। নাসিরের ভাইপো আমির খান এবং তাঁর মা জিনতের সঙ্গেও ভাল সম্পর্ক আশার। ২০০২ সালে মৃত্যুর আগের দিনও নাসির ফোনে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
নাসির ছাড়া জীবনে কেউ না আসা নিয়ে প্রশ্ন করলে আশা জানান, তিনি খুব গম্ভীর স্বভাবের। তাই তাঁর কাছে ঘেঁষতেই ভয় পেতেন পুরুষরা। সাহস করে কেউ বিয়ের প্রস্তাবও দিয়ে উঠতে পারেননি। তবে হাত ধরে পাশে হাঁটার মতো কাউকে না পেলেও, প্রিয় বন্ধু ওয়াহিদা রহমান এবং হেলেনের সঙ্গে প্রায়শই সময় কাটান আশা। হেলেনের সূত্রে খান পরিবারের সঙ্গেও ভাল সম্পর্ক তাঁর।