যশরাজ প্রোডাকশনের সুপারহিট ছবি ‘পরদেশ’ দিয়ে সূত্রপাত ইন্ডাস্ট্রি-জীবনের। টেলিভিশনেও তাঁর কাজ উল্লেখযোগ্য। কিন্তু তার পরেও বলিউডে প্রত্যাশিত সাফল্য পাননি অপূর্ব অগ্নিহোত্রী।
অপূর্বর জন্ম ১৯৭২ সালের ২ ডিসেম্বর। তাঁর বাবা জ্ঞানদেব ছিলেন লেখক। ‘আবিষ্কার’, ‘গৃহপ্রবেশ’, ‘মিস্টার নটবরলাল’, ‘ইয়ারানা’, ‘সিন্দুর’, ‘তেরি কসম’, ‘বেটা’-সহ বেশ কিছু ছবির চিত্রনাট্য তাঁর লেখা।
১৯৯৭ সালে মুক্তি পায় অপূর্বর প্রথম ছবি ‘পরদেশ’। শাহরুখ খান, মহিমা চৌধুরী অভিনীত, সুভাষ ঘাই পরিচালিত এই ছবি বক্স অফিসে দুরন্ত সাফল্য পায়।
‘পরদেশ’-এর আকাশছোঁয়া সাফল্যের পরে অপূর্বর কাছে সুযোগের অভাব হয়নি। ‘প্যায়ার কোই খেল নহিঁ’, ‘ক্রোধ’, ‘হম হো গ্যয়ে আপকে’, ‘কসুর’, ‘প্যায়ার দিওয়ানা হোতা হ্যায়’, ‘ধুন্ধ’, ‘লকীড়’-সহ বেশ কিছু ছবিতে তিনি অভিনয় করেন।
কিন্তু কোনও দিনই তিনি বলিউডের প্রথম সারির নায়ক হয়ে উঠতে পারেননি। এক সময় পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগও তাঁর কাছে আসা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৭ থেকে ২০০৪, এই ৭ বছর তিনি কাজ করেছিলেন ছবিতে। তাঁর শেষ ছবি ‘লকীড়’ মুক্তি পায় ২০০৪-এ।
বড় পর্দায় সাফল্যের রেশ ধরে অপূর্ব সুযোগ পান টেলিভিশনে। সিনেমার মতো এখানেও তাঁর সূত্রপাতটা চমকপ্রদ। প্রথম ধারাবাহিক ‘জস্সি জ্যায়সি কোই নহিঁ’ সাফল্যের নিরিখে ভেঙে দেয় অন্যান্য বহু রেকর্ড।
ক্রমে অপূর্ব হয়ে ওঠেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় মুখ। ‘কাজল’, ‘পতি পত্নী অউর ওহ’, ‘সপনা বাবুল কা… বিদাই’, ‘আসমান সে আগে’, ‘এক হাজারোঁ মেঁ মেরি বহেনা হ্যায়’, ‘অজীব দস্তাঁ হ্যায় ইয়ে’, ‘সৌভাগ্যলক্ষ্মী’র মতো বহু ধারাবাহিকে তিনি ছিলেন উজ্জ্বল মুখ। সিনেমার তুলনায় অপূর্ব অনেক বেশি সফল ছোট পর্দায়। সম্প্রতি তিনি অভিনয় করেছেন ওয়েব সিরিজেও।
অভিনয় সূত্রেই অপূর্বর আলাপ শিল্পা সকলানীর সঙ্গে। শিল্পাও ছিলেন টেলিভিশন অভিনেত্রী। ৬ মাস প্রেমপর্বের পরে শিল্পাকে হিরের আংটি দিয়ে প্রোপোজ করেন অপূর্ব। তাঁকে শিল্পা দেন হিরে বসানো প্ল্যাটিনামের ব্যান্ড।
২০০৪ সালের ২৪ জুন বিয়ে করেন অপূর্ব-শিল্পা। তাঁদের বিয়ের আসর বসেছিল দেহরাদুনে। কারণ, শিল্পার অসুস্থ দিদার পক্ষে সে সময় মুম্বই আসা সম্ভব ছিল না। মধুচন্দ্রিমার জন্য তাঁরা পাড়ি দিয়েছিলেন কানাডা।
দেড় দশক পার করে যাওয়া অপূর্ব-শিল্পার দাম্পত্য ইন্ডাস্ট্রির অনেকের কাছেই ঈর্ষণীয়। এক সাক্ষাৎকারে অপূর্ব জানিয়েছেন, তাঁর এবং শিল্পার মানসিকতা, পছন্দ-অপছন্দ একই রকমের। তাই সম্পর্কের রসায়ন এখনও অটুট।
কেরিয়ারের পাওয়া, না পাওয়া নিয়েও খুব বেশি ভাবেন না অপূর্ব। জানিয়েছেন, তিনি বা শিল্পা কেউই উচ্চাভিলাষী নন। যা পেয়েছেন, তাই নিয়েই সন্তুষ্ট। শিল্পাও জানিয়েছেন, স্বামী হিসেবে অপূর্বকে পেয়ে তিনি খুশি।
অপূর্ব সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকলেও শিল্পার খুব একটা পছন্দ নয় সামাজিক মাধ্যম। অপূর্বও জানিয়েছেন, তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত হতে চান না। বরং, প্রকৃতির কাছাকাছি বেড়াতে গিয়ে ছবি তুলতে তাঁর খুব ভাল লাগে।
অপূর্ব-শিল্পা জুটি অংশ নিয়েছিলেন ২০০৫ সালে ‘নাচ বালিয়ে’-এর প্রথম মরসুমেও। পাশাপাশি অপূর্বকে দেখা গিয়েছে ‘বিগ বস-৭’-এ। সেখানে নিজের মাথার চুল কেটে সকলকে চমকে দিয়েছিলেন তিনি।
অবসরে কিশোরকুমারের গান শুনতে ভালবাসেন অপূর্ব। পছন্দ করেন পশুপাখিদের সঙ্গে সময় কাটাতেও।
তবে সুখি দাম্পত্যেও এসেছে বিতর্কের ছায়া। ২০১২ সালে অপূর্ব এবং শিল্পাকে গ্রেফতার করা হয় এক রেভ পার্টিতে অংশ নেওয়ার জন্য। অপূর্ব ও শিল্পা-সহ মোট ৯২ জনকে গ্রেফতার করা হয় মুম্বইয়ের ওক উডস হোটেলের সেই বিতর্কিত পার্টি থেকে।
তাঁরা মাদক নিয়েছেন কিনা, পরীক্ষাও করা হয়। সেই পরীক্ষায় অপূর্বর দেহে নিষিদ্ধ মাদকের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। তবে পরবর্তীতে এই বিতর্ক ছায়া ফেলেনি অপূর্ব-শিল্পার দাম্পত্যে। (ছবি : সোশ্যাল মিডিয়া)