টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির অভিনেতা-অভিনেত্রীরা প্রায় রোজই হেনস্থার মুখোমুখি হচ্ছেন রাতবিরেতে। টিভির শুটিং শিডিউলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিরাপদ সময়ে বাড়ি ফেরা প্রায় অসম্ভব তাঁদের পক্ষে। ঘটছে শারীরিক নিগ্রহের ঘটনাও। কাঞ্চনা মৈত্র, জিতু কমলের পরে সকালবেলাই পথে হেনস্থার শিকার হলেন স্বস্তিকা দত্ত। কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের কাছে গেলেও তাঁরা থানার এক্তিয়ারের অজুহাতে অভিযোগ নিতে অস্বীকার করেন। যেমনটা হয়েছিল মডেল-অভিনেত্রী ঊষসী সেনগুপ্তর সময়ে। এমন অবস্থায় নিরাপত্তার দায়িত্ব তা হলে কাদের?
বুধবারই ‘বিজয়িনী’ ধারাবাহিকের অভিনেত্রী স্বস্তিকা দত্ত নিজের বাড়ি থেকে দাসানি স্টুডিয়োয় শুটিংয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাপ-ক্যাব বুক করেন। তখন সকাল ৮টা ১৫। মাঝপথে ক্যাব ড্রাইভার রাইডটি ক্যানসেল করে স্বস্তিকাকে নেমে যেতে বলে। স্বস্তিকা অসম্মত হলে গাড়ি অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেয় ড্রাইভার। নিজের এলাকায় গাড়ি নিয়ে গিয়ে অভিনেত্রীকে জোর করে টেনে নামায় ক্যাব থেকে। তার পরে পাড়ার অন্য ছেলেদের ডেকে ভয়ও দেখায় স্বস্তিকাকে। এর মধ্যে তিনি তাঁর বাবাকে ডাকেন। অভিনেত্রীর বাবা সেখানে পৌঁছলে দুষ্কৃতীরা তাঁকেও মারধর করে। কোনও মতে সেখান থেকে পালান অভিনেত্রী। গোটা বিষয়টি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন স্বস্তিকা। লিখেছেন, ‘এর আগে এমন ঘটনা কোনও দিন হয়নি। এ ভাবে হেনস্থা করা, গাড়ি থেকে টেনে নামানোর মতো ঘটনায় আমি শকড।’ সঙ্গে এটাও জানিয়েছেন, ড্রাইভারের বিরুদ্ধে সব রকম আইনি পদক্ষেপ নেবেন। দিনের বেলা সকলের সামনে কী ভাবে এমন ঘটনা ঘটল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ‘‘সেলেব্রিটির যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে সাধারণ মানুষের কী হবে? আমি আতঙ্কিত। অ্যাপ-ক্যাবের নিরাপত্তা নিয়েই আমার সন্দেহ হচ্ছে,’’ বলছেন স্বস্তিকা।
এক সপ্তাহ আগেই ছোট পর্দার অভিনেতা জিতু কমল বাইপাস সংলগ্ন এলাকায় রাতের বেলা দুই দুষ্কৃতীর হাতে হেনস্থা হয়েছিলেন। জিতুর দাবি, তারা মদ্যপ ছিল। অভিনেতাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় তারা। শেষে লালবাজারের হস্তক্ষেপে পুলিশ এসে পৌঁছয় ঘটনাস্থলে। তবে জিতু জানিয়েছিলেন, কোন থানায় অভিযোগ নেওয়া হবে, তা নিয়ে টালবাহানা চলেছিল প্রথমে। পরপর কয়েকটি ঘটনায় পুলিশি স্তরে কিছু তৎপরতা চোখে পড়েছে বলছেন জিতু। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষের নিরাপত্তা সকলের আগে। তবে কয়েক দিন ধরে দেখছি প্রশাসন কড়া নজরদারি চালাচ্ছে।’’
বছর দুয়েক আগে অভিনেত্রী কাঞ্চনা মৈত্রকেও নিগ্রহ করে বেশ কিছু দুষ্কৃতী। তিনিও মাঝরাতে শুটিং থেকে ফিরছিলেন। সিরিটির কাছে রাত ১টা নাগাদ কয়েক জন মদ্যপ ব্যক্তি কাঞ্চনার গাড়ি থামিয়ে তাঁকে গাড়ি থেকে টেনে নামায় এবং তাঁকে কান ধরে ওঠবোস করার মতো আপত্তিকর কথাও বলে। কাঞ্চনার কথায়, ‘‘আমার কপাল ভাল, সেই সময়ে একটা পুলিশের গাড়ি আসে। কিন্তু আমার মনে এমন ভয় ঢুকেছে যে, সম্ভব হলে রাতে ওই রাস্তাটা এড়িয়ে যাই। ঠিক করেছি, যাই হোক গাড়ি কোথাও থামাব না।’’
গত জুন মাসেই হেনস্থার মুখে পড়েছিলেন ঊষসী সেনগুপ্ত। তিনিও বেশ রাত করেই অ্যাপ-ক্যাবে বাড়ি ফিরছিলেন। একটি বাইকে করে কয়েক জন তরুণ এক্সাইডের মোড়ের কাছে তাঁর ক্যাবে ধাক্কা মারে। বচসা শুরু হলে আরও ১৫ জন ছেলে এসে ড্রাইভারকে টেনে বার করে এবং তাঁকে মারধরও করে। গোটা ঘটনাটি ফেসবুকে লিখেছিলেন ঊষসী। তাঁর অভিযোগ নেওয়া নিয়েও চাপানউতোর চলে চারু মার্কেট থানা, ময়দান পুলিশ স্টেশন এবং ভবানীপুর থানার মধ্যে। পরে অবশ্য ভারপ্রাপ্ত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয় প্রশাসন।
স্বস্তিকার ঘটনায় অভিযুক্ত ক্যাব-চালককে গ্রেফতার করেছে তিলজলা থানার পুলিশ। ধৃতের নাম জামসেদ হোসেন। তার বাড়ি তপসিয়া রোডে। বুধবার দুপুরে তাকে ইএম বাইপাসের উত্তর পঞ্চান্ন গ্রামের কাছ থেকে গ্রেফতার করেন তদন্তকারীরা। পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার সকালে অভিনেত্রীর ফেসবুকে পোস্ট দেখার পরেই সক্রিয় হয়ে ওঠে তিলজলা থানা। স্টুডিয়োয় গিয়ে স্বস্তিকার অভিযোগ গ্রহণ করা হয়। ড্রাইভারের বিরুদ্ধে মারধর, যৌন হেনস্থা এবং কটূক্তির অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ। যদিও পুলিশের কাছে জেরায় চালক মারধরের কথা অস্বীকার করেছে বলে দাবি লালবাজারের।
এই ধরনের ঘটনা সাধারণ মানুষের কাছেও আতঙ্কের। সেলেবরা ঘটনাগুলি জনসমক্ষে নিয়ে আসছেন বলেই সাধারণ মানুষও সাহস পাচ্ছেন। তবে সেলেবদের সুরক্ষাই যখন নিশ্চিত নয়, তখন গোটা শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।