অঞ্জন দত্ত
খাদের ধারের রেলিং ছিল, দুষ্টু দোদো সিরিং ছিল, ঘুম, সোনাদা, টুং-ও ছিল। আর ছিলেন অঞ্জন দত্ত। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর প্রথম ওয়েব সিরিজের শ্যুটিংয়ে দার্জিলিংয়ে গিয়ে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা স্বপ্নের জগতে বাস করেছেন সেই কয়েকটা দিন। ফেসবুক লাইভে সেই কথাই বার বার বললেন অভিনেতা সৌরভ চক্রবর্তী।
শনিবার ‘মার্ডার ইন দ্য হিলস’-এর অভিনেতাদের নিয়ে আড্ডায় বসেছিলেন পরিচালক অঞ্জন দত্ত। সেই আড্ডায় ছিলেন সুপ্রভাত দাস, সৌরভ চক্রবর্তী, রাজদীপ গুপ্ত, রজত গঙ্গোপাধ্যায়, সন্দীপ্তা সেন এবং অনিন্দিতা বসু।
অঞ্জন দত্ত শুরুতেই জানালেন, ‘রঞ্জনা আমি আর আসব না’-র পরে আবার এত আনন্দ করে কাজ করলেন তিনি। তার সমস্ত কৃতিত্ব দিলেন শিল্পীদের। উল্টো দিকে অভিনেত্রী-অভিনেতারা কৃতিত্ব দিলেন পরিচালককে।
অনিন্দিতা, সুপ্রভাত এবং রজত এর আগেও কাজ করেছেন অঞ্জনের সঙ্গে। কিন্তু সন্দীপ্তা, সৌরভ এবং রাজদীপ এই প্রথম জুটি বাঁধলেন গায়ক, সুরকার, অভিনেতা ও পরিচালকের সঙ্গে। সকলেই আপ্লুত এই সিরিজে কাজ করে।
সন্দীপ্তার কথায়, অঞ্জন দত্তের কাছ থেকে ফোন আসার পরে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেননি তিনি। তার পর শুরু হল কাজ। কিন্তু ভয় করছিল তাঁর। যদি অঞ্জন তাঁকে বকা দেন? তা হলে কী হবে? এই সমস্ত ভাবতে ভাবতেই প্রথম শট দেন সন্দীপ্তা। হাততালি দিয়ে ওঠেন পরিচালক। সেই অনুভূতি ভাষায় ব্যক্ত করতে পারলেন না অভিনেত্রী।
সৌরভ এবং অনিন্দিতা
রাজদীপের তো ভয়ের চোটে পেট খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সেই কথা শুনে হাসির রোল ওঠে ফেসবুক লাইভে। কিন্তু অঞ্জনের মতো ‘শিক্ষক’ পেয়ে তিনি আপ্লুত।
সৌরভ কাছে যখন অঞ্জনের প্রথম ফোন আসে তখন তিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন। অঞ্জনের গলা শুনে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন অভিনেতা। গাড়ি পার্ক করেন রাস্তার ধারে। সবটা হজম করতে সময় লেগেছিল তাঁর। অঞ্জনের মতো সৌরভ নিজেও এক জন অভিনেতা এবং পরিচালক। আর সেই জন্যই অঞ্জনের কাছ থেকে আরও নতুন নতুন শিক্ষা নিয়েছেন তিনি।
রজত এবং অর্জুন
সবাইকে উদ্দেশ্য করে অঞ্জন বললেন, ‘‘তোমরা সবাই যে ভাবে আমার কাজ, আমার ভাবনাকে সহজ করে দিয়েছ, সেটা অভাবনীয়। আমার চিত্রনাট্য তৈরি থাকে। কিন্তু তা বলে হুবহু সেই নির্দেশ মেনে কাজ করতে ভালবাসি না আমি। আমার সঙ্গে তাল মিলিয়েছ তোমরা। নিজেদের মতো চরিত্রগুলোকে সাজিয়ে নিয়েছ।’’
এর পরেই অঞ্জন একটি চুম্বন দৃশ্যের উদাহরণ দিলেন। অনিন্দিতা এবং সুপ্রভাতের চুম্বন দৃশ্য নিয়ে চিন্তিত ছিলেন পরিচালক। কী ভাবে তাঁদের বলবেন, কী ভাবে শটটা নেবেন, ইত্যাদি ভাবনা চিন্তা করছিলেন। কিন্তু এক বার তাঁদের বলা মাত্র দুই শিল্পী রাজি হয়ে গেলেন দেখে আশ্বস্ত হয়েছিলেন পরিচালক। তিনি জানালেন, ‘‘অভিনেতাদের সাহায্য করার জন্য দরকার হলে আমি সহকারী পরিচালককে চুমু খেয়ে দেখিয়ে দিতে পারি। তাতে অনেক সময়ে সহজ হয়ে যায় পরিবেশ।’’ তাঁর কথায়, যে অভিনয় তিনি তাঁর অভিনেতাদের করতে বলছেন, সেটা তিনি নিজেও করতে থাকেন সাধারণত।
রাজদীপ এবং সন্দীপ্তা
মনিটারের পিছনে বসে নির্দেশনায় বিশ্বাসী নন অঞ্জন দত্ত। তাঁর কথায় সায় দিয়ে সুপ্রভাত আরও একটি উদাহরণ দিলেন। অর্জুন চক্রবর্তী, সৌরভ এবং সুপ্রভাতের একটি দৃশ্য ছিল, পাহাড়ের খাদের ধার দিয়ে দৌড়ে যেতে হবে। তাঁদের পাশে পাশে দৌড়চ্ছিলেন অঞ্জনও। সৌরভ বার বার সুপ্রভাতকে বলছিলেন, ‘‘ওঁকে খাদের ধার দিয়ে ছুটতে বারণ করো।’’ বয়সের কথা মাথায় রেখে তাঁকে নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছিল সৌরভের। সুপ্রভাতের কথায়, ‘‘আমি কিছু বলিনি অঞ্জনদাকে। কারণ আমি জানি, তিনি কারও কথা শুনবেন না। তিনি ছুটবেন।’’
সুপ্রভাত
আর তিনি ছুটেই গেলেন। গোটা শ্যুটিংয়ে তিনি ছুটলেন, তাঁর ভাবনা ছুটল, তাঁর লেখনীও ছুটল। এ ভাবেই ইতিবাচক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সবাই মিলে আনন্দ করে কাজ করলেন দার্জিলিংয়ে।
জুলাই মাসে তারই ফসল দেখতে পাবেন দর্শকরা। ‘হইচই’-তে ‘মার্ডার ইন দ্য হিলস’ মুক্তি পাবে।