অর্জুন চক্রবর্তী।
বাবা সব্যসাচী চক্রবর্তীর দৌলতে ছোট থেকেই জঙ্গলকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন তাঁর দুই ছেলে গৌরব এবং অর্জুন চক্রবর্তী। জঙ্গলের গন্ধ, পাতা থেকে পাখি দেখার চোখ তৈরি হয়ে গিয়েছে তাঁদের অল্প বয়সেই।
আনন্দবাজার অনলাইনকে আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবসের দিন অর্জুন বললেন, “চিড়িয়াখানায় বন্দি জন্তু দেখা যে কী বেদনাদায়ক জঙ্গলে ক্রমাগত গেলে সেই বোধটা তৈরি হয়।এখনও নব্বই শতাংশ মানুষ ভাবেন জন্তুদের ওপর তাঁদের যা খুশি করার অধিকার আছে। কুকুরকে ঢিল ছুড়ে, হাতির দাঁত বিক্রি করে, বাঘের ছাল নিয়ে ব্যাবসা করে জীবন কাটাচ্ছেন অনেক মানুষ! কিন্তু জন্তুরা না থাকলে মানুষের যে ক্ষতি হবে, এটা তাঁরা আজও বোঝেন না।”
অর্জুনের বাবা সব্যসাচী চক্রবর্তী জঙ্গল নিয়ে তাঁর চোখ খুলে দিয়েছিলেন। তিনি বললেন,‘‘শুধু বাঘ নয়, বাবা গোটা জঙ্গলকে ভালবাসতে শিখিয়েছিলেন। বলতেন, কাজের চাপ, দূষণ সরিয়ে খোলা হাওয়ায় শ্বাস নিতে চাইলে জঙ্গলে আসতেই হবে। ভালবাসতে হবে এখানকার বাসিন্দাদের। তাই বাঘের পাশাপাশি, হাতি, ময়ূর, হরিণ, গন্ডার দেখেও আমরা একই ভাবে শিহরিত হতাম।’’ অর্জুনের দাদা গৌরব চক্রবর্তীও যে আর এক জঙ্গল পাগল মানুষ সে কথা উল্লেখ করতে ভোলেননি অর্জুন। তিনি বললেন, “দাদা আবার শুধু জঙ্গলেই যায় না। দারুন সব ছবিও তোলে।সুযোগ পেলেই জঙ্গলে চলে যায়।”
মধ্য প্রদেশে খোলা জিপে বাঘ দেখেছেন অর্জুন।
ছেলেবেলায় বাঘ দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে বলতে গিয়ে অর্জুন জানালেন, তিনি হাতির পিঠে চড়ে বাঘ দেখেছিলেন। সেই দিনের কথা আজও ভোলার নয়। অর্জুন বললেন, ‘‘হাতির পিঠে চেপে বাঘ দেখার অভিজ্ঞতা অসাধারণ। মনে হল এই তো সত্যিকারের বাঘ দেখা! ওদের বাড়ি গিয়ে ওদের দেখা!”
জঙ্গল ভালবাসেন গৌরবও।
আরেকটু বড় হয়ে মধ্য প্রদেশে খোলা জিপে বাঘ দেখেছেন অর্জুন।শুধু বাঘ মামা নয়, দেখা মিলেছে
বাঘিনীর। সদ্য সন্তানের জন্ম দেওয়া সেই বাঘিনীর মেজাজ আর চলন আজও তাঁর মনে স্পষ্ট।অর্জুন নিশ্চিত ব্যাঘ্রপ্রেমীরা গরম বা শীতকালে মধ্য প্রদেশ, রাজস্থানে গেলেই বাঘ দেখতে পাবেন।
তবে জঙ্গল আর তার বাসিন্দাদের নিয়ে আজও মানুষ যে সচেতন নয়, বাঘ নিয়ে কথা বলার সময় সেই আফসোস ফিরে ফিরে আসছিল অভিনেতার বক্তব্যে। তিনি জানালেন,সারাক্ষণ পেশার পিছনে দৌড়ে মানুষ প্রকৃতির কোলে নিজেকে মেলে ধরতে ভুলে গিয়েছে। মানুষ সভ্যতার নামে অনায়াসে ধ্বংস করছে বন্য প্রাণ, অরণ্য। বেড়েছে চোরাশিকারিদের দৌরাত্ম্য। তিনি আশঙ্কায় আছেন এখনও হুঁশ না ফিরলে সত্যিই খুব তাড়াতাড়ি বিলুপ্ত হয়ে যাবে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার সহ সমস্ত ব্যাঘ্র প্রজাতি।