অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে ফিরলেন। আর সঙ্গে সঙ্গে ছেলে বায়না করল ‘টুনটুনি আর বেড়ালছানা’র গল্প শুনবে?
কী করবেন? নিশ্চয়ই ভাবছেন বইটা কোথায় আছে, সেটাই তো মনে পড়ছে না!
কিন্তু যদি বলি বইয়ের দরকারই পড়বে না। আইপ্যাড বা কোনও ট্যাবলেট পিসি থাকলেই হবে।
এতেই হবে বই পড়া।
এ বার ভাবছেন ই-বুকের কথা হচ্ছে বোধ হয়। আজ্ঞে, তা-ও নয়। ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ এখন অ্যাপস্-এই পাওয়া যাবে। আপনাকে কষ্ট করে পড়তেও হবে না। অ্যাপস চালু করলে শ্রীকান্ত আচার্য-ই পড়ে শোনাবেন উপেন্দ্রকিশোরের অমর সৃষ্টি।
অবাক হচ্ছেন? বাংলায় এই প্রথম হলেও বইয়ের এমন অ্যাপস-এর ট্রেন্ড কিন্তু ইংরেজি সাহিত্যের ক্ষেত্রে অনেক দিনই চালু হয়ে গিয়েছে। একবার অ্যাপ স্টোর বা গুগল প্লে-তে গিয়ে দেখলেই তা টের পাবেন।
তবে শুধু বই পড়া কেন, লেখার জন্যও কিন্তু হাজির নতুন নতুন অ্যাপস। প্রবাদে আছে ‘কালি, কলম, মন লেখে তিনজন’। কিন্তু এই অ্যাপসের যুগে জেন ওয়াই-এর মনে হয় না প্রথম দু’টোর আর দরকার।
১
লেখার অ্যাপস্
কোনও কিছু লেখার জন্য তো সেই মান্ধাতা আমল থেকেই মাইক্রোসফট ওয়ার্ড আছেই। কিন্তু এখনও তার উপরেই ভরসা করে থাকতে হবে, এমন তো কথা নেই। যদিও এখন আইওস বা অ্যানড্রয়েডে বিনা পয়সাতেও পাওয়া যাবে ওয়ার্ড অ্যাপ।
কিন্তু ওয়ার্ডের হাজারো অপশন আর ফর্মাটিং টুলস্-এ কে না বিরক্ত হয়েছে! তাদের জন্য আছে ফোকাস রাইটার, এডিটোরিয়াল (আইফোন ও আইপ্যাড) বা রাইট (অ্যানড্রয়েড)। কোনও ফর্মাটিংয়ের ঝামেলা নেই, সারা স্ক্রিন জুড়েই শুধু লেখা থাকবে। বাচ্চাদের লেখার জন্য আছে আই রাইট ওয়ার্ডস (আইওস) বা হ্যান্ডরাইটিং (অ্যানড্রয়েড)। এতে টাইপ নয়। টাচ স্ক্রিনে আঙুল দিয়ে লিখলেই সেটা টেক্সটে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। হাতেখড়ির জন্য এ বার ট্যাব হলেই
হয়ে যাবে!
২
ডায়েরি এ বার ফোনেই
মনে আছে, কত বার জ্বরের সময় বিছানায় শুয়ে সময় কেটেছিল পুরনো ডায়েরি উল্টে। কিংবা হাউজ পার্টিতে কলেজের সময়ের স্ক্র্যাপবুক উল্টে সময়টা কম রংদার হয়নি! কিন্তু তা বলে সব জায়গায় তো ঢাউস ডায়েরি বা স্ক্র্যাপবুক নিয়ে ঘোরা যায় না! আর ঘুরবেনই বা কেন? ডে ওয়ান, রেড বক্স বা হে ডে অ্যাপস আছে না।
এই অ্যাপসের সুবিধা হল, স্মার্টফোনে যে ছবি থাকবে সে ছবির দিনক্ষণ, জায়গা-সহ তথ্য এমনিই ডায়েরিতে ঢুকে যাবে। আপনার কাজ হবে, বাকি লেখাগুলো সেরে ফেলা। ব্যস, আপনার স্ক্র্যাপবুক তৈরি।
হে ডে অ্যাপসে তো আবার ছবিতে ফিল্টার নিজে থেকেই যোগ করে দেবে। পরের বার জ্বরে পড়লে ট্যাবটা নিয়েই বসে যান।
৩
কথা থেকে শব্দ
ঘণ্টার পর ঘণ্টা বকবক করতে কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু লিখতে বসলেই যেন গায়ে জ্বর আসে। তবে শুধু আলসেমি নয়। এমন অনেক সময় থাকে যখন, টাইপ করার মতো অবস্থায় থাকা যায় না। বিশেষ করে যাতায়াতের রাস্তায়। সেই সব সময়ের জন্য অবশ্যই রাখতে হবে লিস্ট নোট, স্পিচ টু টেক্সট (অ্যানড্রয়েড) বা ড্রাগন ডিকটেশন।
এই অ্যাপসগুলো আপনার বলা কথা লেখায় রূপান্তরিত করে দেবে। অ্যাপ থেকেই সেই লেখা মেল করে দিতে পারবেন। তবে এ সুযোগটা বাংলা লেখার ক্ষেত্রে এখনই পাবেন না। ইংরেজিতে বললেও একবার লেখাটা চেক করে নেবেন। ভারতীয় অ্যাকসেন্টে বলা সব শব্দ অনেক সময়ই বুঝতে পারে না অ্যাপ।
৪
বাংলা লিখতে হলে
কিন্তু যদি বাংলা লিখতে মন চায়? কিংবা ফেসবুকে মাতৃভাষায় ‘স্টেটাস আপডেট’ দিতে মন চায়? কম্পিউটারে তো ইউনিকোডে বাংলা লেখার সফটওয়্যার আছেই। তবে এ বার ট্যাব বা স্মার্টফোনেও দিব্যি বাংলায় লিখতে পারবেন। শুধু বাংলা নোট বা টাইপ বাংলা-র মতো অ্যাপ ইন্সটল করে নিলেই হবে।
লেখা হবে ইউনিকোডে। ফলে যে কোনও ডিভাইসে সে লেখা পড়তে সমস্যা হবে না। সাধারণত দু’ভাবে লিখতে পারবেন বাংলা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাংলা কিবোর্ড থাকে। যেখানে বাংলা হরফ (অ, আ, ক, খ) কিবোর্ডেই থাকবে। সে ভাবেই টাইপ করতে হবে। আর একটা হয়, ফোনেটিক্স। যেখানে উচ্চারণ অনুযায়ী টাইপ করতে হবে। মানে, কিবোর্ডে ‘bari’ টাইপ করলেই, তা বাংলায় ‘বাড়ি’ লেখা হয়ে যাবে। তবে ‘র’-‘ড়’ বা ‘ন’-‘ণ’ সম্পর্কে নিশ্চিত না হলে একবার স্পেলচেক করে নেবেন।
৫
শব্দ খুঁজে না-পেলে
লেখা মানে তো কয়েকটা শব্দ পাশাপাশি বসিয়ে দিলাম, তা নয়। কোথায় কোন শব্দ ভাল মানাবে, সেটাও লেখার সময় মনে রাখা দরকার। আইওস আর অ্যানড্রয়েড প্ল্যাটফর্মে হাজারো এমন অ্যাপস আছে যা লেখার সময় এই কাজে সাহায্য করবে। শব্দের প্রতিশব্দের জন্য ওয়ার্ডওয়েব অ্যাপটা ইন্সটল করে নিতে পারেন। সরাসরি অ্যাপটা থেকে শব্দ কপি করেও লেখার মধ্যে ‘পেস্ট’ করে দিতে পারবেন।
কোনও রিসার্চ পেপার লেখার সময় বা কোনও বিষয় নিয়ে রিসার্চ করার সময়, গুগল ট্রানস্লেট অ্যাপটাও কাজে দেবে। যে ভাষাতেই মূল লেখাটা থাক না কেন, এই অ্যাপ আপনার বোধগম্য ভাষায় অনুবাদ করে দেবে। আরও সুবিধা হল, অনুবাদ করার জন্য শুধু যে লিখতে হবে তা-ও নয়।
কথা থেকেও এ অ্যাপ অনুবাদ করে দিতে পারবেন। পরের বার কোনও বিদেশির সঙ্গে কথা বলতে হলে আর দোভাষীর দরকার হবে না। ফোনটা থাকলেই যথেষ্ট।